২৬ এপ্রিল, ২০২৪, শুক্রবার

নারিকেলের ছোবড়ায় বছরে অর্ধশত কোটি টাকার কোকো ফাইবার ও ডাস্ট উৎপাদন

Advertisement

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় ১৫ বছর আগেও নারিকেলের ছোবড়া ফেলে দেওয়া হতো। অনেকে এ ছোবড়া শুধু জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতেন। সেই দিন বদলে গেছে। এখন ছোবড়ার পাশাপাশি এর গুঁড়ার কদর বেড়েছে। এমনটিই জানালেন রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ বাজারের বটতলী এলাকার ছোবড়া ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন বাচ্চু।

শৌখিন পণ্য তৈরির অন্যতম উপাদান কোকো ফাইবার (আঁশ) এবং মাটিবিহীন ছাদবাগান, নার্সারির গাছ রোপণ, পশু ও পোলট্রি খামার তৈরির অন্যতম উপাদান কোকো ডাস্ট (গুঁড়া)। কোকো ফাইবার ও কোকো ডাস্ট উৎপাদনের প্রধান বাজার দেশের অন্যতম নারিকেল উৎপাদনকারী জেলা লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায়।

রায়পুরসহ পুরো জেলায় এখন বছরে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার কোকো ফাইবার ও ডাস্ট উৎপাদন হয়। বর্তমানে এ দুটি পণ্যের চাহিদা এত বেড়েছে যে কারখানাগুলোতে পণ্য উৎপাদন করার আগেই সেগুলো আগাম বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, জেলায় দুই হাজার ৭৩৫ হেক্টর জমিতে নারিকেল বাগান রয়েছে। বাগান ও বাড়ি থেকে বছরে প্রায় সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় কোটি শুকনো নারিকেল আহরণ করা হয়। প্রসেসিং কারখানাগুলোয় শুকনো নারিকেলের ছোবড়া থেকে কোকো ফাইবার ও কোকো ডাস্ট তৈরি হয্বেল

এরই মধ্যে ছোবড়া প্রসেসিং কারখানা গড়ে উঠেছে রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ, সদর উপজেলার দালাল বাজার, জকসিন, মান্দারী, চন্দ্রগঞ্জ, রামগঞ্জ উপজেলার পানপাড়া, মীরগঞ্জ, সোনাপুর, কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট, রামগতির আলেকজান্ডার ও জমিদারহাটে। এসব এলাকায় ছোট-বড় ৩৫টি কারখানা রয়েছে। প্রতিটি কারখানায় নারী-পুরুষ মিলে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক কাজ করেন।

হায়দরগঞ্জ এলাকার ছোবড়া কারখানার শ্রমিক মাসুদ ও রনি হোসেন জানান, আগে নারিকেলের ছোবড়ার আঁশ দিয়ে জাজিম, পাপোশ, রশি, সোফা, চেয়ারের গদিসহ নানা ধরনের পণ্য তৈরি করা হতো। বেডিং শিল্পেও ছোবড়ার ব্যবহার ছিল। আর ছোবড়া থেকে ফাইবার তৈরির সময় যে গুঁড়া পাওয়া যেত, তা কোনো কাজে লাগত না। এখন কোকো ফাইবার নামে ছোবড়ার আঁশ এবং কোকো ডাস্ট নামে ছোবড়ার গুঁড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

হায়দরগঞ্জ বাজারের নারিকেল ব্যবসায়ী আবদুর রহিম জানান, প্রতিটি কারখানায় প্রতিদিন কয়েক টন ছোবড়াকে আঁশে পরিণত করা হয়। ব্যাপক চাহিদা থাকায় জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিবছর ছোবড়া প্রক্রিয়াকরণ কারখানা নির্মাণ হচ্ছে। ছোবড়া থেকে মেশিনের সাহায্যে বের করা হয় আঁশ বা ফাইবার। ছোবড়া সংখ্যা হিসেবে কেনা হয়। এক হাজার নারিকেলের ছোবড়ায় কমপক্ষে ৮০ কেজি আঁশ বা ফাইবার পাওয়া যায়। প্রতিটি কারখানা থেকে বছরে প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি টাকার ফাইবার বিক্রি করা হয়।

দালাল বাজার এলাকার ছোবড়া ব্যবসায়ী সততা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. জাকির হোসেন জানান, দুই বছর আগেও প্রতিটি নারিকেলের ছোবড়া কেনা হতো ৫০ পয়সা দরে। এখন মানভেদে প্রতিটি নারিকেলের ছোবড়া পাঁচ থেকে সাত টাকায় কেনা হয়। ছোবড়া থেকে ফাইবার তৈরির পর প্রতি ২০ কেজি ওজনের একেকটি ফাইবার বান্ডেল বিক্রি করা হয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। প্রতিটি কারখানায় সপ্তাহে চার থেকে ছয় ট্রাক ফাইবার উৎপাদন হয়। প্রতি ট্রাক কমপক্ষে ২০০ বান্ডেল ফাইবার বহন করে। বিভিন্ন কোম্পানি ফাইবার নিয়ে তোশকের ভেতরের অংশ, ম্যাট্রেস বা কয়ার ফেল্ট তৈরি করে। সে কারণে বর্তমানে ছোবড়ার আঁশ বা ফাইবারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সব খরচ বাদে একটি কারখানায় মাসে ৫০ হাজারের বেশি আয় হয়।

নার্সারি ব্যবসায়ী সজীব পাটোয়ারী ও হামিদ জানান, ছোবড়া থেকে ফাইবার তৈরির সময় যে গুঁড়া বের হয়, তা দিয়ে শাকসবজি চাষ, আধুনিক গ্রিনহাউস এবং ছাদবাগানের জন্য কোকো ফাইবার ও কোকো ডাস্ট তৈরি করা হয়। চারা উৎপাদনের জন্য এখন মাটির পরিবর্তে কোকো ডাস্ট খুবই জনপ্রিয়। এক হাজার নারিকেলের উপজাত হিসেবে বের হয় ১৬০ কেজির মতো গুঁড়া বা কোকো ডাস্ট। ২০ কেজির প্রতি বস্তা কোকো ডাস্ট ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় পাইকারি বিক্রি করা হয়।

লক্ষ্মীপুর বিসিক শিল্পনগরীর উপপরিচালক মাকসুদুর রহমান জানান, ফেলনা নারিকেলের ছোবড়ার জন্য অনেক কারখানা তৈরি হয়ে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। পাশাপাশি বছরে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা আয় হচ্ছে কোকো ফাইবার ও কোকো ডাস্ট থেকে।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement