১৮ এপ্রিল, ২০২৪, বৃহস্পতিবার

জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমবে বাড়বে মূল্যস্ফীতি

Advertisement

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) গত ছয় মাসের মধ্যে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস আরও এক দফা কমিয়েছে। বলা হচ্ছে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠানটি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্ভাবাস দেয়। ছয় মাসের মধ্যে তারা জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্ভাবাস কমিয়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ। এছাড়া চলতি অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৭ শতাংশ থাকবে বলে সংস্থাটি মনে করে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত সংস্থাটির ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক এপ্রিল ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব পূর্বাভাস দেওয়া হয়। এ উপলক্ষ্যে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এডিবির ঢাকা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং বক্তব্য দেন। প্রতিবেদনটির সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন সংস্থাটির সিনিয়র কান্ট্রি স্পেশালিস্ট সুন চান হোং। এ সময় এডিবি ঢাকা অফিসের বহিঃসম্পর্ক বিভাগের প্রধান গোবিন্দ বারিও উপস্থিত ছিলেন।

জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া এবং মূল্যস্ফীতি বাড়ার কারণ হিসাবে প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক মন্দার নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অনেকটা জোরালোভাবে আঘাত হেনেছে। এর প্রভাবে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। সঙ্গত কারণে কমেছে চাহিদাও। এতে পণ্য বিক্রি কমেছে। একই কারণে বিদেশের বাজারে পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। ফলে রপ্তানির অর্ডার এবং আয়ও কম। অপরদিকে প্রবাসীদের অর্থ পাঠানো কমে যাওয়ায় বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সব মিলিয়ে এসব কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।

চলতি অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৭ শতাংশ থাকবে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে। যদিও সরকার মনে করছে এবার প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৬ শতাংশ হবে। এছাড়া মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৭ শতাংশের মধ্যে সীমিত থাকবে। তবে বিশ্বব্যাংক মনে করছে চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জ্বালানি তেল, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়েছে। এ চাপ চলতি বছরজুড়ে অব্যাহত থাকবে।

তবে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য এডিবি আশাবাদের কথা জানিয়েছে। ওই অর্থবছরে দেশের অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়াবে। আগামী অর্থবছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি বেড়ে হতে পারে সাড়ে ৬ শতাংশ। অন্যদিকে গড় মূল্যস্ফীতি কমে ৬ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসতে পারে। তবে এ পরিস্থিতি নির্ভর করবে রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান যুদ্ধের ওপর। যুদ্ধ বন্ধ হলে অর্থনীতি আরও বেশি গতিশীল হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বর্তমানে নানা কারণে শিল্পের উৎপাদন খরচ বেশি। জ্বালানি খাতের সরবরাহে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। ঋণ সংকোচন নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। সুদের হার বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় ডলারের দাম বাড়ছে। এতে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এসব খাতে স্থিতিশীলতা না এলে বিনিয়োগ বাড়বে না। তবে সরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে বেসরকারি খাতকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং বলেছেন, বৈশ্বিক চলমান পরিস্থিতির মধ্যে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কম হলেও এটি বাংলাদেশের জন্য একেবারে মন্দ নয়। কারণ বিশ্বের অনেক দেশ এখনো প্রবৃদ্ধির হার পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। বড় অর্থনীতির দেশগুলোতে এখনো বড় ধাক্কা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রতিক প্রতিকূলতা ভালোভাবে মোকাবিলা করেছে। জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে বাংলাদেশ। এটি ভালো পদক্ষেপ। প্রতিটি সংস্কার কাজেরই স্বল্পকালীন কষ্ট থাকে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে সুফল পাওয়া যায়। বাংলাদেশ দীর্ঘ মেয়াদে এর সুফল পাবে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। এতে বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতেও। এর প্রভাবে বাংলাদেশের সব খাতেই অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে।

তার মতে, সরকার অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক প্রতিকূলতার মধ্যেও তুলনামূলকভাবে ভালো ব্যবস্থাপনা করেছে। একে ধরে রাখতে হবে। পাশাপাশি সব খাতেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে। এটি এই কঠিন সময়েও প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। তিনি আরও বলেন, দেশে জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব কমাতে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। বাড়াতে হবে দেশীয় নবায়নযোগ্য বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement