১৯ এপ্রিল, ২০২৪, শুক্রবার

রাবিতে ভাটা পড়েছে শিক্ষকের, ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম

Advertisement

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার হলেও মাত্র ১ হাজার ৫৫ জন শিক্ষক দিয়েই চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। এর মধ্যে আবার উচ্চশিক্ষার জন্য ছুটিতে আছেন অর্ধশতাধিক শিক্ষক। ফলে শিক্ষক সংকটে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। অন্যদিকে শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত মান নিয়ে সংশয়ে শিক্ষার্থীরা।

গত ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সব ধরনের নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। যার ফলে শিক্ষকসহ সব ধরনের নিয়োগ বন্ধ আছে রাবিতে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাইলেও কর্মচারী কিংবা শিক্ষক কোনো পদেই নিয়োগ দিতে পারছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাবির অধিকাংশ বিভাগেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত সন্তোষজনক নয়। গুটিকয়েক শিক্ষক দিয়ে চলছে এসব বিভাগ। যার মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ২০০ শিক্ষার্থী বিপরীতে শিক্ষক মাত্র ৭ জন, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছে ৫ জন, আইন ও ভূমি বিভাগে ২৫০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ২ জন শিক্ষক। তারাও আবার পদমর্যাদায় সহযোগী অধ্যাপক। মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীর বিপরীতে ও চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগে প্রায় ১৫০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে ৭ জন শিক্ষক।

রেজিস্ট্রার দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১ হাজার ৪৯০টি শিক্ষক পদের মধ্যে শূন্য ৪৩৫টি। অবশেষ ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, রাবিতে ১ হাজার ১০৭ জন শিক্ষক আছে। এর মধ্যে শিক্ষা ছুটি, প্রেষণ ও পিআরএলে গিয়েছেন ৭০ জন। অন্যদিকে কর্মকর্তার ৭৯২টি পদের মধ্যে শূন্য ২০০টি, সহায়ক কর্মচারীর ১ হাজার ৪২টি পদের মধ্যে শূন্য ২৫১টি। এ ছাড়া সাধারণ কর্মচারীর ১ হাজার ৯০৯টি পদের মধ্যে শূন্য ১০৯টি।

এদিকে শিক্ষক সংকটে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। শিক্ষকদের অভিযোগ বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে যে সংখ্যক শিক্ষকের প্রয়োজন তা না থাকায় শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত সেবা দিতে পারছেন না তারা। সবাই অতিরিক্ত ক্লাস নিচ্ছেন। যেটা তাদের জন্যও চাপ হয়ে যাচ্ছে, আবার শিক্ষার মানও কমে যাচ্ছে। তাছাড়া শিক্ষকরা নিজেদের জন্য যে গবেষণামূলক কাজ করা দরকার সেটা করতে পারছেন না। ফলে পদোন্নতি হচ্ছে না তাদের।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিভাগে যথেষ্ট শিক্ষক না থাকায় নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা হচ্ছে না। ফলে পিছিয়ে যাচ্ছে তারা। তৈরি হচ্ছে সেশনজট।

আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, আমাদের বিভাগে মাত্র দুজন শিক্ষক। সে ক্ষেত্রে যেখানে একটা কোর্সে ৫০টি ক্লাস করা দরকার, সেখানে আমাদের হচ্ছে ৫-১০টি ক্লাস। এভাবে কম ক্লাস করে এই কোর্সে পরীক্ষা দেওয়া তো অসম্ভব। আবার যেখানে একজন শিক্ষকের ৪-৫টি ক্লাস নেওয়া দরকার সেখানে একজন শিক্ষককে ১০-১৫টি ক্লাস রুটিনে দেওয়া হয়। ফলে শিক্ষকরা সব ক্লাস নিতে চান না। আবার বিভাগের যিনি সভাপতি তিনি দাপ্তরিক কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। আইনের মতো একটা বিষয়ে ক্লাস ছাড়া আমরা শিখব কীভাবে? পরীক্ষায় বসব কীভাবে?”

শিক্ষক সংকটের বিষয় কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল ওয়াদুদের সঙ্গে। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শিক্ষক সংকটে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। আমরা আমাদের ক্লাসগুলো সঠিকভাবে নিতে পারছি না। যার ক্লাস থাকার কথা সপ্তাহে ৬টা তার হয়ে গেছে ৯টা, যার ১টা তার হয়ে গেছে ১৫টা। এতগুলো ক্লাস নিলে শিক্ষকরা যেমন চাপের মধ্যে থাকেন, তেমনি অনেক টপিক বাদ দিয়ে চলে যান। এমনকি ক্লাসের মান কমে যায়। পরীক্ষা নিতেও দেরি হয়ে যায়। ফলে রেজাল্ট দিতেও দেরি হয়। এছাড়া শিক্ষকরা কী সারাদিন ক্লাসই নেবেন। তাহলে তারা রিসার্চ করবেন কখন?

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম গণমাধ্যমকে  বলেন, ইতোমধ্যে শিক্ষক নিয়োগের নতুন নীতিমালা হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন যে নীতিমালা দিয়েছে তার চেয়ে উন্নতমানের নীতিমালা আমরা তৈরি করেছি। কিন্তু সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা নিয়োগ দিতে পারছি না। এ নিষেধাজ্ঞার কারণে অফিসারের অভাব না থাকলেও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (নাইট গার্ড, ড্রাইভার ইত্যাদি) ও শিক্ষকের খুবই ক্ষমতা তৈরি হয়েছে। যে কারণে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কাজে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১০ ও ১৩ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আলাদা ১২টি নোটিশে রাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহানের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা শিথিল করে ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিজের মেয়ে-জামাতাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এছাড়া বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এই সময় আরেকটি চিঠিতে শিক্ষক নিয়োগে নতুন নীতিমালা তৈরি করতে বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫১৬তম সিন্ডিকেট সভার নতুন নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন করে বর্তমান প্রশাসন। কিন্তু এরপরও এখন পর্যন্ত নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়নি মন্ত্রণালয়।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement