২৯ মার্চ, ২০২৪, শুক্রবার

চালের দাম বস্তায় ৪০০ টাকা বাড়ার পর কমেছে মাত্র ১০০ টাকা

Advertisement

গত এক সপ্তাহে চালের দাম বস্তাপ্রতি কমেছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। আর কেজিপ্রতি কমেছে ২ থেকে ৩ টাকা। সম্প্রতি অস্থিতিশীল চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার চালের ওপর আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। এরপর জ্বালানি তেলের দামও এক দফা কমিয়েছে। এ কারণে চালের দাম কমিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

তবে যেভাবে চালের দাম বেড়েছে, সেভাবে দাম না কমিয়ে কেবল নামমাত্র চালের দাম কমিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে চাল কিনতে আসা ক্রেতারা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিলার ও আড়তদাররা মিলে বস্তাপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে, অথচ কমাচ্ছে ১০০ টাকা। অর্থাৎ কচ্ছপ গতিতে কমছে চালের দাম। আর এ সুযোগে ফায়দা লুটে নিচ্ছেন তারা। এ বিষয়ে সরকারের আরও বেশি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

(৭ সেপ্টেম্বর) বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, স্বর্ণা বা গুটি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজিতে। এই চাল এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ৫৪ থেকে ৫৭ টাকা কেজিতে। পাইজম চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬৮ টাকা কেজিতে।

এক সপ্তাহ আগে ৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া ২৮ নম্বর চাল বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৩ টাকা কেজিতে। আবার সাকী মিনিকেট নামের ২৮ নম্বর চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা কেজিতে। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬২ টাকা কেজিতে।

মাঝারি মানের মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা। আবার কোথাও কোথাও ৭৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে নাজিরশাইল চালের দাম এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে।

আরও পড়ুন: চালের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক মাত্র ৫%

মহাখালী ওয়ারল্যাসের খুচরা দোকানি হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ভালো মিনিকেট চাল বিক্রি করছি ৭৮ টাকায়। নাজিরশাইল বিক্রি করছি ৮০ টাকা। আর ২৮ নম্বর চাল বিক্রি করছি ৫৫ টাকা কেজিতে।

তিনি বলেন, ১০ থেকে ২০ টাকা দাম বাড়ার পর কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা কমেছে চালের দাম। এর মধ্যে মিনিকেট ও ২৮ নম্বর চালের দাম বেশি কমেছে। সরকার আড়ত ও মিল মালিকদের শক্ত করে ধরলেই আরও সস্তায় চাল পাওয়া যাবে।

খুচরা বাজারে দাম বেশি তাই আড়তে চাল কিনতে এসেছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, দুই ছেলেসহ আমাদের চার জনের পরিবার। খবরে শুনলাম চট্টগ্রামে কেজিতে ৬ টাকা কমেছে চালের দাম, তাই কিনতে আসলাম। কিন্তু কিনতে এসে দেখি বস্তায় কমেছে ১০০ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে ২ টাকা কমেছে। তিনি অভিযোগ করেন, দাম কমানোর নামে তামাশা করছে ব্যবসায়ীরা।

মেরুল বাড্ডার ডিআইটির এক বাসিন্দা জানান, তিনি সবসময় মাসের শুরুতে চাল কেনেন। আজ সাকী মিনিকেট চাল কিনেছেন ২৭৫০ টাকা বস্তায়। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ২৮৫০ টাকা।

২০ বছর ধরে রামপুরা বাজারে চালের ব্যবসা করে আসা অনিল কুমার গণমাধ্যমকে বলেন, চালের বস্তাপ্রতি ৪০০ টাকা বাড়ানোর পর ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে কমেছে। এটাকে কি চালের দাম কমা বলে? যদি ১০০ টাকা বেড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কমত তাহলে হতো।

তিনি বলেন, সরকার যদি ঠেলা না দিত তাহলে চালের দাম হুহু করে আরও বাড়ত। সরকার চাপ দেওয়ার কারণে কিছুটা কমেছে, নয়ত আরও উপরে উঠত।

২১০০ টাকার মোটা গুটি চালের বস্তা ২৫০০ টাকা হয়ে গিয়েছিল উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী বলেন, এখন মাঝারি মোটা চাল বিক্রি করছি ২৩০০ টাকা বস্তা। ১৮০০ টাকায় বিক্রি করা সবচেয়ে মোটা চাল এখন বিক্রি করছি ২২০০ টাকা বস্তা। এই চালের খুচরা মূল্য ৫০ টাকা। এই চাল কেনেন শুধু এতিমখানার হুজুররা।

অনিল বলেন, ২৭০০ টাকার ২৮ নম্বর চালের বস্তা এখন ১০০ টাকা কমে ২৬০০ টাকায় বিক্রি করছি। তবে খুচরা বিক্রি করি ৫৭ থেকে ৫৮ টাকা কেজিতে। আগে বিক্রি করতাম ৬০ টাকায়।

এ বিষয়ে মেসার্স মুরাদ রাইস ভান্ডার আড়তের ম্যানেজার জাকির হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারের চাপের কারণে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তায় চালের দাম কমেছে ১০০ টাকা।

তিনি বলেন, ৩৫২০ টাকা বস্তার রশিদ মিনিকেট চাল বিক্রি করছি ৩৪৪০ টাকা বস্তা। ৩৫৮০ টাকার বুশরা মিনিকেটের বস্তা বিক্রি করছি ৩৪৮০ টাকায়। ২৮ নম্বর (সাকী মিনিকেট) চাল ২৮০০ টাকা বস্তা বিক্রি করেছি, এখন ২৭০০ থেকে ২৬০০ টাকা বিক্রি করছি। একেবারে মোট চাল বিক্রি করছি ২২০০ টাকা। এই চাল ২৪০০ টাকা হয়েছিল। মোজাম্মেল মিনিকেট ৩৭০০-৩৮০০ টাকা বস্তা বিক্রি করেছি, এখন ৩৬০০ টাকা বিক্রি করছি।

জাকির হোসেন বলেন, সরকারের চাপে মোকামওয়ালারা চালের দাম কমিয়েছে। আমরা কম দামে পেয়ে কম দামে বিক্রি করছি।

বাংলাদেশ রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহ আলম বাবু গণমাধ্যমকে বলেন, চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত আরও আগে নেওয়া উচিত ছিল। তাহলে চালের দাম আরও কমত। কারণ ডলার ও ডিজেলের দাম বাড়ায় এখন আমদানিতে খরচও বেশি পড়ে।

চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত সপ্তাহে আমদানি শুল্ক মওকুফ করা হয়। পাশাপাশি রেগুলেটরি ডিউটি বা নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। এর আগে গত ২৪ জুন চালের ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছিল। এখন আরও ৫ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হলো।

নতুন আদেশ অনুযায়ী, চাল আমদানিতে এখন রেগুলেটরি ডিউটি বা নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৫ শতাংশ, আগাম আয়কর ৫ শতাংশ এবং অগ্রিম কর ৫ শতাংশসহ মোট ১৫.২৫ শতাংশ শুল্ক-কর দিতে হবে। এই আদেশ অটোমেটেড চাল ছাড়া সব ধরনের চাল আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement