২৪ এপ্রিল, ২০২৪, বুধবার

ডিপোর সামনে পণ্যবাহী কনটেইনারের স্তূপ, সংশয়ে রপ্তানিকারকেরা

Advertisement

রপ্তানি বাড়ছে। সে অনুযায়ী ডিপোগুলোর সক্ষমতা না বাড়ায় জট তৈরি হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের এক কিলোমিটার দূরে বেসরকারি কনটেইনার ডিপো এছাক ব্রাদার্স লিমিটেড। ডিপোর ভেতরে রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনারের স্তূপ বাড়ছে। ভেতরে জায়গা না থাকায় সারা দেশ থেকে রপ্তানি পণ্য নিয়ে আসা ১ হাজার ৩০০ গাড়ি এই ডিপোর সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিদিন কয়েক শ কনটেইনার ডিপো থেকে জাহাজে তুলে দেওয়া হলেও কনটেইনারের সংখ্যা কমছে না।

এছাক ব্রাদার্সের মতো চালু থাকা বেসরকারি ১৯টি ডিপোর বেশির ভাগেরই অবস্থা এখন এ রকম। প্রতিবছর ঈদের আগে রপ্তানির চাপ বাড়ে। তাতে রপ্তানি পণ্যবোঝাই কনটেইনারের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের পর ওই ডিপোর কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এবার চাপ আরও বেড়েছে। জট বাড়তে থাকায় সময়মতো রপ্তানি পণ্য জাহাজে তুলে দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রপ্তানিকারকেরা।

কনটেইনার ডিপো সমিতির হিসাব অনুযায়ী, গতকাল বুধবার ১৯টি ডিপোতে বন্দর দিয়ে জাহাজে তুলে দেওয়ার অপেক্ষায় ছিল পণ্যবোঝাই ১৪ হাজার কনটেইনার। স্বাভাবিক সময়ে ডিপোর ভেতরে কম–বেশি রপ্তানি পণ্যবাহী ছয় হাজার কনটেইনার থাকে। অর্থাৎ স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এখন কনটেইনারের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি রয়েছে ডিপোগুলোতে। এর বাইরে ডিপোগুলোর সামনে রপ্তানিমুখী পণ্য নিয়ে প্রায় ছয় হাজার কাভার্ড ভ্যান অপেক্ষা করছে।

পণ্য রপ্তানির প্রক্রিয়া অনুযায়ী, রপ্তানিমুখী কারখানা থেকে পণ্য প্রথমে কাভার্ড ভ্যানে করে বেসরকারি ডিপোতে পাঠানো হয়। কাভার্ড ভ্যান
থেকে রপ্তানি পণ্য নামিয়ে ডিপোর ছাউনিতে রাখা হয়। এরপর কনটেইনারে বোঝাই করে বন্দরে নিয়ে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়।

কেন এই জট

কনটেইনারে পণ্য রপ্তানির ৯৮ শতাংশ পরিবহন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। বন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া পণ্যের ৯০ শতাংশ বেসরকারি ডিপোতে কনটেইনারে বোঝাই করে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। বাকি ১০ শতাংশ ঢাকার কমলাপুর ডিপো বা আইসিডি এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) থেকে কনটেইনারে ভরে সরাসরি বন্দরে পাঠানো হয়। রপ্তানি যত বাড়ছে, চাপও বাড়ছে ডিপোর ওপর। গত তিন বছরে নতুন ডিপো চালু হয়নি। তাতে দিন দিন চাপ বাড়ছে।

রপ্তানি পণ্যের সিংহভাগই পোশাক খাতের। ঈদ উপলক্ষে পোশাক খাতের রপ্তানিমুখী কারখানাগুলো এক সপ্তাহের বেশি বন্ধ থাকছে। ছুটির সময় যেসব পণ্য রপ্তানি হওয়ার কথা, সেগুলো ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের ডিপোতে পাঠাতে শুরু করেছে রপ্তানিকারকেরা। তাতেই এই পণ্যজট বাড়তে শুরু করেছে।

জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানি যেভাবে বাড়ছে, তাতে বেসরকারি ডিপোগুলোর সক্ষমতা বাড়েনি। এ কারণেই ঈদের আগে রপ্তানি বাড়লে জট তৈরি হয়। অনেক ডিপোর সামনে ১০–১৫ দিন ধরে রপ্তানি পণ্য নিয়ে কাভার্ড ভ্যান খালাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। রপ্তানি পণ্য সময়মতো জাহাজে তুলে দেওয়া নিয়ে সংশয়ে আছি।’

জটের প্রভাব

কারখানা থেকে কাভার্ড ভ্যানে ডিপোতে এনে রপ্তানি পণ্য বিদেশি ক্রেতাদের প্রতিনিধি ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারদের হাতে তুলে দেন রপ্তানিকারকেরা। ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাররা সেই পণ্য নির্ধারিত কনটেইনারে ভরে ডিপো থেকে বন্দরে নিয়ে জাহাজে তুলে দেন। জটের কারণে এসব কার্যক্রম এখন ব্যাহত হচ্ছে।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি খায়রুল আলম বলেন, ডিপোতে এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে ঈদের আগে অনেক পণ্যই রপ্তানি সম্ভব হবে না। তাই ঈদের ছুটিতে শ্রমিকসংকট যাতে না হয়, সেদিকে জোর দেওয়া উচিত।

কী করছে ডিপো পরিচালনাকারীরা

ডিপো মালিক সমিতি জানিয়েছে, প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি কনটেইনার পণ্য ডিপো থেকে বন্দরে নিয়ে জাহাজে তুলে দিচ্ছে তারা। এরপরও রপ্তানির চাপ বাড়ায় সংখ্যা কমছে না। জটও কমছে না। ঈদের পর যেসব চালান রপ্তানি হবে, সেগুলোও এখন পাঠিয়ে দিচ্ছেন রপ্তানিকারকেরা। এটা বাড়তি চাপ তৈরি করছে।

ডিপো মালিক সমিতির মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, প্রতিটি ডিপো এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনা করছে। তবে একসঙ্গে বেশি পরিমাণ রপ্তানি পণ্য আসায় চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement