২৬ এপ্রিল, ২০২৪, শুক্রবার

বাফুফের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ, তদন্তের সুপারিশ

Advertisement

বের হতে শুরু করেছে থলের বেড়াল, ফেঁসে যাচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন তথা বাফুফে। রবিবার বাফুফের বিরুদ্ধে পূর্ব-পরিকল্পিত মিথ্যাচারের অভিযোগ আনেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী। এবার তার সুরেই সুর মেলালেন বলেছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। বাফুফের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে সর্বসম্মত হয়েছেন তারা।

তবে শুধু মিথ্যাচারিতা নয়, নানান সময়ের আর্থিক গড়মিল ও টাকা আত্মসাৎের অভিযোগও আছে বাফুফের বিরুদ্ধে। যেখানে সবচেয়ে বড় প্রমাণ মিয়ানমারে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করাতে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে চাওয়া ৯২ লাখ টাকা! ইচ্ছেমতো খাত আর অতিরিক্ত ব্যয়ের হিসাব দেখানো হয়েছে যেখানে স্পষ্টভাবেই।

গত ৩ এপ্রিল নারী ফুটবলারদের অলিম্পিকে অংশগ্রহণ না করাতে পারার কারণ জানাতে যে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল বাফুফে, সেখানে দাবি করা হয় ৭০ লাখ টাকার প্রয়োজন ছিল এই প্রতিযোগিতার অংশ হতে৷ তবে টাকা চেয়ে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে যে চিঠি দিয়েছিল বাফুফে, সেখানে তাদের চাওয়া ছিল ৯২ লাখ টাকা! যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার ভেতর সাচ্ছন্দ্যেই শেষ করা যেত এই টুর্নামেন্ট।

যাহোক, ৯২ লাখ টাকা চেয়ে যেই চিঠি দেয়া হয় ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে, সেখানে ধরা পড়েছে নানা অসঙ্গতি। বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আবু হোসেন স্বাক্ষরিত সেই বাজেটে বিমান ভাড়া, আবাসন থেকে শুরু করে মোজা কেনা, পকেট মানিও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ঢাকা থেকে মিয়ানমারের বাফুফে বিমানভাড়া দেখিয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা করে। সাথে ভিসা ও ইন্সুইরেন্স ফি মিলে ৩১ জনের বিমান ভাড়া দাঁড়ায় প্রায় ৪৩ লাখ টাকা। অথচ ঢাকা থেকে মিয়ানমার যেতে স্বাভাবিক অবস্থায় খরচ মাত্র ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা। যেখানে বাফুফে বেশি নিচ্ছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা করে, ৩১ জনে যা ১৮ লাখ টাকারও বেশি!

বাফুফে ভবন থেকে বিমানবন্দরে যেতে বাস ভাড়াও বাজেটে অর্ন্তভুক্ত করেছিল ফেডারেশন। ওই অঙ্কটা ২৫ হাজার টাকা। অথচ ফুটবল ফেডারেশনের নিজস্ব বাসই রয়েছে। যা উয়েফা বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছিল। ১৩টি ডাবল ও পাঁচটি সিঙ্গেল রুমের জন্য ২৫ হাজার ডলার চেয়েছে বাফুফে। টাকার অঙ্কে সেটা ২৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

কারচুপি করা হয়েছে ডলারের মূল্য নিয়েও৷ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও বাফুফের হিসাবে ডলারের মূল্য ধরা হয়েছে ১১৫ টাকা। অথচ ব্যাংক রেট ১০৬ টাকা! শুধু তাই নয়, প্র্যাকটিস জার্সি, ম্যাচ জার্সি, টি শার্ট, গোলরক্ষক গ্লাভস বাবদ খরচ ধরা হয়েছে প্রায় আট লাখ টাকা। অবাক করা বিষয় হলো, মোজার মূল্যই ধরা হয়েছে প্রায় ৪৩ হাজার টাকা! অথচ এগুলো বাফুফের স্পনসর প্রতিষ্ঠানের দেয়ার কথা।

শেষ হতে পারত এখানেই, কিন্তু শেষ হয়নি। দেখা যায় অনুশীলনের জন্য ৫০টি বল বাবদ ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা চেয়েছে বাফুফে। অথচ দেশের বাইরে অনুশীলন সুবিধা ও বলের ব্যবস্থা স্বাগতিক দেশ কিংবা আয়োজকরাই করে থাকে। এর বাহিরে হাত খরচ হিসেবে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে বাফুফের চাওয়া ছিল প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টাকা! অবিশ্বাস্যই বটে!

সব মিলিয়ে নারী ফুটবলারদের ব্যবহার করে বাফুফের টাকা আত্মসাৎের পরিকল্পনা চোখে পড়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির। যেখানে তারা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বাফুফের কাছে প্রকৃত ব্যাখ্যা চাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement