১৯ এপ্রিল, ২০২৪, শুক্রবার

চালের বাজারে আমনের প্রভাব নেই

Advertisement

দেশের বিভিন্ন জেলায় আমন ধান কাটা শুরু হলেও চালের বাজারে এর প্রভাব নেই। বরং রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বাজারগুলোতে মাঝারি ও মোটা চালের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সাধারণত নতুন ধান ওঠার সময় চালের দাম কমে থাকে। এ বছর তা হচ্ছে না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও ধান-চালের ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও সারের দাম বেশি থাকায় ধানের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ফলে ধানের দামও গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রতি মণে প্রায় ২০০ টাকা বেশি। যে কারণে আমন ধান ওঠার মৌসুম হলেও চালের দাম না কমে বরং বেড়েছে। বাজারে আমদানি করা চালের কারণেও দাম কমছে না। অন্যদিকে, সরকার চাচ্ছে ধানের ভালো দামের মাধ্যমে কৃষকরা লাভবান হোক।

গতকাল বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি মাঝারি মানের চালের দাম ছিল ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা, যা গত সপ্তাহে ৫২ থেকে ৫৬ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আর প্রতি কেজি মোটা চাল গতকাল বিক্রি হয়েছে ৪৬ থেকে ৫২ টাকা কেজি দরে।

গতকাল কৃষিমন্ত্রী, কৃষি সচিব ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কুষ্টিয়াসহ কয়েকটি জেলায় আমন ধান কাটা উদ্বোধন করেছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিইএ) আশা করছে, এবার আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হবে। আমন মৌসুমের শুরুতে ডিইএ ১ কোটি ৬৩ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বেনজির আলম আশা করছেন, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হবে। এ বছর আমন মৌসুমে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের চাষ বেশি হয়েছে।
চলতি আমন মৌসুমে কুষ্টিয়ায় ৮৮ হাজার ৯১৯ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর কৃষকরা ভালো ফলন পেয়েছেন। ধানের দামও পাচ্ছেন ভালো। কিন্তু চালের বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই। এমনকি কৃষকরা আবাদে আগ্রহ হারাচ্ছেন। কারণ সার, সেচের জন্য জ্বালানি তেল ও শ্রমিক মজুরি বাবদ খরচ যতটা বেড়েছে, সে অনুযায়ী ধানের দাম বাড়েনি।

দিনাজপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকায় ধান কাটা শুরু হয়েছে। সামান্য পরিমাণে নতুন ধান বাজারে আসতেও শুরু করেছে। প্রতি মণ ধান ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে চালের দাম বেড়েছে। গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে প্রতি কেজি চালের দাম মান ও জাতভেদে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে।

নাটোর জেলায়ও চালের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার প্রতিনিধি। নাটোরে আমন ধানের ভালো ফলন হয়েছে। ধানের জাতভেদে বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ২০ মণ করে উৎপাদন হয়েছে। কৃষকরা ভালো দামও পাচ্ছেন। নাটোরে স্বর্ণা চালের দাম কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৭ টাকায়। কাটারিভোগের দামও কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে ৬৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. রেনজির আলম গণমাধ্যমকে বলেন, সারা দেশে আমনের ভালো ফলন হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি উৎপাদন হবে। কৃষকরাও ভালো দাম পাচ্ছেন। চালের দাম বেশি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উৎপাদন খরচের ওপর নির্ভর করে চালের দাম। তা ছাড়া কৃষকরা ভালো দাম পেলে আগামীতে চালের উৎপাদন আরও বাড়বে। এ জন্য সরকার চায় কৃষকরা যাতে লাভবান হন।

এ প্রসঙ্গে ঠাকুরগাঁওয়ের অটোরাইস মিল ব্যবসায়ী মাহমুদ হাসান রাজু গণমাধ্যমকে বলেন, ধানের দাম কিছুটা বেশি। তবে চালের দাম বৃদ্ধি একমাত্র ধানের দামের ওপর নির্ভরশীল নয়। অপর্যাপ্ত আমদানি, বড় বড় মিলমালিকদের বাজার নিয়ন্ত্রণের কারণেও ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ছে। তিনি বলেন, দেশে ছোট ধানকলগুলো (হাস্কিং মিল) বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সরকারকে এমন উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে ছোট ধানকলগুলো টিকে থাকতে পারে। তাহলে ধান ও চালের বাজার ঠিক থাকবে।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement