১৯ এপ্রিল, ২০২৪, শুক্রবার

প্রতি হাটে দেড় থেকে দুই কোটি টাকার মরিচ বেচাকেনা

Advertisement

ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, চাঁদপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বৃহত্তর দীঘিরপাড় হাটে বস্তায় বস্তায় শুকনা মরিচ নিয়ে আসতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আসতে থাকেন মরিচের ক্রেতারা। শুরু হয় হাঁকডাক-বেচাকেনা। এভাবেই প্রতি শুক্র ও সোমবার জমে ওঠে মরিচের এই ঐতিহ্যবাহী হাট। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে মরিচ বেচাকেনা। প্রতি হাটে দেড় থেকে দুই কোটি টাকার মরিচ বেচাকেনা হয় বলে ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের দাবি।

হাটে আসা কৃষক ও আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পদ্মা নদীর পারে শতবর্ষ পুরোনো দীঘিরপাড় হাটের অবস্থান। একসময় এ হাটে মরিচের দু–চারটি আড়ত থাকলেও বর্তমানে অর্ধশতাধিক আড়ত আছে। একাধিকবার পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয় এ হাট। তবে এ হাটে নৌকা ও গাড়ি দিয়ে মালামাল বহন করা সহজ এবং যাতায়াত খরচ কম। সে জন্য মুন্সিগঞ্জসহ আশপাশের পাঁচ জেলার চরাঞ্চলে উৎপাদিত মরিচ স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা সপ্তাহের দুই দিন এ হাটে বিক্রি করতে নিয়ে আসেন। চৈত্র ও বৈশাখ—এ দুই মাস এই হাটে চলে মরিচের ধুম কেনাবেচা। প্রতি হাটে দেড় থেকে দুই হাজার মণ মরিচ বিক্রি হয়। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার কোম্পানি ও বড় ব্যবসায়ীরা এ হাট থেকে মরিচ কিনে নিয়ে যান।

সরেজমিন গত শুক্রবার সকালে দেখা যায়, কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আড়তগুলোয় বস্তায় বস্তায় মরিচ নিয়ে বসেছেন। মরিচের ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে সরগরম এ হাট। বিক্রেতারা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে সুরে সুরে ডাকছিলেন আর বলছিলেন, ‘দেখে নেন, বুঝে নেন, একের মাল, ফ্রেশ মাল…।’ বস্তা দেখিয়ে কোনোটি ৩৫০ টাকা কেজি, আবার কোনোটি ৩০০ টাকা কেজি দাম হাঁকানো হচ্ছিল। ক্রেতারা মরিচ নেড়েচেড়ে দাম কমাতে বলছেন। দরদামে মিললে মরিচ কিনে নিচ্ছিলেন ক্রেতারা। সাধারণত মরিচের মান ও আকার ভেদে কেজিপ্রতি ১৯০ থেকে ৩৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দীঘিরপাড় এলাকার কৃষক শরিফ মোল্লা তাঁর জমির শুকনা মরিচ ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে এ হাটেই বিক্রি করছেন। এবার দাম বেশি হওয়ায় খুশি তিনি। তিনি বলেন, ‘কখনো উৎপাদন বাড়ে, দাম কমে। আবার কখনো উৎপাদন ও দাম—দুটোই কম থাকে। গত বছর যে জমিতে ৭০ থেকে ৮০ মণ মরিচ হয়েছে, এ বছর মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ মণ মরিচ হয়েছে। দাম পাব কি না, সে শঙ্কায় ছিলাম। এবার কাঁচা মরিচের দাম ভালো পেয়েছি। এখন শুকনা মরিচের দামও ভালো। উৎপাদন কম হলেও দামের কারণে ভালোই লাভ হয়েছে।’

পাশের শরীয়তপুরের নওপাড়া এলাকার কৃষক বাদল মিজি। তিনি এ হাটে ৩২ মণ মরিচ বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘মরিচ বিক্রির জন্য এ হাট আমাদের প্রথম পছন্দ। এখানে মান বিচারে ন্যায্য দাম পাওয়া যায়। আশপাশের কৃষক-ব্যবসায়ীরা এ হাটে মরিচ নিয়ে আসেন। যাঁরা কিনতে আসেন, তাঁরাও মান যাচাই করে মরিচ কিনতে পারেন।’

নারায়ণগঞ্জের মরিচ ব্যবসায়ী জসিম চৌধুরী বলেন, তিনি প্রতি মৌসুমে দীঘিরপাড়ের এ হাট থেকে দেড়-দুই হাজার মণ মরিচ কেনেন। সেগুলো আবার বিভিন্ন আড়ত ও বাজারে পাইকারি বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘বৈশাখের মাঝামাঝি  ৪০০ থেকে ৪৬০ টাকা কেজি পর্যন্ত মরিচ কিনেছিলাম। সে সময় মানসম্মত মরিচও বেশি ছিল। এখন মৌসুমের শেষ দিকে মরিচের আকার ছোট ও ফ্যাকাশে হয়েছে। দামও কমতে শুরু করেছে। গত কয়েকবারের তুলনায় এ বছর এই হাটে মরিচের দাম বেশি। তবে এ হাটে বস্তার ওপরে যেমন মরিচ থাকে, নিচ পর্যন্ত সেই মানের মরিচই পাওয়া যায়। কোনো ছলচাতুরী করা হয় না।’

এ হাটের মোল্লা এন্টারপ্রাইজ নামের আড়তের আড়তদার সামছুল ইসলাম বলেন, মরিচের আড়তগুলো শুধু শুক্র ও সোমবার এক বেলার জন্য খোলা হয়। এ সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা মরিচ বিক্রি করতে নিয়ে আসেন। তিনি একাই প্রতি হাটে ১৫ থেকে ১৭ লাখ টাকার মরিচ বিক্রি করেন। এখানে ছোট-বড় মিলিয়ে অর্ধশতাধিক আড়তদার আছেন।

দীঘিরপাড় বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিজল মোল্লা বলেন, ‘আমাদের এ হাট খুবই পরিচিত। দূরের জেলার মানুষেরা এখানে মরিচ বিক্রি করতে আসেন, আবার কিনতেও আসেন। মরিচ হাটে তোলার আগে ভালো করে শুকানো, বাছাই কাজ করা হয়। এবার প্রতি হাটে এক থেকে দেড় হাজার মণের বেশি মরিচ বিক্রি হচ্ছে, যার বাজারমূল্য দেড় থেকে দুই কোটি টাকা। মরিচের আকার, রং ও ধরন অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করা হয়। ক্রেতা-বিক্রেতারা তাঁদের পছন্দ অনুযায়ী দামে মরিচ কেনাবেচা করেন।’

টঙ্গিবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়নুল আলম তালুকদার বলেন, দীঘিরপাড় বাজারের মরিচের হাটটি শুধু মুন্সিগঞ্জকেন্দ্রিক নয়; বিভিন্ন জেলা থেকে এ বাজারে মানুষ মরিচ বেচাকেনা করতে আসেন। এ বছর কৃষকেরা মরিচ চাষে লাভবান হয়েছেন। কাঁচা মরিচের দামও বেশি ছিল, এখন শুকনা মরিচের দামও ভালো যাচ্ছে।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement