২৮ মার্চ, ২০২৪, বৃহস্পতিবার

রংপুরের একটি বৃদ্ধাশ্রমে এক প্রকৌশলীর মৃত্যু, জানাজায় আসেনি ছেলে-মেয়েরা

Advertisement

বৃদ্ধাশ্রমে মারা গেছেন এস এম মনসুর আলী (৭৫) নামে এক প্রকৌশলী। তবে তার জানাজায় অংশ নেয়নি সন্তানেরা। মৃত্যুর খবর জেনেও বৃদ্ধাশ্রমের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেননি ছেলে-মেয়ে কিংবা কোনো স্বজন। এমনই ঘটনা ঘটেছে বরিশালে।

এস এম মনসুর আলী টিএন্ডটি বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। তিনি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার দক্ষিণ চাঁদশী গ্রামের মৃত এস এ আবুল কাশেমের ছেলে।

(৩০ অক্টোবর) রোববার রংপুর নগরীর বকসা এলাকার একটি বৃদ্ধাশ্রমে অসুস্থ অবস্থায় মারা যান এস এম মনসুর আলী। পরে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

(৩১ অক্টোবর) সোমবার দুপুরে মরহুমের জানাজা শেষে স্থানীয়রা পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করেন। এ সময় মৃতের কোনো সন্তান ও স্বজন সেখানে উপস্থিত ছিলেন না বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর।

জানা গেছে, ৬ মাস আগে রংপুর নগরীর ৭ নং ওয়ার্ডের হারাগাছ থানাধীন বকসা বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই হয় বৃদ্ধ এস এম মনসুর আলীর। অসহায়, বঞ্চিত, নিরাশ্রয় ও নিপীড়িত মানুষের জন্য গড়ে তোলা ওই বৃদ্ধাশ্রমে তার থাকা খাওয়াসহ চিকিৎসা দেওয়া হতো। রোববার বিকেলে তিনি অসুস্থ অবস্থায় সেখানে মারা যান।

এদিকে দক্ষিণ চাঁদশী গ্রামের লোকজন জানিয়েছেন, প্রকৌশলী এস এম মনসুর আলীর দুই ছেলে ও দুই মেয়ে সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে মহিন সরদার ঢাকায় চাকরি করেন আর ছোট ছেলে রাজু সরদার কাতার প্রবাসী। সম্পত্তির লোভে পরিবারের লোকজন এস এম মনসুর আলীকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। এমনকি জীবিত থাকা অবস্থায় তাকে তার ছেলেরা মৃত হিসেবে গ্রামের প্রচার করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মৃত মনসুর আলীর এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বলেন, ঢাকায় প্রায় কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য মনসুরের ছেলে ও বোন সেলিনা বেগম ১০ বছর আগে তাকে মৃত দেখিয়ে বাসা থেকে বের করে দেয়। এরপর মনসুর আলী ওই বাসায় ফিরতে পারেনি।

অভিযোগের ব্যাপারে মৃত মনসুর আলীর ছেলে মহিন সরদারের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা ফোন রিসিভ না করায় কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে রংপুরের বকসা বৃদ্ধাশ্রমের সদস্য সচিব নাহিদ নুসরাত বলেন, চলতি বছরের জুন মাসে অসুস্থ শরীরে বৃদ্ধ মনসুর আলী আমাদের বৃদ্ধাশ্রমে আসেন। এরপর থেকে তিনি আমাদের বৃদ্ধাশ্রমেই ছিলেন। তার কাছ থেকে শুনেছি তিনি টিএন্ডটি বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। রাজধানী ঢাকার মিরপুর স্টেডিয়ামের কাছে তার বহুতল ভবন আছে। জীবন সায়াহ্নে এসে তিনি পরিবার থেকে বিছিন্ন হয়ে বৃদ্ধাশ্রমে এসেছিলেন।

চাঁদশী ইউনিয়র পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, প্রকৌশলী এস এম মনসুর আলীর সন্তানরা প্রতিষ্ঠিত। ঢাকায় তার নিজের জমি-বাড়ি রয়েছে। কিন্তু সন্তানরা সম্পত্তির লোভে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরে তিনি একটি বৃদ্ধাশ্রমে ছিলেন। সেখানেই মারা যান তিনি। আমরা বিষয়টি জানতাম না। তার লাশ যখন গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়, তখন কিছুটা অবাক হই। কারন এই মানুষটির সঙ্গে গ্রামের বাড়ির লোকেদেরও কোনো যোগাযোগ ছিল না। যখন স্বজনদের খুঁজতে যাই, তখন জানতে পারি তার দুই ছেলে-মেয়ের কেউ জানাজায়ও আসেনি। বিষয়টি পরিতাপের। তার মূল বাড়ি আমার ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে।

৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রনি সিকদার বলেন, যতদূর জেনেছি তাকে সাত বছর আগেই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। মূলত ছেলে-মেয়েরা মিরপুরের বহুতল ভবন নিজেদের দখলে নিতে বাবাকে মৃত দেখিয়ে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেয়। এরপর ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ঘুরেও জায়গা হয়নি তার। পরে রংপুরের একটি বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নেন এবং সেখানেই মারা যান।

এই জনপ্রতিনিধি বলেন, তার লাশ বাড়িতে নিয়ে আসার পরে আমরা তার সন্তানদের মোবাইল নম্বরে অনেক বার কল করেছি। তার যে ছেলে দেশে থাকেন, তিনি সরকারি ব্যাংকের বড় কর্মকর্তা। আর দুই মেয়েও বিয়ে হয়েছে বড় ঘরে। তিনি গ্রামের বাড়ির কিছু জমি বিক্রি করে নিজের খরচ চালাতেন। আমি মনে করি, ভাই এই সম্পদ আর সন্তান দিয়ে লাভ কী? যা শেষ বয়সে উপকারে আসে না। এমন ঘটনা আমাদের জন্য লজ্জার।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement