২৯ মার্চ, ২০২৪, শুক্রবার

রপ্তানি খাত ডলার সংকটে অগ্রাধিকার পাচ্ছে

Advertisement

বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় কৃচ্ছ সাধনের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় বৃদ্ধির দিকেও নজর দিচ্ছে সরকার। মার্কিন ডলার আয়ের জন্য এবার ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে অগ্রাধিকার তালিকায় স্থান পাচ্ছে রপ্তানি খাত। জীবনযাত্রা ব্যয়ের চাপ কমাতে গুরুত্ব পাচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। তেমনি দেশের রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে রপ্তানি আয়কে। এ লক্ষ্যে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ করা হবে। পাশাপাশি নগদ রপ্তানি প্রণোদনা প্রাপ্য পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তৈরি পোশাকের বাইরে অন্য পণ্যগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। যদিও বিগত কয়েক বছর জাতীয় বাজেটে অগ্রাধিকারের তালিকা ছিল না রপ্তানি খাত। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অর্থ বিভাগ ৪২টি পণ্যের ওপর রপ্তানি প্রণোদনা দিচ্ছে। অথচ শুধু তৈরি পোশাক খাতকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরেও কৃষিপণ্য, সবজি, চামড়া ও ইলেকট্রনিকস আইটেমসহ অনেক পণ্য বিদেশে রপ্তানিতে প্রণোদনা পাচ্ছে। কিন্তু ওইসব পণ্য রপ্তানি আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে খুব বেশি ভূমিকা রাখছে না। এজন্য যেসব পণ্য রপ্তানি প্রণোদনা পাচ্ছে সেগুলো বহুমুখীকরণে অর্থ বিভাগ কাজ শুরু করেছে।

জানতে চাইলে সাবেক সিনিয়র অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, আমরা রপ্তানির যোগ্য সব পণ্য একঝুড়িতে রেখেছি। ভবিষ্যতে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে কোনো সমস্যা হলে দেশ বড় ধরনের সমস্যায় পড়বে। কারণ রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে আমরাও একটি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল (তৈরি পোশাক)। তাই আমাদের রপ্তানি বহুমুখীকরণ অনেক দিন যাবৎই আলোচিত হচ্ছে। অবিলম্বে তৈরি পোশাকবহির্ভূত খাতগুলোকে নানাভাবে সহায়তা দিতে হবে। তিরি আরও বলেন, আমরা ইউরোপ ও আমেরিকা ছাড়া অন্য বাজার খুব বেশি ধরতে পারিনি। কোনো কারণে এই দুটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হলে আমাদের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। এ ক্ষেত্রে প্রণোদনা প্রাপ্য ১০ থেকে ২০টি পণ্য নিয়ে একটি ঝুড়ি করতে হবে। এসব পণ্যের বাজার বহুমুখী করতে হবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী জানান, প্রণোদনা ছাড়াও রপ্তানি খাতকে বহুমুখী করতে হলে আগামী বাজেটে বস্ত্র, নিট ও টেরিটাওয়ায়েল, চামড়া, পাদুকাশিল্প, বাইসাইকেল, মৎস্য ও ফ্রজেনফুড রপ্তানির বিপরীতে উৎসে কর দশমিক ৫০ শতাংশ চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করতে হবে। আর এটি আগামী পাঁচ বছরের জন্য বহাল রাখতে হবে। এছাড়া এসব পণ্যের ওপর দেওয়া প্রণোদনার ক্ষেত্রে আরোপিত আয়কর শূন্য শতাংশ নির্ধারণ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, রপ্তানি খাতে করপোরেট কর ১২ শতাংশ ও গ্রিন কারখানার জন্য ১০ শতাংশ নির্ধারণ করতে হবে।

সূত্র আরও জানায়, আগামী বাজেটে রপ্তানি পণ্যের প্রণোদনা দেওয়ার জন্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। চলতি সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ আছে ৭ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ রপ্তানি প্রণোদনা আগামীতে বাড়ছে ৪৭৫ কোটি টাকা। এই প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে তৈরি পোশাকসহ ৪২টি পণ্যে। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চামড়াজাত পণ্য, বাইসাইকেল ও বাইসাইকেলের যন্ত্র, চা, সিমেন্ট শিট এবং এমএস স্টিলদ্রব্য, কৃষিপণ্য, হালকা প্রৌকশলী পণ্য, হিমায়িত চিংড়ি, জাহাজ, পাটজাত পণ্য। কিন্তু দেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশই আসছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। বাকি ২০ শতাংশ আসছে অন্যান্য পণ্য থেকে। দেশের রপ্তানি খাত মাত্র একটি পণ্যের ওপর নির্ভর করে আছে।

রপ্তানি খাত ছাড়াও আগামী বাজেটে অন্যান্য অগ্রাধিকার খাতগুলো হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কৌশল নির্ধারণ, করোনাভাইরাস মোকাবিলা ও অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও অধিক খাদ্য উৎপাদন এবং সারের ভর্তুকি অব্যাহত রাখা। এছাড়া ব্যাপক কর্মসংস্থান ও পল্লি উন্নয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা সম্প্রসারণ ও নিুআয়ের মানুষের জন্য বিনা বা স্বল্পমূল্যে খাদ্য বিতরণ।

বর্তমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বেড়েছে ডলারের মূল্য। এর প্রভাবে আমদানি পণ্যের ওপর ৩০ শতাংশ বাড়তি দাম আঘাত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি আয়ের দেশগুলোতে এক ধরনের অস্থিরতা ও মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এছাড়া দেশের চাহিদা মেটাতে নিত্যপ্রয়োজনীয়সহ অনেক পণ্যই আমদানি করতে হচ্ছে। ফলে এ সময় আমদানি করতে গিয়ে রিজার্ভের ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ডলারের মূল্য বেড়ে টাকার দাম কয়েক দফা পতন হয়েছে। ফলে মার্কিন ডলার সাশ্রয় করতে সরকার কৃচ্ছ সাধন করছে। এরই মধ্যে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও ব্যাংকের কর্মীদের বিদেশ সফর স্থগিত করা হয়েছে। বিদেশ থেকে বিলাসী পণ্য আমদানির ওপর ৭৫ শতাংশ মার্জিন আরোপ করেছে। এছাড়া শতাধিক বিলাসবহুল ও বিদেশি পণ্যের পর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) আরোপ করা হয়। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের সীমা তুলে নেওয়া হয়েছে। ফলে এখন কোনো ধরনের প্রশ্ন ছাড়াই ৫ লাখ টাকার বেশি বা ৫ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি পাঠানো যাবে। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নানা উদ্যোগের পর এবার সরকার নজর দিয়েছে রপ্তানি আয়ের ওপর।

দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুটি খাতের মধ্যে একটি রপ্তানি ও অপরটি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। যে কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সুসংহত রাখতে রপ্তানির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এ খাত থেকে চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৩৫০ কোটি মার্কিন ডলার। আগামী বছরে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের ওপরে। এছাড়া আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এটি ৮ হাজার মার্কিন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

অর্থ বিভাগ মনে করছে এক পণ্যের ওপর নির্ভর করে এখন রপ্তানি আয় পরিচালনা হচ্ছে। যেহেতু বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় রিজার্ভকে আরও সুসংহত করতে হবে। এজন্য রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতে গিয়ে এক পণ্যনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যে কারণে রপ্তানি প্রণোদনা প্রাপ্য অন্যান্য পণ্যের বাজারগুলো আরও সম্প্রসারণ করা হবে।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement