২৫ এপ্রিল, ২০২৪, বৃহস্পতিবার

প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা, পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী কারাগারে

Advertisement

বিত্তশালীদের টার্গেট করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় গ্রেফতার পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বুধবার দুপুরে রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেট্রোপলিটনের কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুর রশিদ। গ্রেফতার কানিজ ফাতেমা ওরফে ফাতেমা কানিজ রংপুর জেলা পুলিশের অপরাধ শাখার পরিদর্শক হাবিবুর রহমানের স্ত্রী।

পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার (০৪ জানুয়ারি) বিকালে গ্রেফতারের পর বুধবার বিকালে কানিজ ফাতেমাকে রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। তার পক্ষে কেউ জামিনের আবেদন এবং পুলিশ রিমান্ড না চাওয়ায় তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালতের বিচারক রাজু আহমেদ। পরে পুলিশ পাহারায় তাকে কারাগারে নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রংপুর মেট্রোপলিটনের কোতোয়ালি থানার এসআই মিসির আলী মজনুকে গণমাধ্যম থেকে ২০ বার কল দিলেও ধরেননি। বিকালে আদালতের আদেশের খবর শুনে বক্তব্য জানতে আবারও কল দিলে প্রতিনিধির সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন মিসির আলী। এ সময় তিনি প্রতিনিধিকে বলেন, এই মামলার বিষয়ে কোনও তথ্য দেবো না। আমার কাছে কোনও তথ্য নেই- বলে ফোন কেটে দেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুর রশিদ বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। কানিজ ফাতেমাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সাংবাদিকের সঙ্গে এসআই মিসির আলীর দুর্ব্যবহারের বিষয়টি জানালে ওসি আব্দুর রশিদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি দেখবো।’

পুলিশ জানায়, গত ২৩ ডিসেম্বর রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের কর্মী আশরাফুল ইসলাম রংপুর মেট্রোপলিটনের কোতোয়ালি থানায় প্রতারণার একটি মামলা করেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, রংপুর নগরীর সেনপাড়া মহল্লার বুলু প্রধানের ছেলে শাহরুখ করিম অনিক ও তার স্ত্রী আসমানি আক্তারের পাশের ফ্ল্যাটে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিলেন আশরাফুল। সম্প্রতি বাসা ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এ নিয়ে অনিক ও তার স্ত্রী আসমানি এবং কানিজ ফাতেমাসহ আরও কয়েকজন মিলে তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেন। তার বাসার জিনিসপত্র নিতে বাধা দেন।

পরে বাসার জিনিসপত্র নিয়ে গেলে তাকে বাসায় আটকে রেখে দুদিন অমানুষিক নির্যাতন করেন। এরপর অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। সেই সঙ্গে তার চেকে স্বাক্ষর করিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেন কানিজ ফাতেমা। ওই টাকা ভাগ করে নেন তারা।

অভিযোগে তিনি আরও উল্লেখ করেন, তার মতো আরও অনেক বিত্তশালীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বাসায় নিয়ে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আসামিরা। নারীদের দিয়ে একটি চক্র গড়ে বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন।

মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সোমবার (৩ জানুয়ারি) এই চক্রের সদস্য রংপুর নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড় এলাকার বাসিন্দা শাহরুখ করিম অনিক ও তার স্ত্রী আসমানি আক্তারকে গ্রেফতার করেছিল র‌্যাব-১৩। অনিক ও তার স্ত্রী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের জবানবন্দিতে উঠে আসে কানিজ ফাতেমার নাম। এরপরই অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, বিত্তশালী ব্যক্তিদের টার্গেট করে একটি চক্র গড়েছেন কানিজ ফাতেমা। এই চক্রের সদস্যরা প্রেমের ফাঁদে ফেলে অনেক ব্যক্তির লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাহরুখ করিম ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতারের পর অন্যদের নাম জানিয়ে দেন।

র‌্যাব জানায়, অনিক ও তার স্ত্রী আসমানিকে সোমবার রাতে কোতোয়ালি থানায় সোপর্দ করেছিল র‌্যাব। পরে রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তারা। জবানবন্দিতে পুলিশ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের স্ত্রী কানিজ ফাতেমার নাম বলেছেন ওই দম্পতি। একই সঙ্গে চক্রের অন্যান্য সদস্যের পরিচয় ও নানা অপরাধ সম্পর্কে জানিয়ে দেন। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কানিজ ফাতেমাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement