২০ এপ্রিল, ২০২৪, শনিবার

গতকাল থেকেই বসন্তের আভাস বইমেলায়

Advertisement

আজ মঙ্গলবার পহেলা ফাল্গুন, বসন্তের সূচনা দিবস। কিন্তু বইমেলায় মাঘের শেষ দিন গতকালই লাগে বসন্তের ছোঁয়া। মৃদুমন্দ বাতাসে বাসন্তী সাজে ঘুরে বেড়িয়েছেন বহু তরুণ-তরুণী। তরুণীদের খোঁপায় শোভা পাচ্ছিল রঙিন ফুল। কারো কারো মাথায় ফুলের মুকুট। হাতে লাল গোলাপ।

মাওলা ব্রাদার্স ও অন্যপ্রকাশের সামনে কথা হয় একদল তরুণ-তরুণীর সঙ্গে। সবাই বাসন্তী রঙের শাড়ি আর হলুদ পাঞ্জাবি পরেছেন। তরুণদের একজন জানালেন, তরুণ এক লেখকের নতুন বের হওয়া প্রেমের উপন্যাসটিই তিনি বন্ধুকে উপহার দিয়েছেন। লাবিব আরমান নামের আরেক তরুণ জানালেন, তিনিও প্রেমের গল্প বা উপন্যাস খুঁজছেন। তবে তা নিজে পড়ার জন্যই কিনবেন।

মেলার আরেক দিকে দেখা মিলল দুই তরুণ চিকিৎসক বন্ধু দৃষ্টি ও অতসীর। ফাতেমাতুজ জান্নাত দৃষ্টি জানালেন, মেডিক্যাল কলেজে একটি অনুষ্ঠান শেষ করে তাঁরা মেলায় এসেছেন। বাসন্তী সাজে সেজেছেন মূলত সেই অনুষ্ঠানের জন্য। তবে বইমেলায় আসার পরিকল্পনাও ছিল। দৃষ্টি আরো বললেন, ‘আজ অতসী আমাকে বই কিনে দেবে, এই শর্তে মেলায় এসেছি।’

মাওলা ব্রাদার্সের একজন কর্মী জানালেন, গতকাল মেলায় এসেছে কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের ‘শ্রেষ্ঠ গল্প’। ‘আমি ও আমার লেখা’, ‘মেয়েটির কোনও অপরাধ ছিল না’, ‘গগনবাবুর জীবনচরিত’, ‘লালীদের কথা’, ‘গ্রাম মানুষের কথকতা’, ‘খেলোয়াড়’, ‘গাহে অচিন পাখি’, ‘রাজার চিঠি’, ‘জ্বীন’, ‘গাছপালার ভূমিকা’, ‘মমিন সাধুর তুকতাক’, ‘সোনাদাস বাউলের কথকতা’, ‘পাগল সাহেব’, ‘কিরমান ডাকাতের প্রথম ও দ্বিতীয় জীবন’, ‘রাজাবদমাস’, ‘লাশ পড়ছে’, ‘জীবনযাত্রা’ ইত্যাদি গল্প রয়েছে বইটিতে।

এ সময় মাওলা ব্রাদার্সে এসে দাঁড়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তাঁর হাতে ছিল নিজের সম্পাদিত ও অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত বই ‘জাতির উদ্দেশে ভাষণ : শেখ হাসিনা’। বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২০২১ সালের বইমেলায়। এ সময় মন্ত্রী জানান, তাঁর লেখক হয়ে ওঠার পেছনে পরিবারের বড় ভূমিকা রয়েছে। নিজের বড় ভাই ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মুহিত ভাইকে দেখেছি, সারা দিনের কাজকর্ম শেষ করে রাত ১১টায় লিখতে বসতেন। লিখতেন রাত ৪টা-৫টা পর্যন্ত। লেখক হয়ে ওঠা খুব সহজ কাজ নয়।’ অনন্যার প্যাভিলিয়নে পাওয়া গেল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনকে। জানালেন, অনন্যা থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর নতুন বই ‘মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ : শিলিগুড়ি থেকে সিমলা’। কালের কণ্ঠকে লেখক বললেন, ‘মেলায় অনেকেই আসে, আবার বই ছাড়া ফিরে যায়। সব মিলিয়ে বইমেলা প্রকাশকদের জন্য ভালো যাচ্ছে না। তরুণরা এখন বইয়ের চেয়ে মোবাইল ফোনে বেশি আগ্রহী। বইমেলায় তিন-চার কোটি টাকা ভর্তুকি দিলে শিল্পসাহিত্য সমৃদ্ধ হতো। আমি সব সময় বলেছি, শুধু উন্নয়নের জিডিপি বৃদ্ধি পেলে হবে না, শিল্প-সাহিত্যের জিডিপিও বাড়াতে হবে।’

বইমেলা ঘুরে দেখা গেছে, ইউপিএলে ভালো বিক্রি হচ্ছে আফসান চৌধুরীর ‘নারীদের একাত্তর’, প্রথমায় আনিসুল হকের ‘লেখক-সঙ্গ স্মৃতি’। কথা প্রকাশে মেলার শুরু থেকেই আছে ‘মহাভারতের দেশ’। গতকাল মেলার ত্রয়োদশ দিনে নতুন বই এসেছে ১০৫টি। এর মধ্যে স্টুডেন্ট ওয়েজ এনেছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের স্মৃতিচারণামূলক গ্রন্থ ‘জীবনখাতার কয়েক পাতা’, আগামী প্রকাশনী এনেছে মঞ্জু সরকারের ‘পথে নেমে পথ খোঁজা’, দাউদ হায়দারের ‘মিথ্যুকের সংহিতা’, অনিন্দ্য প্রকাশ এনেছে মোশতাক আহমেদের ‘নিতিনা’, বিভাস এনেছে মানিক চন্দ্র দের ‘ঘাটে ঘাটে খেয়াতরী’ (দ্বিতীয় খণ্ড) ও বিদেশ ভ্রমণের গল্প, ঐতিহ্য এনেছে অদিতি ফালগুনীর ‘ব্রাদার সিস্টার কাজী মাও সে তুং’, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স এনেছে সৈয়দ ইশতিয়াক রেজার ‘আপন আলাপ’, বিদ্যাপ্রকাশ এনেছে ধ্রুব এষের ‘আমাদের পরাবাস্তব টাইনের দিনরাত্রি’, জোনাকি প্রকাশনী এনেছে সেলিনা হোসেনের ‘জাতিসত্তাভিত্তিক উপন্যাস’।

আবদুল গাফফার চৌধুরীকে স্মরণ : গতকাল বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ : আবদুল গাফফার চৌধুরী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মফিদুল হক। আলোচনা করেন হারিসুল হক ও অপূর্ব শর্মা। অনুষ্ঠানে সভাপতি ছিলেন আবেদ খান।

সভাপতি আবেদ খান বলেন, ‘আবদুল গাফফার চৌধুরী ছিলেন বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতের মহিরুহদের একজন। যে আদর্শ ও সৃজনশীলতা নিয়ে তিনি সাংবাদিকতা করেছেন তা আমাদের জন্য আদর্শ হয়ে থাকবে।’

গতকাল লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন শাহনাজ মুন্নী, তসিকুল ইসলাম, দন্ত্যস রওশন ও মামুন রশীদ।

গতকাল বইমেলায় প্রথমবারের মতো অভিযান চালিয়েছে কপিরাইট দপ্তর। এ সময় তারা লিটলম্যাগ চত্বর ও কিছু প্যাভিলিয়ন পরিদর্শন করে। রেজিস্ট্রার অব কপিরাইট দাউদ মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বড় প্রকাশনীগুলোতে কপিরাইটহীন বইয়ের সংখ্যা বেশ কম। তবে লিটলম্যাগের ছোট ছোট স্টলে অন্য প্রকাশনীর বই ও কিছু ফটোকপি বই পাওয়া গেছে। ১০-১৫টি স্টলকে সতর্ক করেছি। সতর্ক না হলে তাদের স্টল বন্ধ করার সুপারিশ করব।’

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement