২৫ এপ্রিল, ২০২৪, বৃহস্পতিবার

চট্টগ্রামে টিসিবির পণ্য বিক্রি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ

Advertisement

চট্টগ্রামে টিসিবির পণ্য নিয়ে চলছে নয়ছয়। একদিকে ডিলাররা হতদরিদ্রদের কাছে পণ্য বিক্রি না করে অবৈধভাবে খোলাবাজারে বিক্রি করছে। অপরদিকে পণ্য বরাদ্দেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা মনিটরিং জোরদার করার পরও অসাধু ডিলারদের দমানো যাচ্ছে না। কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও হাটহাজারী উপজেলা থেকে বিপুল পরিমাণ টিসিবির পণ্য উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও উপজেলা প্রশাসন।

এদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ শাখায় টিসিবির পণ্য বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার দিনভর মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মিরাজুল ইসলাম উকিলের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এ নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন শুনানিতে উপস্থিত থাকা টিসিবির ডিলার ও মেসার্স লাকী স্টোরের স্বত্বাধিকারী তাপস চৌধুরী। বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে তিনি মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন।

জানা যায়, মঙ্গলবার চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে রাতের আঁধারে ট্রাকে করে টিসিবির পণ্য বিক্রিকালে ৪ জনকে গ্রেফতার করে উপজেলা প্রশাসন। এ ঘটনায় ডিলারসহ ৪ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। সাধনপুর ইউনিয়নের পূর্ব বৈলগাঁও এলাকায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খোন্দকার মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে টিসিবির ৬৪০ লিটার সয়াবিন তেল, ৩২০ কেজি চিনি ও ৬৫০ কেজি ডালসহ একটি ট্রাক জব্দ করা হয়।

এ সময় ট্রাকের ড্রাইভার ও ৩ হেলপারকে আটক করা হয়েছে। কিন্তু তাদের সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে সাধনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব নোভেল ভট্টাচার্য বাদী হয়ে মেসার্স আমান অ্যান্ড ব্রাদার্সের মালিক আমান উল্লাহ চৌধুরী, বিক্রয়কর্মী মারুফুল হক, রাহাদুল আলম রিয়াদ ও মো. রাসেলকে আসামি করে একটি মামলা করেন।

এছাড়া বুধবার উপজেলার বুড়িশ্চর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড খলিফাপাড়া ফকিরের দোকান এলাকার মনির উদ্দিনের দোকানে অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহীদুল আলমের নেতৃত্বে অভিযানে ১৪ কেজি ডাল ও ৬ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় টিসিবির পণ্য বিক্রির দায়ে মনিরকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

আগে টিসিবির পণ্য বরাদ্দ আঞ্চলিক কার্যালয় করলেও এখন করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ শাখায় টিসিবির বরাদ্দ নিয়ে নানা অনিয়ম চলছে বলে অনেক ডিলার অভিযোগ করেছেন। ওই শাখার কর্মচারী কমল কুমার আচার্য্য আর্থিক সুবিধা নিয়ে একটি সিন্ডিকেটকে দুই থেকে তিনগুণ টিসিবির পণ্য বরাদ্দ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

৩ আগস্ট জেলা প্রশাসনের এডিসি (সার্বিক) মু. মাহমুদ উল্লাহ মারুফ স্বাক্ষরিত বরাদ্দপত্রে দেখা যায়, সাধারণ ৪ নম্বর ওয়ার্ডে মেসার্স দিদার স্টোরকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার ৩১৪টি কার্ড। সাধারণ ৫ নম্বর ওয়ার্ডে মেসার্স এএস এন্টারপ্রাইজকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৯ হাজার ১২টি কার্ড। অন্যদিকে সাধারণ ১২ নম্বর ওয়ার্ডে মেসার্স আজিম এন্টারপ্রাইজকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৯৯৫টি কার্ড। একইভাবে ৩১ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডে মেসার্স ইউসুফ অ্যান্ড ব্রাদার্সকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৭২১টি কার্ড।

অনিয়মের অভিযোগে জেলা প্রশাসক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন টিসিবির ডিলার ও মেসার্স লাকী স্টোরের স্বত্বাধিকারী তাপস চৌধুরী। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ৬-৭ জন ডিলার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নানা অনিয়ম করে চলছে। ব্যবসা-বাণিজ্য শাখার কর্মচারী কমল আচার্য্য এ সিন্ডিকেটের ডিলারদের সঙ্গে অনিয়মে জড়িত। আর্থিক সুবিধা নিয়ে এসব সিন্ডিকেট ডিলারদের ৯ হাজার থেকে ১০ হাজার কার্ড দেওয়া হচ্ছে। আর যারা আর্থিক সুবিধা দেন না, তাদের সাড়ে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার কার্ড দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বৃহস্পতিবার সার্কিট হাউজে তদন্ত টিম এসেছিল। আমি ওই টিমের শুনানিতে বিস্তারিত জানিয়েছি।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ শাখায় কর্মচারী কমল কুমার আচার্য্য যুগান্তরকে বলেন, আমি কোনো ধরনের অনিয়মে জড়িত নই। বৃহস্পতিবার উপসচিব স্যার অভিযোগের ব্যাপারে শুনানি করেছেন। আমাকে সেখানে ডাকা হয়। আমি আমার বক্তব্য দিয়েছি। শুনানিতে অন্তত ৪০ জন টিসিবির ডিলার ও সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগের ভিত্তি আছে কিনা, তা তদন্ত রিপোর্টের পর জানা যাবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মিরাজুল ইসলাম উকিল যুগান্তরকে বলেন, একজন ডিলারের অভিযোগের ভিত্তিতে টিসিবির কিছু বিষয় নিয়ে তদন্ত করছি। বৃহস্পতিবার সবার বক্তব্য শুনেছি। এ মুহূর্তে তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে কিছু বলা সমীচীন হবে না।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement