২৪ এপ্রিল, ২০২৪, বুধবার

লোডশেডিংয়ের কারণে যশোর বিসিকে উৎপাদন কমেছে ৩০ শতাংশ

Advertisement

উচ্চ তাপে পুরোনো লোহা গলিয়ে নতুন কৃষি যন্ত্রাংশ তৈরি করে দেশের কৃষি খাতে বিশেষ অবদান রাখছে নাঈমুল মেটাল নামের একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) যশোর শিল্পনগরে অবস্থিত এই কারখানার ৭০ জন শ্রমিক মিলে সেচপাম্প, গরু-মহিষের খড় কাটার যন্ত্র ও ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের যন্ত্রাংশ তৈরি করেন। এসব যন্ত্র খুলনা, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে ৮ ঘণ্টার কাজ এখন ১৩ ঘণ্টায় গড়িয়ে যাচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

এই চিত্র শুধু নাঈমুল মেটালের নয়, যশোর বিসিক শিল্পনগরের ২৯২টি শিল্পকারখানাতেই লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে বিশেষ করে অটোমোবাইল, ময়দা, রুটি, বিস্কুট ও মিষ্টান্ন তৈরির অন্তত ৫০টি কারখানাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব কারখানায় উৎপাদন ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে খরচ বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। বিভিন্ন কারখানার স্বত্বাধিকারী ও বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

নাঈমুল মেটালের স্বত্বাধিকারী সিরাজ আলী মোল্লা বলেন, ‘যশোরের শিল্পকারখানায় পাইপলাইনে গ্যাসের সরবরাহ নেই। বিদ্যুতের ওপরই এখানকার শিল্পকারখানার উৎপাদন নির্ভরশীল। বিদ্যুৎ ব্যবহারে উৎপাদন খরচ বেশি হলেও আমরা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু চলমান লোডশেডিং আমাদের উৎপাদন ব্যাহত করে দিচ্ছে। উচ্চ তাপে পুরোনো লোহা গলাতে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে। ঘণ্টায় পাঁচ হাজার টাকার বিদ্যুৎ খরচ হয়। আড়াই ঘণ্টার মধ্যে ১০ মিনিটের জন্যও বিদ্যুৎ চলে গেলেই লোহা ঠান্ডা হয়ে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়। ফলে লোহা নতুন করে গলাতে সমপরিমাণ টাকার বিদ্যুৎ খরচ হয়। এখন দিনের বেলায় প্রতিদিনই দু–তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। এদিকে বিকেল পাঁচটার পরে বিদ্যুৎ সরবরাহ যখন স্বাভাবিক হয়, তখন প্রতি ইউনিটের দাম ৬ থেকে এক লাফে ১৮ টাকা হয়ে যায়। শ্রমিক খরচও
বেড়ে যাচ্ছে।’

“যশোর জেলায় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ৬২ মেগাওয়াট। কিন্তু দুপুরে অর্ধেকের কম সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। এ জন্য যশোরে আরও ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি লেখা হয়েছে।”
মো. ইখতিয়ার উদ্দীন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, ওজোপাডিকো, যশোর

বিসিক শিল্পনগর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এখানে ২৯২টি শিল্পকারখানা রয়েছে। এর মধ্যে খাদ্য ও খাদ্যজাত পণ্যের ৩৮টি, বস্ত্র ও বস্ত্রজাত পণ্যের ৭টি, কাঠ ও কাঠের আসবাব তৈরির ২৫টি, পাট ও পাটজাত পণ্যের ২টি, ছাপাখানা ও প্যাকেজিংয়ের ৫টি, চামড়া ও রাবারজাত পণ্যের ১টি, ওষুধ ও রং তৈরির ৭টি এবং হালকা প্রকৌশল পণ্যের ২২টি কারখানা রয়েছে। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে এসব প্রতিষ্ঠানে ৫৯০ কোটি ৯৭ লাখ টাকার পণ্য উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে বিদেশে রপ্তানি হয়েছে ১৭১ কোটি ৩২ লাখ টাকার পণ্য।

রেসকো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী তানভীরুল ইসলাম বলেন, ‘পাউরুটি উৎপাদনের জন্য ময়দার খামির বানিয়ে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিটের মধ্যে ওভেনে দিতে হয়। একবার ওভেন গরম হতে এক ঘণ্টা সময় লাগে। খামির তৈরির পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওভেনে বসাতে না পারলে তা নষ্ট হয়ে যায়। লোডশেডিং হওয়ায় প্রতিদিন ২০–৩০ শতাংশ উৎপাদন কম হয়। দিন–রাতে দুই শিফটে ২৪ ঘণ্টা কারখানায় কাজ করতে হয়। এর মধ্যে দিনে চার–পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। শিডিউলের বাইরেও লোডশেডিং হচ্ছে।’
মদিনা মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপক সাব্বির হোসেন বলেন, ‘আমাদের কারখানায় বাইসাইকেলের চাকার রিম তৈরি হয়। এই রিম সারা দেশে পাঠাই। রিমে নিখিলের প্রলেপ দেওয়ার জন্য ইলেক্ট্রো প্লেট তৈরি করতে হয়। প্রতিবার ৯০টি প্লেট তৈরি করে টানা আধা ঘণ্টা সময় ধরে কাজ করতে হয়। এ সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকলে ৯০টি প্লেটই নষ্ট হয়ে যায়।’

যশোর বিসিক শিল্পনগরের কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, ‘বিসিকের জন্য লোডশেডিংয়ের বিশেষ শিডিউল অনুসরণ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) যশোরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনি প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো তা বাস্তবায়িত হয়নি।’

ওজোপাডিকো যশোরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ইখতিয়ার উদ্দীন বলেন, ‘যশোর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এই জেলায় বিমান, স্থল ও নৌবন্দর ছাড়াও বিসিক, ক্যান্টনমেন্ট, বিজিবিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। এ জেলায় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ৬২ মেগাওয়াট। কিন্তু দুপুরে অর্ধেকের কম সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। যে কারণে শিডিউল ঠিক রাখা যাচ্ছে না। এ জন্য যশোরে বিদ্যুৎ বরাদ্দ আরও অন্তত ২০ মেগাওয়াট বাড়ানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি লেখা হয়েছে।’

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement