২৬ এপ্রিল, ২০২৪, শুক্রবার

ছোট পৃথিবীকে বড় করার পরিকল্পনায় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স

Advertisement

১২ জুলাই ২০১৬ একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব জনাব আলী ইমাম মজুমদার “আমাদের পৃথিবীটা ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে” শিরোনামে একটি কলাম লিখেছিলেন। বিভিন্ন জন বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিবেন হয়তো কলামের শিরোনাম দেখে। একজন এভিয়েশন কর্মী হিসেবে সাবেক সচিব মহোদয়ের শিরোনামের সাথে অনেকটাই মিলে যাচ্ছে আমাদের আকাশ পরিবহনের বর্তমান অবস্থা। সারাবিশ্বের আকাশ পরিবহন যেখানে দূর দিগন্ত খুঁজে নিচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের আকাশ পরিবহন যেন ততটাই স্থিমিত হয়ে আসছে।

লাল সবুজের পতাকাবেষ্টিত আমাদের বাংলাদেশ সৃষ্টির মাত্র ১৮ দিনের মাথায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৪ঠা জানুয়ারী জাতীয় বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স গঠন করেন। ৫০ বছর অতিক্রম করেছে আমাদের বিমান সংস্থা। বিশ্বের ৪২ টি দেশের সাথে বাংলাদেশের এয়ার সার্ভিস এগ্রিমেন্ট রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা আর অদম্য ইচ্ছায় বিমানের বহরে যোগ করেছেন ৪র্থ জেনারেশনের অনেকগুলো আধুনিক উড়োজাহাজ। বর্তমানে বিমানের বহরে রয়েছে ২১টি উড়োজাহাজ যার অধিকাংশই নতুন। গত শতাব্দীর নব্বই দশকেও ২০ টির অধিক দেশে ২৮ থেকে ২৯ গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালিত হতো। কিন্তু নানাবিধ সমস্যার কারনে ধীরে ধীরে আকাশপথ ছোট হয়ে আসছে।

বর্তমানে ১২টি দেশের ১৮টি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করছে জাতীয় বিমান সংস্থা। নতুন পরিকল্পনায দেখা যাচ্ছে নিকট ভবিষ্যতে আরো বেশ কিছু ফ্লাইট নিয়ে পরিকল্পনা করছে। বাংলাদেশ বিমানের প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে কিংবা তারও অনেক পরে প্রতিষ্ঠিত বিশ্বের বেশ কিছু বিমানসংস্থা সারাবিশ্বের আকাশপথে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে এমিরেটস, কাতার এয়ারওয়েজ, মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, থাই এয়ারওয়েজ প্রমুখ।

বিশ্বের প্রায় সব দেশে বাংলাদেশী প্রবাসীরা জীবিকার প্রয়োজনে বসবাস করছে। বাংলাদেশী যাত্রীদের বহন করে বিশ্বের অনেক এয়ারলাইন্স ব্যবসা পরিচালনা করছে। কিন্তু দূর্ভাগ্য আমাদের বাংলাদেশী এয়ারলাইন্স হিসেবে আমাদের যাত্রীদের আমরা নিজেরাই বহন করতে পারছি না। আন্তর্জাতিক রুটের মার্কেট শেয়ারের প্রায় ৭০ভাগই বিদেশী বিমানসংস্খার দখলে। সেখানে বাংলাদেশী বিমানসংস্থা হিসেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স অবশিষ্ট ৩০ ভাগ মার্কেট শেয়ার নিতে পারছে।

বেসরকারী বিমান পরিবহনেরও প্রায় দু’যুগ কেটে গেছে। অনেক উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রাইভেট এয়ারলাইন্সের সময়কাল। ৭ থেকে ৮টি বেসরকারী এয়ারলাইন্স বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্স আলোর দিশারী হয়ে পথ দেখাচ্ছিলো। হঠাৎ পা ফসকে যাওয়ার মতো অবস্থা! জিএমজি এয়ারলাইন্স, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, রিজেন্ট এয়ারওয়েজের মতো দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করে বিশ্ব আকাশ পরিবহনে এগিয়ে যাওয়ার যাওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পরিশেষে লাইনচ্যূতি হতে দেখেছি।

নয় বছর অতিক্রম করেছে নভোএয়ার। এখনো অনেকটা অভ্যন্তরীণ গন্তব্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অপারেশনে থাকা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স সর্বকনিষ্ট বেসরকারী বিমান সংস্থা। ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই ঢাকা থেকে যশোরে ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। দুই বছরের মধ্যেই ঢাকা থেকে কাঠমান্ডু রুটে ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রা শুরু করে। এরপর আর পিছনে ফিরে না তাকিয়ে দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলোর অতীত অভিজ্ঞতালব্ধ হয়ে এবং বিশ্ব এভিয়েশনের চলার পথে নানা অনুকূল প্রতিকূল সব পরিস্থিতিকে পর্যালোচনা করে ইউএস-বাংলা এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রায় ৮ বছরে ২টি ড্যাশ ৮-কিউ৪০০ এয়ারক্রাফট থেকে ছয়টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এয়ারক্রাফটসহ মোট ১৬ টি এয়ারক্রাফট নিয়ে বহরকে সমৃদ্ধ করেছে। ঢাকা থেকে যশোর রুটে ফ্লাইট পরিচালনার মধ্য দিয়ে শুরু করা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স অভ্যন্তরীণ সকল রুটে ফ্লাইট পরিচালনার পর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ২০১৬ সালের ১৫ মে এর পর ৯টি দেশের ১১ টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউএস-বাংলা।

ভবিষ্যত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে খুব শীঘ্রই ঢাকা থেকে কলম্বো, দিল্লী, জেদ্দা, রিয়াদ, মদিনা, দাম্মাম রুটে ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশীয় এয়ারলাইন্স হিসেবে ইউএস-বাংলা বিদেশী এয়ারলাইন্স এর সাথে প্রতিযোগিতা করে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ইউএস-বাংলার প্রতিযোগী এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে বিদেশী এয়ারলাইন্স এমিরেটস, কাতার এয়ারওয়েজ, ফ্লাই দুবাই, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স, স্পাইস জেট, ইনডিগো, ওমান এয়ার, এয়ার এশিয়া, মালিন্দোসহ বিশ্বের সব নামীদামী সব এয়ারলাইন্স।

বাংলাদেশের এভিয়েশন ইতিহাসে স্বল্পতম সময়ে ইউএস-বাংলাই একমাত্র এয়ারলাইন্স ৯টি দেশের ১১টি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। আগামী দু’বছরের মধ্যে ইউরোপের যেসব দেশগুলোতে বাংলাদেশী প্রবাসীরা বসবাস করছেন সেসব দেশে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে নিউইয়র্ক, টরোন্টো যাওয়ার পরিকল্পনাও আছে ইউএস-বাংলার।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় পনের মিলিয়ন বাংলাদেশীরা বসবাস করছে। এছাড়া গত প্রায় দশ বছর যাবত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেশীয় পর্যটকরা ভ্রমণ করছে। বাংলাদেশী এয়ারলাইন্সগুলোর কাঠামোগত দূর্বলতার জন্য বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলো বাংলাদেশের মার্কেট দখল করে আছে। ইউএস-বাংলা চাচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের সেবা ও আধুনিক উড়োজাহাজ ব্যবহার করে এদেশের যাত্রীদের প্রতিনিয়ত সেবা দিয়ে যাওয়ার। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হবে দেশ, উপকৃত হবে বাংলাদেশ এভিয়েশন মার্কেট। নতুন নতুন আকাশপথের দূয়ার উন্মোচন ঘটবে। কাজের ক্ষেত্র তৈরী হবে, বেকার সমস্যা দূরীকরনে বড় ভূমিকা রাখবে। দেশের জিডিপি-তে অন্যান্য খাতের মতো ভূমিকা রাখবে।

আরো দুটি নতুন এয়ারলাইন্সের অনুমতি প্রদানে বুঝা যাচ্ছে দেশের এভিয়েশন ই্ন্ডাস্ট্রির গতিশীলতা বজায় রাখার জন্য সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করার জন্য দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলোর পাশে সরকারের সহযোগিতার হাত অধিকতর প্রসারিত করা প্রয়োজন। যাতে করে দেশের এয়ারলাইন্সগুলো এগিয়ে যাওয়ার পরিকবল্পনা সাজাতে পারে।

পরিকল্পনা আর বাস্তবায়নের যে সোপান নিয়ে ইউএস-বাংলা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে দৃঢ়চিত্তে বলা যায় ছোট পৃথিবীকে বড় করার পরিকল্পনা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে বেসরকারী বিমান সংস্থাটি।

লেখক: মোঃ কামরুল ইসলাম মহাব্যবস্থাপক- ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement