২৯ মার্চ, ২০২৪, শুক্রবার

দাম বাড়ায় সবজি চাষিরা খুশি, দুশ্চিন্তা ক্রেতাদের

Advertisement

এক বিঘা জমিতে পটলের চাষ করেছেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ভাতুড়িয়া গ্রামের কৃষক রফিউদ্দিন বিশ্বাস। তিনি ১৮০০-১৯০০ টাকা মণ দরে পটল পাইকারি হাটে বিক্রি করছেন। যা কেজি প্রতি ৪৫-৪৮ টাকা দরে বিক্রি হয়। আর বাজারে এই পটল বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৫ টাকা কেজি দরে। তাই এবার লাভের আশা করছেন তিনি।

হরিণাকুন্ড উপজেলার কাপাসাটিয়া ইউনিয়নের গুড়পাড়া গ্রামের কৃষক সেলিম মিয়া এবার বেগুনের চাষ করেছেন দেড় বিঘা জমিতে। তিনি জানান, শীতের সিজনে বেগুন চাষে খরচ কম লাগলেও এই সিজনে বেগুনের ব্যাপক খরচ হয়। এক কেজি বেগুন চাষে সার, কীটনাশক, পানি দিয়ে কমপক্ষে ১০-১২ টাকা খরচ হয়ে যায়। তারপরও বর্তমানে বাজার দর ভালো। কাচা সবজি হওয়ায় একেক দিনে একেক রকম দামে পাইকারি বিক্রি হয়। ১ কেজি বেগুন পাইকারিতে বিক্রি হয় ১৭-২০ টাকা দরে । কিন্তু খুচরা বিক্রি যারা করে তারাই বেশিরভাগ লাভ খেয়ে ফেলে।

আরেক কৃষক রবজেল মিয়া বলেন, আমি কয়েক রকমের সবজি চাষ করি। তার মধ্যে শিম, পটল, বেগুন আছে। প্রথম দিকের শিমে ভালো লাভ হয়। অর্ধবিঘা জমিতে ৮ হাজার টাকা খরচে প্রায় ৩৫ হাজার টাকার শিম বিক্রি করি। বেগুনেও ছিল ভালো লাভ। তবে তিনি জানান মূল বাজার নিয়ন্ত্রণ করে বাজার সিন্ডিকেট। কৃষকের লাভের চেয়ে ওই বাজার সিন্ডিকেটই বেশি লাভ করে বের হয়ে যায়।

জেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, শীতকালীন সবজি ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকেরা গ্রীষ্মকালীন সবজির চাষ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বাজারে করলা, পটল, বেগুন, টমেটো, ডাটার শাকসহ বেশ কয়েটি সবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে। এই সব সবজির উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে চাহিদা বেশি এবং দামটাও বেশি। এছাড়াও বরবটি, ঢেড়সসহ বেশ কয়েটি সবজি এখনো উৎপাদন শুরু হয়নি।

ঝিনাইদহ হাটখোলার খুচরা বিক্রেতা বাশার মিয়া জানান, পটল ৬০ টাকা, আলু ১৮ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা, কাঁচাঝাল ৮০ টাকা, লালশাক ১ আটি ৫-৮ টাকা, সজিনা রকম ভেদে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা, উচ্ছে (করলা) ১০০ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ২৫-২০ টাকা, লাউ ৩০-৩৫ টাকা, ডাটা এক আটি ১৫-২০ টাকা, ঢেড়স ৬০ টাকা, শশা ৪০ টাকা, গাজর ৩০, পেঁয়াজ ৩৫-৪০ টাকা ও রসুন ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় হচ্ছে।

একই বাজারের এক পাইকারি বিক্রেতা নাম না জাননোর শর্তে জানান, লাউ রকম ভেদে ১৮-২২ টাকা, টমেটো ১৫-২০ টাকা, বেগুন ৩০-৩৫ টাকা, শশা ২০-২৫ টাকা, পটল ৫০ টাকা, শিম ৩০ টাকা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গাজরের দাম ১৪০ টাকা কেজি, পাকা টমেটো ১২০ টাকা, বেগুন ৭০-৮০, কাকরোলের কেজি ৫০-৬০, চুর লতি, ঝিঙে, চিচিঙ্গা ৬০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি আড়ৎদার মইনুল হোসেন বলেন, তেলের দাম হঠাৎ বাড়ার কারণেই সবজির দাম বেড়েছে। এখন সবজি পরিবহনে বেপারীদের প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া দিতে হচ্ছে। যেখানে সবজির দাম ধীরে ধীরে কমার কথা, সেখানে গাড়ি ভাড়ার কারণে সবজির দাম বেড়েছে।

শাক-সবজির দাম কেমন এমন প্রশ্নের জবাবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী গোলাম রব্বানী নামের এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মূল কৃষক একবার লাভ করে, এরপর পাইকারি বিক্রেতারা একবার লাভ করে, তারপর লাভ করে খুচরা বিক্রেতারা। আরে ভাই কোথায় যাব বলতে পারেন। পরিবারে দুই মুরব্বিসহ ৭ জন আমরা।

বাজার করতে আসা রিকশাচালক রতন চন্দ্র জানান, এখন ইঞ্জিনচালিত রিকশা অনেকেই চালায়। আগের সেই ইনকাম আর নেই। দিন শেষে মালিককে দিয়ে সর্বোচ্চ ২০০-২৫০ টাকা থাকে। তাতে কিচ্ছু হয় না। পাইকারি বিক্রেতাদের থেকে খুচরা বিক্রেতারা কমপক্ষে ৫-১৫ টাকা লাভে বেচা বিক্রি করে। কেউ দেখে না। গরিবদের কথা বাদ দেন, মধ্যবিত্তরাও চরম বিপাকে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় সারাবছর কম-বেশি সবজি চাষ হয়ে থাকে। এ বছর ৩ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে, ৩ লাখ ৫ হাজার ৯৭০ মেট্রিক টন সবজির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি সবজি উৎপাদন হতে পারে।

জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম জানান, আসন্ন রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়েছেন। সে মোতাবেক জরুরি সভা করে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ অন্যদের নিয়ে তালিকা করা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই অভিযানে নামবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ অন্যরা।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement