দুবাইতে গত কিছুদিন ধরে শুধু ভিলা নয়, অ্যাপার্টমেন্ট সহ সবরকম বাড়ির ভাড়াই বেড়ে গেছে। এই বৃদ্ধির পরিমাণ এতোই বেশি যে কিছু লোককে বাধ্য হয়ে দুবাই ছাড়তে হয়েছে। ওয়াকার আনসারি তাদেরই একজন। তিনি সপরিবারে দক্ষিণ দুবাইয়ে এক বেডরুমের একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন। তার বার্ষিক ভাড়া ছিল ৯ হাজার ৫০০ ডলার। কিন্তু গত মাসে তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হবার সময় বাড়িওয়ালা বললেন, তিনি ভাড়া আরো ৩ হাজার ডলার বাড়াতে চান।
ওয়াকার তখন ওই একই এলাকায় অন্য একটি অ্যাপার্টমেন্টে খোঁজ করেছিলেন। কিন্তু তিনি দেখলেন সেগুলোর ভাড়া আগের চাইতে ৪০ শতাংশেরও বেশি বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘আমি ১০-১৫ শতাংশ বেশি ভাড়া দিতে রাজি ছিলাম, কিন্তু তাতেও আমি অন্য কোন এলাকায় একটি ভালো অ্যাপার্টমেন্ট খুঁজে পাইনি। তখন আমার সামনে একমাত্র বিকল্প ছিল দুবাই ছেড়ে শারজাহ চলে যাই।’
শারজাহ দুবাইয়ের পাশেই আরেকটি আমিরাত – যেখানে বাড়ি ভাড়া অপেক্ষাকৃত কম। বেটারহোমস নামে একটি রিয়েল এস্টেট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিচার্ড ওয়েইন্ড বলছেন, দুবাইয়ে বর্তমানে বাড়ির সংখ্যার তুলনায় চাহিদা অনেক বেশি বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘দুবাইতে এখন অনেক বেশি লোক বসবাস করতে আসছে এবং তারা এমন সব এলাকায় থাকতে চায় যেখানে তত বেশি বাড়ি খালি নেই। বাজারে একটা সরবরাহের অভাব আছে এবং এ কারণে ভাড়া বেড়ে যাচ্ছে।’
সংযুক্ত আরব আমিরাত এমন একটি দেশ যেখানকার প্রায় এক কোটি বাসিন্দার ৯০ শতাংশই বিদেশী নাগরিক।
সম্প্রতি দুবাইতে শুধু ভাড়া নয়, বাড়ি কেনার দামও বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর অ্যাপার্টমেন্টের দাম বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। তবে অনেকে বলছেন, এখানে বাড়ি ভাড়া এবং বাড়ির দাম দুটোই বেড়ে যাবার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে রাশিয়ান অর্থ।
গত বছর ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই এটা ঘটছে, বলছেন দুবাই-ভিত্তিক সাভিল্স মিডল ইস্ট-এর সহযোগী পরিচালক কেটি বার্নেল। ধনী রুশদের – বিশেষত অলিগার্ক, কোটিপতি এবং নতুন ব্যবসায়িক উদ্যোগ-প্রতিষ্ঠাতাদের জন্য নতুন নিরাপদ আবাসভূমি হয়ে উঠেছে দুবাই।
নতুন চাকরির সুযোগের কারণে অনেক তরুণ রুশও এই বিলাসবহুল শহরটিতে চলে এসেছেন। বেশ কিছু বহুজাতিক কোম্পানিও তাদের স্টাফদের রাশিয়া থেকে দুবাইতে নিয়ে এসেছে।
গত বছর দুবাইয়ের রিয়েল এস্টেট খাতে সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী ছিল রুশরা।
মিজ বারনেল বলছেন, ‘রুশরা কোথায় বাস করতে পারে বা বাড়ি কিনতে পারে এর ওপর এমন অনেক রকম বিধিনিষেধ আছে। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাতে এরকম কিছুই নেই। এখানে তারা ব্যবসা এবং আর্থিক কার্যক্রম চালাতে পারছে।’
এসব কারণে দুবাইয়ের প্রপার্টি মার্কেটে যে দামই হাঁকা হচ্ছে তা তারা দিতে আপত্তি করছে না বলে জানান তিনি।