২৫ এপ্রিল, ২০২৪, বৃহস্পতিবার

আগামী মাসে খুলবে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, ছুটি বাড়ছে স্কুলের

Advertisement

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান সাধারণ ছুটি আরেক দফা বাড়তে পারে। করোনা সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের বেশি এবং সংশ্লিষ্টদের টিকা দেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় এমনই চিন্তাভাবনা চলছে। তবে বেশির ভাগ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেপ্টেম্বর মাসেই সচল হচ্ছে। শুরু হবে বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলোতে বিভিন্ন বর্ষ ও সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা। এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের সংস্পর্শে যাওয়ার বিষয়টি উন্মুক্ত করার চিন্তা চলছে। পাশাপাশি নভেম্বর ও ডিসেম্বরে নির্ধারিত এই দুটি পরীক্ষা (এসএসসি-এইচএসসি) সরাসরি নেওয়ার সিদ্ধান্তও প্রায় চূড়ান্ত।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৮ মাস পর দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দ্বার উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে খুলে দেওয়া হবে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়। শুরু হবে সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা। তবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের ছুটি আরও বাড়ছে।

আগামী নভেম্বরে এসএসসি, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি এইচএসসি পরীক্ষা সরাসরি নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

 ইতোমধ্যে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজ। এ মাসের শেষে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ঘোষণা দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলেও শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।

শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টিকা দেওয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও টিকার আওতায় এসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। সেজন্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ব্যাপারে সরকার ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তবে সংক্রমণ পাঁচ শতাংশের নিচে নেমে আসা পর্যন্ত স্কুল পর্যায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। ফলে স্কুলের ছুটি আরেক দফা বাড়ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, সচিব কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা দিয়েছেন।‌ যেহেতু উচ্চ শিক্ষা স্তরের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অধিকাংশ শিক্ষার্থী টিকার আওতায় এসেছে সেজন্য এই স্তরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হতে পারে।

তবে করোনা সংক্রমণের হার পাঁচ শতাংশের নিচে বা সন্তোষজনক পর্যায়ে না এলে স্কুলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, সংক্রমণ প্রত্যাশিত হারে নেমে আসতে বা টিকা দেওয়ার কাজ শেষ করতে আর হয়তো ৫-৬ সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। ওই পর্যন্ত অপেক্ষা হয়তো কষ্টকর হবে না।

জানা গেছে, প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে আটকে থাকা স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত পরীক্ষাগুলো আগে শেষ করার পরিকল্পনার রয়েছে সরকারের। এরপর আটকে থাকা স্নাতক প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষার দিকে এগোবে। এরপর কলেজ ও সবশেষে বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

সূত্র জানায়, সরকার উচ্চতর পর্যায় থেকে ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। টিকা দেওয়া শেষ হলে সেপ্টেম্বরের শেষে বা অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার চিন্তাভাবনা রয়েছে। ক্লাস শুরুর অন্তত এক সপ্তাহ আগে আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়া হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ও বাস-মাইক্রোবাস ইত্যাদি চলাচলের উপযোগী করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সদস্য জানান, অন্তত দুই সপ্তাহ আগে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ঘোষণা আসবে। কেননা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসিত এবং নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিলেও এত বড় ঘোষণা দেওয়ার আগে সরকারের সঙ্গে উপাচার্যদের বৈঠক হবে। সেখানেই বিস্তারিত রোডম্যাপ হবে।

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সাত কলেজে ১ সেপ্টেম্বর থেকে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ৮ সেপ্টেম্বর থেকে মাস্টার্সের স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছে। এভাবে অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনোটি পরীক্ষা নিচ্ছে, আবার কোনোটি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো দেশে সংক্রমণ পাঁচ শতাংশে নেমে এলে সেখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু সোমবারও দেশে বর্তমানে সংক্রমণের হার ছিল সাড়ে ১৫ শতাংশ, আর করোনায় মারা গেছেন ১১৭ জন।

অন্যদিকে, জুলাই থেকে টিকা কার্যক্রম জোরদার হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী টিকা কর্মসূচি দ্রুত এগিয়েছে। ৭ আগস্ট দেওয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তিন লাখ ৬৩ হাজার ২২২ শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। তাদের মধ্যে দুই লাখ ৭৮ হাজার ৪২৬ জন টিকা নিয়েছেন। টিকা নেওয়ার বাকি রয়েছেন প্রায় ৮৪ হাজার। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধিত ৩৪ হাজারের বেশি শিক্ষকের মধ্যে ৩০ হাজার টিকা পেয়েছেন। আর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের এক লাখ ৭৯ হাজার ২৬১ শিক্ষার্থী টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। যাদের মধ্যে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ৭৯ হাজার ৯১৪ জন। আর উভয় ডোজ পেয়েছেন ছয় হাজার ৭২ জন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকের ৮৪ ভাগ শিক্ষক-কর্মচারী টিকার আওতায় এসেছেন। দেশে প্রাথমিকের তিন লাখ ৬৫ হাজার ৮৮৩ শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত। এর মধ্যে ২০ আগস্ট পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন তিন লাখ তিন হাজার ৩১৯ জন, যা শতকরা ৮৩ দশমিক ৭২ শতাংশ।

ডিপিইর তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের (আইএমডি) তথ্য অনুযায়ী, এখনও টিকার বাইরে আছেন ৬২ হাজার ৫৬৪ জন। তাদের মধ্যে অনেকেই নারী শিক্ষক। তাদের মধ্যে রয়েছেন অন্তঃসত্ত্বা, বুকের দুধ পান করাচ্ছেন এমন বা জটিল রোগে আক্রান্ত কিংবা নিবন্ধন করেও টিকা নেওয়ার তারিখ পাননি। তবে যারা এখনও বাকি রয়েছেন, তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে টিকা নিতে পারবেন।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement