২০ এপ্রিল, ২০২৪, শনিবার

গভীর উৎকণ্ঠায় ব্যবসায়ীরা : পণ্যবাহী গাড়িভাড়া বৃদ্ধি, ব্যয় বাড়বে জেনারেটরেও

Advertisement

ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত যানবাহনের ভাড়া বাড়ানোর আশ্বাসের প্রেক্ষিতে স্থগিত করা হয়েছে টানা তিনদিন ধরে চলা পণ্য পরিবহন ধর্মঘট। তবে পণ্য পরিবহনের ভাড়া বেড়ে গেলে পুরো আমদানি-রপ্তানির সাপ্লাই চেইনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশের শিল্পোদ্যোক্তারা।

এছাড়া নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করে লিড টাইম ঠিক রাখতে ডিজেলচালিত জেনারেটর ব্যবহার করেন শিল্প মালিকরা। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে জেনারেটর ব্যবহারের খরচও বাড়বে, ফলে প্রতিটি পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধি ও চাপে থাকবেন রপ্তানিমুখী শিল্প মালিক ও লিংকেজ চেইনের শিল্প উদ্যোক্তারা।

ব্যবসায়ীদের দাবি, করোনার মহামারীতে গত দুটি বছর দেশের শিল্প কারখানার যে ক্ষতি হয়েছে তার ঘা এখনো পুরোপুরি শুকায়নি। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে যখন বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় নিজেদের বিলিয়ে দিচ্ছেন দেশের শিল্পোদ্যোক্তারা, ঠিক তখনই নতুন করে বিষফোঁড়া হয়ে আবির্ভাব ঘটেছে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত সিদ্ধান্তে দেশের আমদানি রপ্তানি খাতে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তা অনেকটা করোনার আরেক ঢেউয়ের মতই হবে। তাদের দাবি, ঠিক এ মুহূর্তেই জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হতে পারে না। এটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। ব্যবসায়ী নেতারা জ্বালানি তেলের মূল্য কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে রাখার দাবি জানান ।

চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ও ফ্লাটবেড ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম সাংবাদিকদের জানান, বর্তমানে চট্টগ্রাম-গাজীপুর রুটে প্রতি ট্রিপে ভাড়া ২৪ থেকে ২৫ হাজার টাকা। তবে ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে সেই ভাড়া প্রায় ৩০ শতাংশ বাড়ানোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। একইভাবে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অফডকে চলাচলকারী সব পণ্যবাহী যানবাহনেরও ভাড়া বাড়বে।

এদিকে পণ্যবাহী গাড়ির ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ব্যবসায়ীরা এমনিতেই ক্ষতির মধ্যে আছেন। প্রতিযোগিতার বাজারে কম মূল্যে অর্ডার পাচ্ছেন। আবার এদিকে দেশের প্রতিটি খাতে খরচ বেড়েছে। এখন পণ্য পরিবহনের খরচ আরো বাড়লে দেশের আমদানি-রপ্তানিতে খুব নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। শুধু তাই নয় অভ্যন্তরীণ রুটের সব পণ্য পরিহনের ভাড়া বাড়বে। ফলে গ্রাহক পর্যায়ে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। অর্থাৎ সব বোঝা ভোক্তা পর্যায়ে গিয়েই পড়বে।

এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি) সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী সাংবাদিকদের বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি কোনোভাবেই সময়োপযোগী হয়নি। কারণ আমরা এখনো কোভিড পরিস্থিতি থেকে পুরোপুরি বের হতে পারিনি। এই মুহূর্তে আমাদের শিল্পখাত কেবল ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার প্রণোদনা দিয়ে আমরা শিল্প কারখানাগুলো চালু করে পণ্য উৎপাদনে গেছি। এরপর রপ্তানি করে ঘুরে দাঁড়াবো।

ঠিক যখনই শিল্পখাত এমন ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য আলোর মুখ দেখা শুরু করলো, ঠিক তখনই কেন তেলের দাম বাড়াতে হবে? ঠিক এ মুহূর্তে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ালে কাঁচামাল আমদানি খরচ বাড়বে, কারখানার ডিজেল চালিত যন্ত্রপাতি ব্যবহারে খরচ বাড়বে এবং রপ্তানি পণ্য পরিবহনেও খরচ বাড়বে। অর্থাৎ আমদানি-রপ্তানিসহ পণ্য উৎপাদনের প্রতিটি ধাপেই খরচ বাড়বে। তাহলে ঠিক এই মুহূর্তে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি কোনোভাবেই সময়োপযোগী হয়নি। তিনি আরো বলেন, সারাবিশ্ব যখন করোনার ক্ষতি সামলাতে প্রতিযোগিতার বাজার আরো প্রতিযোগিতাপূর্ণ করে ফেলছে, যেখানে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ও প্রতিযোগী দেশের সাথে প্রতিযোগিতা করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার নীরব যুদ্ধ চলছে ঠিক তখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোটা ঠিক হয়নি। এর নেগেটিভ ইমপেক্ট পড়বে দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে। শুধু শিল্প কারখানা নয়, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরণের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়বে। যা এখনই কাম্য ছিল না। তেলের দাম আরো কিছু সময় পর বাড়ালে যৌক্তিকভাবে দেখা যেত।

বিজিএমইএ এর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, জ্বালানি তেলের যে ১৫ টাকা হারে বাড়ানো হয়েছে তাতে পণ্য পরিবহন খরচ খুব বেশি বাড়ার কথা না। সমস্যা হলো আমাদের দেশে কোন কিছুর দাম এক টাকা বাড়ালে বাস্তবে সেটি তিন টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ তিনগুণ বেড়ে যায়। যার ফলে দাম বাড়ানোটা সবার কাছে বোঝা হয়ে যায়। আমাদের দেশে এমনিতেই পণ্য পরিবহন খরচ বেশি। আগে যেখানে ঢাকা-চট্টগ্রামে ট্রান্সপোর্ট খরচ ছিল ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা, সেটি এখন ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। এরপর আবারোও যদি ট্রান্সপোর্ট খরচ বাড়ানো হয়, তবে পুরো পণ্য পরিবহন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অর্থাৎ পণ্য পরিবহন খরচ বাড়ানো অযৌক্তিক দাবি কোনভাবে গ্রহণযোগ্য ও বাস্তব সম্মত হবে না।

বিকেএমইএ  এর নির্বাহী সভাপতি  মোহাম্মদ হাতেম বলেন, পণ্য পরিবহনে ভাড়া বাড়ালে শিল্প কারখানা চালানোটাই দুষ্কর হয়ে পড়বে। এমনিতেই আমাদের দেশে পণ্য পরিবহন খরচ বেশি। এরমধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে পণ্য পরিবহন খরচ বাড়ানো হবে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’।

দেশের গার্মেন্টস এক্সেসরিজ খাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান কসমো গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক নাঈম হায়দার বলেন, সাপ্লাই চেইন এবং লিড টাইম ঠিক রাখতে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের সংশ্লিষ্ট কারখানা মালিকদের ডিজেলচালিত জেনারেটর ব্যবহার করতে হয়। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে জেনারেটর ব্যবহারের খরচ বেশ বাড়বে। যার নেতিবাচক প্রভাব এই খাতের উপর পড়বে।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement