২০ এপ্রিল, ২০২৪, শনিবার

রংপুর সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে  

Advertisement

রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে। (২৭ ডিসেম্বর) মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় মহানগর এলাকায় মোট ২২৯টি ভোটকেন্দ্রে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলবে এই ভোটগ্রহণ।

এবারই প্রথম রসিক নির্বাচনে সবগুলো কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন ভোটাররা। সঙ্গে প্রতিটি কেন্দ্র ও কক্ষে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। এর আগে ২০১৭ সালের নির্বাচনে একটি মাত্র কেন্দ্র ছাড়া বাকি ১৯২টি কেন্দ্রে ব্যালেট পেপারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে মঙ্গলবার সকালে ভোট শুরুর সময় নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের আলমনগর কলেজ রোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে ভোটারদের লাইন ধরে দাঁড়িয়ে ভোটের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। পাশাপাশি মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ব্যাজ পড়া কর্মী-সমর্থকদের কেন্দ্রের বাইরে জড়ো হতে দেখা গেছে। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোরালো উপস্থিতিও দেখা গেছে।

এই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আসাদুজ্জামান জানান, সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। এই কেন্দ্রে ১ হাজার ৮৭৫ জন ভোটার ১১টি গোপন কক্ষে ভোট চলছে। 

এবার রসিকের ৩৩টি ওয়ার্ডের ২ লাখ ১২ হাজার ৩০২ জন পুরুষ এবং ২ লাখ ১৪ হাজার ১৬৭ জন নারী ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন। আর তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার রয়েছেন একজন।

এবারের নির্বাচনে মোট প্রার্থী রয়েছেন ২৬০ জন। এর মধ্যে মেয়র পদে ৯ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৮৩ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের একজন কাউন্সিলর প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

মেয়র পদে ৯ প্রার্থী হলেন- জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) শফিয়ার রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল, খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল রাজু, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম খোকন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আবু রায়হান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেদী হাসান বনি ও লতিফুর রহমান মিলন।

এই নির্বাচনে মেয়র পদে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও সদ্য সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এবং আওয়ামী লীগ মনোনীত হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়ার মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং অফিসার আবদুল বাতেন জানিয়েছেন, ভোট ঘিরে কেন্দ্রে কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। প্রতি সাধারণ কেন্দ্রে ১৫ জনের এবং ৮৬টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৬ জনের ফোর্স মোতায়েন রাখা হয়েছে।

এছাড়া নির্বাচনী আচরণ বিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়োগ করা হয়েছে ৩৩ জন নির্বাহী হাকিম। তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন অপরাধের সংক্ষিপ্ত বিচার কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ১৬ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে।

এদিকে র‍্যাব-বিজিবির একাধিক টিম মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নির্বাচনী এলাকায় নিয়োজিত রয়েছে। তারা ভোটের আগে ও পরে মোট ৫ দিনের জন্য নিয়োজিত থাকবেন।

রসিক নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এক হাজার ৮০৭ সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে রংপুর এবং ঢাকায় নির্বাচন অফিস থেকে পর্যবেক্ষণ করা হবে। কোথাও কোনো অনিয়ম দেখতে পেলেই গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচনের মতো ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন এই রিটার্নিং অফিসার।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের (২৮ জুন) ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে রংপুর সিটি করপোরেশন গঠনের পর ওই বছরের (২০ ডিসেম্বর) প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেবার এক লাখ ৬ হাজার ২৫৫ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পেয়েছিলেন ৭৭ হাজার ৮০৫ ভোট এবং বিএনপি নেতা কাওসার জামান বাবলা পেয়েছিলেন ২১ হাজার ২৩৫ ভোট।

২০১২ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন তিন লাখ ৫৭ হাজার ৭৪২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭৯ হাজার ১২৮ জন এবং নারী ভোটার এক লাখ ৭৮ হাজার ৬১৪ জন।

দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৭ সালের (২১ ডিসেম্বর) দলীয় প্রতীকে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এক লাখ ৬০ হাজার ৪৮৯ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু পেয়েছিলেন ৬২ হাজার ৪০০ ভোট এবং বিএনপির প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা পেয়েছিলেন ৩৫ হাজার ১৩৬ ভোট। ওই বছর ভোটার সংখ্যা ছিল তিন লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৯৬ হাজার ৩৫৬ ও নারী এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৩৮ জন।

রসিকের সবশেষ নির্বাচিতদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৮ সালের (১৯ ফেব্রুয়ারি)। সে অনুযায়ী এই সিটির বর্তমান পরিষদের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালের (১৮ ফেব্রুয়ারি)।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement