রাজধানীর পাইকারি কাঁচাবাজারগুলোর মধ্যে অন্যতম কারওয়ান বাজার। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কাঁচা পণ্য এখানে খালাস হয়। তারপর ওঠে বিভিন্ন পাইকারের ঘরে। সেখান থেকে দরদাম করে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের খুচরা বিক্রেতারা সবজি সংগ্রহ করেন রাতে। আর সকালে বিক্রি করেন রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে।
পণ্য পরিবহন এবং লভ্যাংশসহ যে দামে কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতারা সবজি বিক্রি করে থাকেন, রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের খুচরা বিক্রেতারা তার চেয়ে অন্তত ২০ টাকা বেশি দামে সবজি বিক্রি করে থাকেন।
স্থানীয় খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, দামের এই পার্থক্যের পেছনে অনেক বড় একটি ‘হিডেন কস্ট’ আছে। যার ফলে কারওয়ান বাজারের সবজির দামের সঙ্গে রাজধানীর অন্য কোনো খুচরা বাজারের দামের মিল থাকে না।
সকালে রাজধানীর রায়ের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা মরিচ ১৪০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কচুর মোটা লতি ৭০ টাকা, চিকন লতি ৮০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, শসা ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লাউ ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার ফালি ৩০ টাকা, চাল কুমড়া ৪০ টাকা পিস হিসাবে এবং কাঁচা কলা ৪০ টাকা ও লেবু ২০ থেকে ২৫ টাকা হালি ধরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে রাতে কারওয়ান বাজারে দেখা গেছে, কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা, পেঁপে ১০-১৫ টাকা, কাকরোল ৩০ টাকা, করলা ৪৫ টাকা, চিচিঙ্গা ৩০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, টমেটো ৯৫ টাকা, গাজর ৮০, শসা ৬৫ টাকা, মূলা ৪০ টাকা, পেঁয়াজ ৪৪ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া ২৭-২৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লাউ আকার ভেদে ৩০-৪৫ টাকা, চাল কুমড়া আকার ভেদে ২৫-৩০ টাকা, কাঁচা কলা ১৫-২০ টাকা হালি দরে বিক্রি হচ্ছে।
দামের এই পার্থক্যের কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, ঢাকার বিভিন্ন স্থানীয় বাজারগুলোর খুচরা বিক্রেতাদের কারওয়ান বাজার থেকে কেনা পণ্যের সঙ্গে অন্তত ৯ রকমের খরচ যুক্ত হয়। যার ফলে স্থানীয় বাজারগুলোতে সবজির দাম প্রতি কেজিতে বেড়ে যায় অন্তত ২০ টাকা। আর এজন্যই নগরবাসীকে অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে সবজি কিনতে হয়।
সবজির বাজার দর প্রতিদিনই ওঠা-নামা করে বলে জানান কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতারা। তারা বলছেন, আমাদের এখানে বাজার দর ২-৫ টাকা প্রতিদিন ওঠা-নামা করে। কিন্তু খুচরা বিক্রেতারা ক্রেতাদের কাছে একই বাজারদর ধরে রাখার চেষ্টা করে।
সকালে রায়ের বাজারে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা হয় ক্রেতা আজমল ফুয়াদের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাজারে দেখা যায় কোনো সবজির দামই ৫০ টাকার নিচে না। দাম এত কেন জানতে চাইলে বিক্রেতারা বরাবরই নানা অজুহাত দেয়। তারা বলে, কারওয়ান বাজারে সবজির দাম বেশি, ট্রাক ভাড়া বেড়েছে, সবজির আমদানি কম। আপনার কাছ থেকে তো দাম জেনে আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা। প্রতি সবজিতেই যদি ২০-২৫ টাকা বেশি রাখে, এটা তো ডাকাতি ছাড়া আর কিছু নয়।
রায়ের বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা মো. আতিকুর রহমান বলেন, শুধু আমাদের বিরুদ্ধে দাম বেশি রাখার অভিযোগ করলেই তো হবে না। এর পেছনে যুক্তি সংগত কারণও আছে। কারওয়ান বাজারে যিনি সারা রাত ঘুরে ঘুরে সবজি কেনেন তাকে দিতে হয় ৮০০ টাকা, ওই বাজারে লেবার খরচ আছে ৬০০ টাকা, যে জায়গায় রাতে সবজি জমা রাখা হয় সে জায়গার ভাড়া ১৫০ টাকা, সকালে কারওয়ান বাজার থেকে দোকান পর্যন্ত সবজি আনতে গাড়ি ভাড়া ৪০০ টাকা, সারাদিনের পলিথিন খরচ ৩০০ টাকা, প্রতিদিন দোকান ভাড়া ৩৫০ টাকা, বিদ্যুৎ বিল ৫০ টাকা, পানি ও ঝাড়ুদারের খরচ ৭০ টাকা, দোকান কর্মচারীর বেতন ৫০০ টাকা দিতে হয়। তারপর তো নিজের লাভ।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন কারওয়ান বাজার থেকে দোকানে পণ্য এনে বিক্রির উপযোগী করতে অন্তত ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা খরচ আছে। এই খরচ তো আর ক্রেতারা দেখেন না। তারা শুধু দামের পার্থক্য করেই খালাস। আর বলে, আমরা শুধু বেশি দাম রাখি। ঢাকা শহরে ব্যবসা করা অনেক কঠিন।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী সেলিম হোসেন বলেন, আমরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সবজি আনি। সেখানের সবজির কেনা খরচ, পরিবহন খরচ এবং কারওয়ান বাজারের খরচ বাদে সামান্য কিছু লাভ করি। এই বাজারে আমাদের ব্যবসা হয় রাতে। কিন্তু এই সবজিই সকালে কি করে স্থানীয় বাজারে কেজি প্রতি ১৫-২০ টাকা বেড়ে যায় আমরা জানি না। আমাদের এখানে প্রতিদিনই বাজারদর ওঠা-নামা করে। কিন্তু এই দাম বৃদ্ধির সঙ্গে আমরা সম্পৃক্ত না।