২৯ মার্চ, ২০২৪, শুক্রবার

সব হারিয়ে পথে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা,পাশে নেই কেউ

Advertisement

মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপের দেড় বছরে সব হারিয়ে পথে বসেছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। ছোট-খাটো কারখানার মালিক, দোকানদার কিংবা সামান্য পুঁজি সম্বল করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখা মানুষগুলোর পায়ের তলায় এখন মাটি নেই। বড় উদ্যোক্তারা সরকারি প্রণোদনা পেলেও তাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই। সব হারানো মানুষগুলো পরিবার পরিজন নিয়ে এখন ভেসে বেড়াচ্ছেন হতাশার সাগরে।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলেছেন, তারা এখন করোনা মহামারীতে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব। ধস নেমেছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। নেই দরকারি পুঁজি। লকডাউনে পথে বসে গেছেন তারা। কেউ কেউ এনজিও বা দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে দোকান ভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন দিচ্ছেন। কেউ বা আবার চক্রবৃদ্ধি সুদের ক্রেডিট কার্ড ভাঙিয়ে কোনমতে বেঁচে আছেন। তাদের জন্য তহবিল থাকলেও সরকারি প্রণোদনার ঋণও মিলছে না। ব্যাংকগুলো পাত্তাই দিচ্ছেনা ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের। এ কারনে প্রধানমন্ত্রী-ঘোষিত প্রণোদনা বাস্তবায়নে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন কেটিভি প্রতিদিনকে বলেন, সারা দেশে দোকান মালিক সমিতির সদস্য মিলিয়ে অন্তত ৫৪ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা রয়েছেন। তাদের মধ্যে কমপক্ষে ২০ ভাগ ব্যবসায়ী সব হারিয়ে পথে বসেছেন। তারা ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। বাকিরা কোনমতে খড়কুটো আঁকড়ে টিকে আছেন।

হেলাল উদ্দিন বলেন, প্রায় ১০ হাজার সদস্যকে সমিতির পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা ও খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু এভাবে কাউকে বাঁচিয়ে রাখা কঠিন। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিক। আমরা আশা করছি তিনি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বাঁচাবেন। তবে বাস্তবায়ন পর্যায়ে নজরদারি বাড়াতে হবে।

হেলাল উদ্দিন বলেন, নূন্যতম সুদে বা সুদবিহীন ২০ থেকে ৪০ লাখ টাকার ঋণের ব্যবস্থা করলে এসব উদ্যোক্তা নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখবে।

জানা গেছে, করোনায় ব্যবসায়ীদের ক্ষতি পোষাতে সরকারের কাছে দ্বিতীয় দফায় আরেকটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের ভাষ্য হলো, করোনায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ব্যবসায়ী ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ৫০ শতাংশ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। কমেছে পণ্যের চাহিদা। এমন পরিস্থিতিতে ছোট ছোট ব্যবসায়ীকে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান জরুরি হয়ে পড়েছে।ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী

তবে প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ চেয়ে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বলছে, ৫৪ লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এখন পুঁজির সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছেন। এর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক খাতের অতিক্ষুদ্র প্রায় ৬০ লাখ উদ্যোক্তা লকডাউনে ঘরে বসে পুঁজি খেয়ে ফেলেছেন। তারা এখন নিঃস্ব। তবু অধিকাংশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের পাশে নেই। এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের দ্রুত ঋণ প্রদানের তাগিদ দিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন কেটিভি প্রতিদিনকে আরও বলেন, ব্যাংকগুলোর কাছে থেকে ৫৪ লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর অধিকাংশই ঋণ পাচ্ছেন না। এ ছাড়া অতিক্ষুদ্র অনানুষ্ঠানিক খাতের প্রায় ৬০ লাখ উদ্যোক্তা রয়েছেন। এদের ট্রেড লাইসেন্স, করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ও ভ্যাট নিবন্ধন কিংবা ব্যাংক হিসাব নেই। তাদের কেউ চায়ের দোকানদার, কেউ চটপটি বা বাদামবিক্রেতা। এসব অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তার সর্বোচ্চ পুঁজি ২০ হাজার টাকা। এই পুঁজি ৬৬ দিনের লকডাউনে বাসা ভাড়া আর ভরণ-পোষণে শেষ হয়ে গেছে। এখন তাদের হাতে কোনো পুঁজি নেই।

এসব অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে বাঁচাতে দ্রুত ঋণ দিতে হবে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্যমতে, করোনা মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত সারা দেশের ৫৩ লাখ ৭২ হাজার ৭১৬টি প্রতিষ্ঠানের ক্ষুদ্র পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী পথে বসে যাচ্ছেন। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের পছন্দ না করলে ঋণ দেয় না। ব্যাংকগুলো সব সময় বড় ব্যবসায়ীদের পছন্দ করে। তাদের শত শত কোটি টাকা দিলেও খুচরা ব্যবসায়ীদের কয়েক লাখ টাকা দিতে আগ্রহী নয় ব্যাংকগুলো। অথচ সারা দেশের ক্ষুদ্র পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের দোকানগুলোতে গড়ে ১৫ জন কর্মচারী রয়েছেন। সে হিসাবে ৫৩ লাখ ৭২ হাজার ৭১৬টি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন ৯৭ লাখ ১৩ হাজার ৯২৯ জন কর্মচারী।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement