১৯ এপ্রিল, ২০২৪, শুক্রবার

জিব্রা মাছে মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রের ক্ষত সারানোর আলো দেখছেন গবেষকরা

Advertisement

জার্মানিতে গবেষকরা জিব্রা মাছের মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রের ক্ষত সারিয়ে নেয়ার ক্ষমতা দেখে বিস্মিত হয়েছেন। তারা এই গবেষণার ফল মানবশরীরে ব্যবহারের উপায় খুঁজছেন।

জিব্রা ফিশ নামে পরিচিত এই মাছগুলোর নিজেদের সারিয়ে নেয়ার অনন্য ক্ষমতা আছে।

জার্মানির মিউনিখের হেলমহলৎস সেন্টারের একটি পরীক্ষাগারে এখন এদের বাস। সেখানকার গবেষক জোভিকা নিনকোভিচ বলেন, ‘‘আমরা একসঙ্গে অনেক মাছ সাধারণ পরিবেশে দীর্ঘস্থায়ীভাবে রাখতে পারি। পানির গুণাগুণ ও খাবারের পরিমাণ আমরা নিয়ন্ত্রণ করি। এতে টেকসই ফল পাওয়া যায়। তারপর প্রতিটি জোড়া আমাদের একশতের বেশি ডিম দেয় এবং এতে প্রজননও খুব ভালো হচ্ছে।’
প্রাণীরা মস্তিষ্কের ক্ষত কেমন করে সারায়, তা নিয়ে গবেষণা করছেন এই অনুজীব বিজ্ঞানী। গবেষণায় যেসব প্রাণীদের তিনি ব্যবহার করেন তাদের প্রথমে চেতনানাশক দেন তিনি। এরপর এদের মস্তিষ্কে খানিকটা ক্ষত তৈরি করেন এবং দেখেন কেমন করে তারা সেরে ওঠে।

জোভিকার ভাষায়, ‘‘ক্ষত তৈরি হওয়া মানে মস্তিষ্কে কোষের মৃত্যু। স্ট্রোক বা ট্রমার কারণে এমনটি হতে পারে। আমাদের লক্ষ্য, এই কোষগুলোকে প্রতিস্থাপন করা। মাছ তা নিজে নিজে করে। ক্ষতিগ্রস্ত নিউরনগুলো মরে যায়। কিন্তু মাছের স্টেম কোষ এই নিউরনগুলোকে পুরোপরি প্রতিস্থাপন করে। নতুন কোষ তৈরি করে, যা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোকে সারিয়ে তোলে।’

বিভক্ত না হয়েই স্টেম কোষ সরাসরি স্নায়ু কোষে রূপান্তরিত হয়। মানবশরীরেও এই গবেষণার ফল কখনো কাজে লাগানো যাবে বলে মনে করেন গবেষকরা। জিব্রা মাছের হৃদযন্ত্রেরও নিজে নিজে সেরে ওঠার ক্ষমতা আছে। তবে এটা কাজ করে ভিন্নভাবে। উল্ম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্সের অধ্যাপক গিলবার্ট ভাইডিঙ্গার এই পদ্ধতি ব্যাখ্যার একটি অনুজৈবিক প্রক্রিয়া বের করেছেন।

তিনি বলেন, ‘‘জিব্রা মাছের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল, হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশীর ক্ষতিগ্রস্ত সব কোষই এরা প্রতিস্থাপন করতে পারে। সাধারণত মানুষ কিংবা অন্য প্রাণীদের পূর্ণাঙ্গ টিস্যুর স্টেম কোষ নতুন কোষ তৈরি করে। কিন্তু জিব্রা মাছের ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশীর পূর্ণাঙ্গ কোষগুলোই ভাগ হয়ে নতুন কোষ তৈরি করে। সাধারণত এমন কোষগুলো অন্য প্রাণীদের ক্ষেত্রে বিভক্ত হয় না।’’

ভাইডিঙ্গার ও তার দল আরো দেখলেন যে, সিগনাল প্রোটিনগুলো ক্ষতের সীমানায় পেশীকোষ গুলোকে অধিক হারে ভাগ করতে কাজ করছে। তাই নির্দিষ্ট হারে কোষের পূণর্জন্ম প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছেন তারা। কিন্তু গবেষণালব্ধ এই জ্ঞান কি মানব শরীরেও ব্যবহার করা সম্ভব?

তিনি আরও বলেন, ‘মাছ ও মানুষ উভয়ই একই গোষ্ঠীর, অর্থাৎ মেরুদণ্ডী প্রাণী। তাই আমাদের শারীরিক কাঠামোয় অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। আমাদের কোষগুলোও প্রায় এক ধরনের। তাই জিব্রা মাছ ও মানুষের হৃৎপিণ্ডের পেশীগুলোও একই ধরনের কোষে তৈরি। মানবশরীর ও মাছের আশি ভাগ জিন ও কোষে মিল আছে। এখন পর্যন্ত আমরা জানি যে, হৃৎপিণ্ডের কোষ প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মাচের জিনগুলো মানবশরীরেও আছে। পার্থক্য হল, ক্ষত তৈরি হলে মাছের কোষগুলো প্রতিস্থাপনে সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং মানুষের কোষগুলো নীরব থাকে।

প্রায় ২০ বছরের গবেষণায় এই বিস্ময়কর ছোট মাছগুলো এখন আলোর পথ দেখাচ্ছে। তবে এদের সব গল্প আজও অজানা।

সূত্র: ডয়চে ভেলে।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement