২৪ এপ্রিল, ২০২৪, বুধবার

রোগীর পাশাপাশি কুকুরের দেখাও মিলছে হাসপাতালে

Advertisement

হাসপাতালের মেঝেতে সারিবদ্ধ হয়ে শুয়ে আছে রোগী। রোগীদের দেখভালের জন্য সার্বক্ষণিক চিকিৎসক নার্সদের তদারকির কথা থাকলেও হাসপাতালে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। অসুস্থ রোগীদের গা ঘেষে হাসপাতাল কক্ষে ঘুরে বেড়াচ্ছে কুকুর, কখনো বা ঘুমন্ত রোগীদের গায়ে মুখ ঘষছে। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডের এমন একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।

সম্প্রতি নীলফামারীতে শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগ। হাসপাতালে আন্তঃবিভাগে বেড়েছে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ অন্যান্য ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। এতে হাসপাতালে বেডের থেকে অতিরিক্ত রোগীদের অনেকের ঠাঁই হয়েছে মেঝেতে। এরই মাঝে হাসপাতালের ভেতরে ঘুরাফেরা করতে দেখা গেছে কুকুর।

হাসপাতালে ঘুমন্ত রোগীর গায়ে মুখ ঘষছে কুকুর এমনি একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেছেন রুবেল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে উদাসীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

বেসরকারি একটি ব্যাংকে কর্মরত রুবেল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় গণমাধ্যমের । তিনি বলেন, আমি গত ২৮ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ৯টায় হাসপাতালে আমার বোন জামাইকে দেখতে যাই। সেখানে যাওয়ার পর চারিদিকে কুকুর ঘুরতে দেখি। প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও পরে যখন মেঝতে শুয়ে থাকা রোগী ও স্বজনদের মুখে কুকুরকে মুখ ঘষতে দেখি তখন বিষয়টি খারাপ লাগে। পরে মুঠোফোনে ছবি তুলি। এমন অবস্থা যদি সরকারি কোনো হাসপাতালের হয় তাহলে সেবার মান বা দায়িত্বরত ব্যক্তিরা প্রশ্নবিদ্ধ হবেই।

রুবেল ইসলামের সেই পোস্টটির স্ক্রিনশট নিয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের নিজের টাইমলাইনে পোস্ট করছে বিভিন্ন ক্যাপশনে। স্থানীয় সাংবাদিক আল ফারুক পারভেজ উজ্জ্বল পোস্ট করেছেন সেই স্ক্রিনশটটি। সেখানে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। 

তফিউজ্জামান জুয়েল নামে একজন লিখেছেন, এটা কোনো কথা, মেডিকেলের দারোয়ান নাই, দায়িত্ব পালনে কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা। দেখার যেন কেউ নাই, আশা করি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নেবেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২৫০ শয্যার নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালটিতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। এমন অবস্থায় বেডের তুলনায় রোগী বেশি হওয়ায় বেশিরভাগ রোগীর ঠাঁই হয়েছে মেঝেতে ও বাইরের বারান্দায়। দিন দিন রোগীর সংখ্যা বাড়লেও হাসপাতালের পরিবেশ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে উদাসীন কর্তৃপক্ষ এমন অভিযোগ রোগী ও স্বজনদের। সেবার মান খারাপ, জনবল সংকটসহ নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে। 

একাধিক রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালটির টয়লেট বা মেঝে সবসময় অপরিষ্কার থাকে। হুটহাট কুকুর ঢুকে যায়। পরিচ্ছন্ন কর্মীদের দেখাই মেলে না। তাছাড়া খাবার পানি ও কাপড় ধুতেও নানা সমস্যায় পড়তে হয়। কর্তৃপক্ষ এসব সমস্যা দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। হাসপাতালের এমন পরিবেশে সুস্থ কেউ থাকলেও অসুস্থ হয়ে যাবে। 

সোহানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, হাসপাতালটি আমিও এক রাত ছিলাম আমার আত্মীয়ের অসুস্থতায়। এমন পরিবেশে সুস্থ কেউ থাকলেও অসুস্থ হয়ে যাবে। 

মারুফ হোসেন নামে এক সমাজকর্মী গণমাধ্যমকে বলেন, হাসপাতাল যেহেতু রোগ নিরাময় কেন্দ্র, সেহেতু সেখানের পরিবেশ অবশ্যই ভালো থাকা জরুরি। তবে নীলফামারীর জেনারেল হাসপাতালের চিত্রটি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এখানে কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাব রয়েছে সেই সঙ্গে গার্ড বা রাত্রীকালীন যারা দায়িত্বে থাকেন তাদেরও অবহেলা রয়েছে। একজন সমাজকর্মী হিসেবে এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আবু আল হাজ্জাজ গণমাধ্যমকে বলেন, ছবিগুলো কয়েকদিন আগের। ছবিগুলো সরানোর জন্য কাজ করছি। আর আগের থেকে হাসপাতালের পরিবেশ এখন অনেকটা ভালো হয়েছ। অন্যান্য যা সমস্যা আছে সেগুলো সমাধানে কাজ করছি।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. জাহাঙ্গীর কবীর  গণমাধ্যমকে বলেন, এ বিষয়ে আমি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে জানাব। এমনটি যদি হয় তাহলে ব্যবস্থা নিতে বলব।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement