২৬ এপ্রিল, ২০২৪, শুক্রবার

বগুড়ায় বাণিজ্যিক ভাবে সাড়া ফেলেছে বারোমাসি তরমুজ চাষ

Advertisement

বগুড়ায় এবার বারোমাসি তরমুজ চাষে বেশ সাড়া পড়েছে। তিন চার বছর আগেও জেলায় শখের বসে বারোমাাসি তরমুজ চাষ ও টুকটাক বিক্রি হলেও এবার রীতিমতো বাণিজ্যিকভাবে বারামাসি তরমুজ চাষ হয়ে বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। বগুড়ায় চাষকৃত তরমুজ আকারে ছোট হলেও ভেতরে টকটকে লাল ও বেশ রসালো। অসময়ে তরমুজ চাষ করে চাষিরাও হচ্ছেন লাভবান।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ায় কয়েক বছর আগে শখের বসে কয়েকজন তরুণ উদ্যোক্তা বারোমাসিজাতের তরমুজ চাষ শুরু করেন। চাষের পর ফলন এলে তরমুজগুলোর বিভিন্ন নাম দেওয়া হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি নামকরণ করা হয়েছে ‘সুইট ব্ল্যাক’ বা কালো জাতের এবং গোল্ডেন ক্রাউন’ বা হলুদ জাতের। কালোটা কাটলে ভেতরে টকটকে লাল। আর হলুদজাতের কাটলে ভেতরে মাল্টা ফলের মতো হলুদ। রসালো এই ফলটি বগুড়ায় ভোক্তাদের মাঝে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বগুড়ায় প্রথমদিকে শখের বসে এই বারোমাসি তরমুজ চাষ করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। চলতি বছর বগুড়ায় ১২ হেক্টর জমিতে বারোমাসি তরমুজ চাষ হয়েছে। এ থেকে ফলন ধরা হয়েছে প্রতি হেক্টরে ১৪ মেট্রিক টন। গত বছর ৫ হেক্টর জমিতে বারোমাসি তরমুজ চাষ হয়েছিল। জেলার শিবগঞ্জ, নন্দীগ্রাম, শাজাহানপুর ও আদমদিঘি উপজেলায় বারোমাসি তরমুজ চাষ হচ্ছে।

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটগ্রাম ইউনিয়নের হাইব্রিড বা বারোমাসি তরমুজের খেত সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খেতের চারদিকে বেড়িবাঁধের মতো উঁচু মাটির ঢাল। সেই ঢালে মাচায় ঝুলে আছে তরমুজ। একটি-দুটি নয়, কয়েকশত তরমুজ। মাচায় ঝুলে থাকা তরমুজগুলো বাহারি রঙের। কোনোটির গায়ে ডোরাকাটা দাগ, কোনোটি কালচে সবুজ, আবার কোনোটি হলুদ। তরমুজগুলোর ভেতরের রঙেও পার্থক্য আছে। কোনোটি কাটলে ভেতরে টকটকে লাল, আবার কোনোটি পাকা মাল্টার মতো হলুদ। স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটগ্রাম ইউনিয়নের কৃষক জাব্বির হোসেন এই খেত গড়েছেন। জাব্বির হোসেন ‘তৃপ্তি’ ‘সুইট ব্ল্যাক’ বা কালো জাত, নতুন ‘গোল্ডেন ক্রাউন’ বা হলুদ জাতসহ কয়েকটি জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। এজন্য উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহাদত হোসেন তাকে উন্নতজাতের বীজ সংগ্রহ করে দেওয়া থেকে শুরু করে নিয়মিত দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। মোট তিন জাতের তরমুজের বীজ লাগানো হয়েছে।

বগুড়া সদরের মহাস্থান এলাকার তরমুজ চাষি কৃষক খলিল মন্ডল জানান, মাত্র ৩০ শতক জমিতে তরমুজের বীজ রোপণ করেন তিনি। রোপণের ৫০ দিনের মধ্যে তরমুজের ফুল ও ফল আসে। বর্তমানে প্রায় ২ হাজার তরমুজ রয়েছে তার জমিতে। এদের মধ্যে কোনোটা ৩ কেজি, আবার কোনটা সাড়ে ৩ কেজি ওজন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আর ১৫-২০ দিন পরেই তিনি তরমুজ সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। এ তরমুজ উৎপাদনে কৃষক খলিল মন্ডল প্রাকৃতিক জৈব সার ব্যবহার করেছেন। পোকামাকড় নিধনের জন্য তিনি ফেরোমন ফাঁদ ও ইয়োলো কালার ট্যাপ পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। এসবই তিনি কৃষি অফিসের পরামর্শে করেছেন। এতে এ পর্যন্ত তার প্রায় ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি তরমুজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৫০থেকে ৬০ টাকায়। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান জানান, অসময়ে তরমুজ চাষ করে নন্দীগ্রামের জাব্বির হোসেন ও বগুড়া সদরের কৃষক খলিল মন্ডল এলাকায় সাড়া জাগিয়েছেন। আবহাওয়া ভাল থাকলে তাদের আবাদ আরও ভালো হবে বলে মনে হচ্ছে। তরমুজ বিক্রি করে বগুড়ার কৃষকরা ভালো লাভ করতে পারবেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে চাষ করা এই ফসলই এখন স্বপ্ন দেখাচ্ছে বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকদেরকে।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement