২৮ মার্চ, ২০২৪, বৃহস্পতিবার

সহজ কৌশলে পড়া মনে রাখুন 

Advertisement

বই পড়া কে শখ হিসেবে নেয় এমন মানুষ পৃথিবীতে অনেক রয়েছে। কিন্তু স্কুল কিংবা কলেজের বই পড়া আমাদের কাছে আলাদা একটা বিষয় হিসেবে গণ্য হয়। একটা গল্প কিংবা উপন্যাস আমরা যতটা আগ্রহ নিয়ে পড়ি, টেক্সটবুক পড়তে গেলে আমাদের সেই আগ্রহটা কোথায় যেন পালিয়ে যায়।

আমরা ভাবতে বসি, “পড়া কখন শেষ হবে” এই কথাটা। সুতরাং কম সময়ে সিলেবাস কাভার করার ব্যাপারটা আমাদের মাথার ভেতরে গেঁথেই যায়।

খুব ছোট একটা উদাহরণ দেওয়া যাক, আমরা যখন একটা মুভি কিংবা উপন্যাস একবার পড়ি তখন তার ঘটনা, কাহিনী এমনকি সংলাপসহ আমাদের মনে থাকে। কিন্তু টেক্সটের অনেক শব্দ আমরা মনের অজান্তেই অনেক সময় ভুলে যাই।

তাই বুঝতেই পারছেন, এটা একটা মাইন্ড গেম। মাইন্ডটাকে যদি যথাযথ উপায়ে আমরা ট্রিট করতে পারি তাহলে উপন্যাসের মত করে টেক্সটটাও মনে রাখা সম্ভব। পড়া সহজে মনে রাখা কিংবা কম সময়ে বেশি পড়ার মত কাজটাই হচ্ছে স্মার্ট স্টাডি।

তাহলে, দেরী না করে চলুন দেখে নেই কিভাবে কম সময়ে নিজের স্টাডি পারফেক্টভাবে কমপ্লিট করতে পারবেন।

স্টেপ ১ 

প্রথম স্টেপে নজর রাখুন আপনার ক্লাসে। কারণ ক্লাস থেকেই শেখার শুরু। ক্লাসে টিচারের লেকচারের একটা শর্টনোট তৈরী করুন ক্লাসেই। তবে সেই শর্টনোট মানে পুরো লেকচার লেখা নয়। কারণ ক্লাসে আপনার প্রধান কাজ শিক্ষকের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা। আর এই কাজটি করার সময় কথাগুলো শেখার জন্যে নয়, জানার জন্যে শুনুন।

স্টেপ ২

বাসায় আসার পরপরই সে বিষয়গুলো নিয়ে স্টাডি করুন। শুরুতে বইয়ের সাহায্য নিন। আর বই পড়ার সময় একটা হাইলাইটার কিংবা লাল রঙের কালি সাথে রাখুন। হাইলাইট করার সময় পুরো প্যারা আন্ডারলাইন করবেন না। কিছু কিওয়ার্ড আন্ডারলাইন করুন।

প্রশ্নোত্তরকে কয়েকটি প্যারায় ভাগ করুন। প্রতিটি প্যারার একটি টাইটেল দিন। এই টাইটেলে সাব-টাইটেল হিসেবে লেখুন কিছু কিওয়ার্ড কিংবা শর্ট কাট। কিওয়ার্ডগুলো এমন হতে হবে যেন তা প্রশ্ন সম্পর্কে আপনাকে একটা স্পষ্ট ধারণা দেয়।

স্টেপ ৩

এখন পড়ার ধরণ নির্ধারণ করুন। অর্থ্যাৎ আপনি কিভাবে পড়বেন? একটা উদাহরণ দিচ্ছি। ধরুন আপনাকে দুইটা প্রশ্ন করা হলো,

১) আপনাকে প্রশ্ন করা হলো হিউম্যান বডি কিভাবে কাজ করে।

২) মানবদেহের কোন হাড়ের নাম।

১নং প্রশ্ন আপনি গল্প হিসেবে পড়ুন। কঠিন শব্দ থাকলে তা তৎক্ষণাৎ মুখস্ত করার চেষ্টা করবেন না। গল্প হিসেবে পড়ুন পুরোটা।

এবার আসি, ফিক্সড উত্তরে। ধরুণ হাড়টির নাম হিউমেরাস। হিউমার আর হিউমেরাস কিন্তু অনেকটাই একই উচ্চারণ। একটার রেফারেন্সে আরেকটা মনে রাখার চেষ্টা করুন। আবার গ্রুপ অফ ওয়ার্ড ছন্দ দিয়ে মনে রাখা সহজ। তাই কোন বিষয় কিভাবে মনে রাখবেন এটা নির্ভর করছে আপনি কি পড়ছেন তার উপর।

স্টেপ ৪

প্যাসিভ স্টাডি থেকে অ্যাক্টিভ স্টাডি আমাদের মাথায় বেশি গেঁথে যায়। মানে ধরুণ, আপনি বাংলাদেশের মানচিত্রের অবস্থান পড়বেন। পুরো মুখস্ত করার আগে বাংলাদেশের মানচিত্র যদি একবার দেখে ডেটাগুলো মিলিয়ে নেন তাহলে সহজে তা মনে থাকবে।

কারণ দেখা এবং শোনা আমাদের মনে থাকে বেশি। এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলা জরুরী, গল্প কিংবা উপন্যাস আমাদের মনে থাকে বেশি কারণ আমরা বর্ণনা পড়ে একটা চিত্রকল্প মাথায় নিয়ে ফেলি।

যাই হোক, অ্যাক্টিভ স্ট্যাডি এখন অনেক সহজ হয়ে পড়েছে। যেকোন টপিকে ইউটিউবে সার্চ করলেই আমরা বাস্তবমুখী একটা শিক্ষা পেতে পারি। 

স্টেপ ৫

লবডেল তার গবেষণায় বলেন, একটা মানুষের একটা বিষয়ে মনোযোগ সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট ধরে রাখতে পারে। তারপর তার মনোযোগ ড্রপ করতে থাকে। তার মানে, এক বিষয়ে আপনার ৩০ মিনিটের বেশি টানা পড়া যাবে না। তাহলে উপায়? ব্রেক নিন কিছুক্ষণ। তারপর আবার শুরু করুন।

স্টেপ ৬

পড়ার পরিবেশ নিয়ে আমরা অনেক কথা বলি। কিন্তু পরিবেশটা কেমন হওয়া উচিৎ? যেখানে পড়ছেন সেখানে পর্যাপ্ত আলো থাকা প্রয়োজন। কারণ গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, হালকা আলো থেকে পর্যাপ্ত আলো পড়া মুখস্ত হবার ক্যাপাসিটি ৪০% বাড়িয়ে দেয়। আমেরিকার একটি দল এই গবেষণা করে ২০ জনের উপরে। তাদেরকে চার অক্ষরের কিছু শব্দ মুখস্থ করতে ১০ মিনিট সময় দেওয়া হয়। দেখা যায়, পর্যাপ্ত আলোতে যারা পড়েছিলো তাদের মুখস্থ হবার পার্সেন্টেজ প্রায় অর্ধেক বেশি।

এছাড়াও পরিবেশটাকে নিজের মত করে নিন। আপনি একা পড়তে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন নাকি গ্রুপ স্টাডি করবেন তা পুরোপুরি আপনার উপরে। আর পড়ার ঘরে পড়ার পরিবেশ রাখতে আপনার ডেকোরেশন কেমন হবে তাও আপনার একান্ত নিজের উপর।

তবে মেডিটেশন সাউন্ড অনেক কাজে দেয় মনোযোগ ধরে রাখতে। ইউটিউবে সার্চ করলে অনেক ভালো মেডিটেশন সাউন্ড পেয়ে যাবেন।

স্টেপ ৭

পুরো পড়া শেষে, মনে করার চেষ্টা করুন কি কি পড়েছেন। এক্ষেত্রে শুরুতে করা নোটটি আপনার অনেক কাজে দিবে। এখানে বলে রাখা ভালো, রিমাইন্ড করার অভ্যাস আপনার স্মরণশক্তিকেও কিন্তু বৃদ্ধি করে।

আর কঠিন শব্দগুলো স্টিকিনোট আকারে পড়ার টেবিলের একপাশে দেয়ালে লাগিয়ে রাখতে পারেন। ফলে চোখের সামনে থাকতে থাকতে তা আপনার পরিচিত ও মুখস্থ হয়ে যাবে। কথায় বলে, “Out of sight, out of mind.”

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement