২৬ এপ্রিল, ২০২৪, শুক্রবার

শ্রীলঙ্কা হয়ে পণ্য আমদানি–রপ্তানিতে ভোগান্তির শঙ্কা, প্রভাব দেশে!

Advertisement

শ্রীলঙ্কার বন্দর কার্যক্রমে সংকটের প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশেও। চলমান সহিংসতার জের ধরে দেশটির কলম্বো বন্দরের কার্যক্রমে দুই দিন ধরে অচলাবস্থা দেখা দেয়। গতকাল বুধবার বিকেল চারটা থেকে সীমিত পরিসরে কলম্বো বন্দরের কার্যক্রম শুরু হলেও পুরোদমে সচল হতে কয়েক দিন লেগে যেতে পারে। এতে দেশটির বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশের আমদানি–রপ্তানি পণ্য পরিবহনে নতুন করে ভোগান্তির মুখে পড়ার শঙ্কায় আছেন ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ৪০ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দর হয়ে ইউরোপ–আমেরিকায় যায়। একইভাবে ইউরোপ-আমেরিকা ও ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের বড় অংশ কলম্বো বন্দর হয়ে চট্টগ্রামে আনা হয়। শ্রীলঙ্কার চলমান সহিংসতার জের ধরে বন্দরে কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার প্রভাবে পণ্য আমদানিতে অপেক্ষার সময় বাড়বে। আবার চট্টগ্রাম থেকে শ্রীলঙ্কা হয়ে যাওয়া রপ্তানি পণ্য বিদেশি ক্রেতাদের কাছে পৌঁছাতেও বাড়তি সময় লাগার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কলম্বো বন্দরের এক টার্মিনাল থেকে আরেক টার্মিনালে কনটেইনার পরিবহন পরিষেবা শুরু হয়নি। আশা করছি, দু–এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে। না হলে সমস্যায় পড়তে হবে।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কনটেইনারবাহী বড় জাহাজ চলাচল করতে পারে না। এ জন্য চট্টগ্রাম থেকে ছোট জাহাজে করে শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার বন্দরগুলোতে কনটেইনার নেওয়া হয়। এরপর সেসব বন্দর থেকে বড় জাহাজে করে ইউরোপ–আমেরিকার দেশগুলোতে কনটেইনারে পণ্য নেওয়া হয়। সম্প্রতি চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপে সরাসরি ছোট কনটেইনার জাহাজ চলাচল শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এ কারণে শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার বন্দরের ওপর নির্ভরশীল থাকতেই হচ্ছে।

তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শ্রীলঙ্কার চলমান সমস্যার কারণে পণ্য আমদানি–রপ্তানিতে সমস্যা হচ্ছে। রপ্তানি পণ্য যেহেতু আমরা চট্টগ্রামেই বিদেশি ক্রেতাদের হাতে তুলে দিচ্ছি, সে ক্ষেত্রে হয়তো বড় সমস্যা হবে না। এরপরও উন্নত সেবা দিতে সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কার পরিবর্তে ইউরোপ–আমেরিকায় সরাসরি ছোট জাহাজে সেবার আওতা বাড়ানো দরকার। এতে পোশাক খাত প্রতিযোগী হবে।

শ্রীলঙ্কার বন্দরে এবার অচলাবস্থা হয়েছে দেশটিতে সহিংস ঘটনার পর। অর্থনৈতিক সংকটের জের ধরে শ্রীলঙ্কায় সরকার পতনের দাবিতে এক মাসের বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ চলছে। গত শুক্রবার থেকে শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। এ আন্দোলন গত সোমবার সহিংস রূপ নেয়। ক্ষমতাসীন দল ও সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভের লাগাম টানতে জারি করা হয় কারফিউ। অচলাবস্থা দেখা দেয় বন্দরে। এর আগেও বন্দরটিতে জাহাজজটে বাংলাদেশের আমদানি–রপ্তানি পণ্য পরিবহন কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

গত সোমবার শ্রীলঙ্কায় সহিংস ঘটনার পর সন্ধ্যা থেকে কলম্বো বন্দরের দুটি টার্মিনালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। শ্রীলঙ্কার বন্দরগুলোতে চলাচলকারী জাহাজগুলোর প্রতিনিধিদের সংগঠন ‘সিলন অ্যাসোসিয়েশন অব শিপিং এজেন্টস’–এর এক চিঠিতে বিষয়টি তুলে ধরা হয়। সংগঠনটির সভাপতি শেহারা দি সিলভা মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কা বন্দর কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, সোমবার সন্ধ্যা থেকে কলম্বো বন্দরের

জয়া কনটেইনার টার্মিনাল ও ইস্ট কনটেইনার টার্মিনালের কাজ বন্ধ রয়েছে। জাহাজ চলাচলও বন্ধ। এ কারণে কাজ শেষ করার পরও বন্দর ছেড়ে যেতে পারছে না জাহাজ। আবার সাগরে অপেক্ষায় থাকা জাহাজ জেটিতে ভেড়ানো যাচ্ছে না। এতে আমদানি–রপ্তানি ও ট্রান্সশিপমেন্ট কার্যক্রমে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ ধরনের ঘটনা শ্রীলঙ্কার বন্দর কর্তৃপক্ষ, কলম্বো ইন্টারন্যাশনাল কনটেইনার টার্মিনাল, সাউথ এশিয়ান গেটওয়ে টার্মিনালের রাজস্ব আদায়ে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এই সংকটকালে ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা করে বন্দর কর্মীদের ফিরিয়ে এনে পরিচালন কার্যক্রম সচল রাখার আহ্বান জানানো হয়।

অবশ্য শ্রীলঙ্কার বন্দর কার্যক্রমে যখন অচলাবস্থা, তখন সেখানকার বন্দর কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার এক নোটিশে জানায়, কোনো বাধা ছাড়াই শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরের সব কার্যক্রম চলছে। শ্রীলঙ্কার বন্দর কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে দেওয়া ওই নোটিশে বন্দরের চেয়ারম্যান প্রশান্ত জয়মান্না জানান, বিদ্যমান অর্থনৈতিক দুর্দশা সম্পর্কে বন্দরকর্মীরা সচেতন রয়েছেন। তাঁরা আগের চেয়ে আরও বেশি নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় শিপিং কোম্পানি মেডিটারিয়েন শিপিং কোম্পানির ছয়টি কনটেইনার জাহাজ চট্টগ্রাম–শ্রীলঙ্কা পথে চলাচল করছে। কোম্পানিটির হেড অব অপারেশন অ্যান্ড লজিস্টিকস আজমীর হোসাইন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কারফিউতে বন্দরকর্মীরা না আসায় কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছিল। আশা করি, সমস্যা দ্রুত কেটে যাবে। বন্দরটিতে চট্টগ্রামমুখী তাদের আট হাজার একক কনটেইনারে আমদানি পণ্য দ্রুত আনার চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।

চট্টগ্রাম–শ্রীলঙ্কা পথে বাংলাদেশের পতাকাবাহী চারটি কনটেইনার জাহাজ চলাচল করছে। কর্ণফুলী গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এইচআর লাইনস এই চারটি জাহাজ পরিচালনা করছে। চারটি জাহাজের দুটি চট্টগ্রাম থেকে রপ্তানি কনটেইনার নিয়ে শ্রীলঙ্কার বন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে ১৩ ও ১৬ মে। জানতে চাইলে কর্ণফুলী গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক আনিস–উদ–দৌলা প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার বিকেল চারটায় সীমিত পরিসরে কলম্বো বন্দরে কাজ শুরু হয়েছে বলে জেনেছি। তবে এক টার্মিনাল থেকে আরেক টার্মিনালে কনটেইনার পরিবহন পরিষেবা শুরু হয়নি। আশা করছি, দুই–এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে। না হলে সমস্যায় পড়তে হবে।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement