১৯ এপ্রিল, ২০২৪, শুক্রবার

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ

Advertisement

সূর্যমুখী ফুলের সমারোহে মেতে উঠেছে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার মাঠগুলো। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা আশা করছেন সূর্যমুখীর বাম্পার ফলনের। তুলনামূলক সূর্যমুখীর চাষ সহজলভ্য ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকেরা এতে আরো উৎসাহিত হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস।

সাধারণ কৃষকদের সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ করতে মিরসরাই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের ১২ একর জমিতে কৃষি সম্প্রসারণে অধিদফতরের সার ও বীজ প্রণোদনায় চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী ফুলের।

উপজেলার মধ্য কাটাছরা এলাকায় তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মো: ওমর শরীফের বাগানে দেখা গেছে, ফুটে থাকা হলুদ সূর্যমুখী ফুলের সমাহার। যেন এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা। হলুদ ফুলের মনমাতানো ঘ্রাণ আর মৌমাছিরা এক ফুল থেকে অন্য ফুলে। তাতে মুখরিত কৃষকের জমি।

এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য শুধু প্রকৃতিপ্রেমী নয়, যে কারো মন মাতাবে। তবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ নিছক বিনোদন নয়। ভোজ্যতেল উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্য চাহিদা মেটাতে এর চাষ করা হচ্ছে।

তরুণ উদ্যোক্তা মো: ওমর শরীফ বলেন, ‘আমি এক একর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। আমার সূর্যমুখী ফুলের জমি দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসছে। ইতোমধ্যেই প্রতিটি গাছে ফুল ধরেছে। আশা করি সূর্যমুখী চাষে সফলতা আসবে। কৃষি অফিসের সহযোগিতা নিয়ে আগামী বছর আরো জমি বাড়িয়ে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাকে দেখে এলাকার অনেক কৃষকরা সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী চাষে বেশি লাভের প্রত্যাশা অনেক বেশি। সূর্যমুখী চাষ করলে ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে আধা লিটার তৈল উৎপাদন সম্ভব। প্রতি বিঘা জমিতে সাত মণ থেকে ১০ মণ বীজ উৎপাদিত হয়। তেল উৎপাদন হবে প্রতি বিঘায় ১৪০ লিটার থেকে ২০০ লিটার পর্যন্ত। প্রতি লিটার তেলের সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ২৫০ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয় সর্বোচ্চ সাড়ে তিন হাজার টাকা। বর্তমানে বাজারে ভোজ্যতেলের আকাশছোঁয়া দাম হওয়ায় চাহিদা বেড়েছে সূর্যমুখী তেলের।

সূর্যমুখী ফুলের তেল অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। তাই ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের জন্য এই তেল অন্য তেলের চেয়ে বেশ উপকারী ও স্বাস্থ্যসম্মত।

সূর্যমুখী চাষী নঈম উদ্দিন জানান, কৃষি অফিসের প্রদর্শনী নিয়ে তিনি এ বছর পরিক্ষামূলক ৩৩ শতক জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেন। এ পর্যন্ত তার প্রায় ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে, বিক্রির সম্ভাব্য আশা করছেন ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। তবে আধুনিক মেশিন থাকলে হয়ত এই সূর্যমুখী ভাঙ্গিয়ে এর থেকে পাওয়া তেল নিজে ব্যবহার করতেন অথবা বাজারজাত করতেন।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর পুরো উপজেলায় ১২ একর জমিতে প্রায় ৩০ জন কৃষক সূর্যমুখীর চাষ করেছেন। যার মধ্যে কৃষি অফিস থেকে ২৫ জনকে প্রণোদনা ও পাঁচজনকে প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে।

তবে আগামী বছর থেকে এর সংখ্যা আরো বাড়বে বলেও জানা গেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় জানান, আধুনিক তেল ভাঙ্গানো মেশিন না থাকায় এ তেল একটু তেতো হয়, এ কারণে এই তেল ব্যবহারে এখানকার মানুষ অব্যস্ত নয়। মিরসরাইতে সূর্যমুখী বিক্রির ও তেল ভাঙ্গানোর সঠিক ব্যবস্থা না থাকায় এটি আবাদের ক্ষেত্রে কৃষকের আগ্রহ কম। উপজেলায় ভাঙ্গানোর ব্যবস্থা হলে আশা করি সূর্যমুখী চাষাবাদে কৃষকের আগ্রহ বাড়বে।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement