২৬ এপ্রিল, ২০২৪, শুক্রবার

সি-মোরগ: ৩য় পর্ব

Advertisement

লোকটির সমস্ত ঘটনা শুনে সি-মোরগ আশ্চর্য হয়ে যায়। ভাবতে পারছিলো না কী করবে সে। মনে মনে ভাবলো যদি বাদশার দরবারে না যায় তাহলে বাদশা মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা লোকটাকে ধরে তার গর্দান নিয়ে নেবে।

আর যদি যায় তাহলে তার নিজের বাচ্চা দুটো ক্ষুধায় মারা যাবে। অনেক ভেবেচিন্তে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলো লোকটার সাথেই যাবে বাদশার দরবারে। লোকটা নীচে পায়ে হেঁটে পা বাড়ালো বাদশার দরবারে আর কান্নারত সি-মোরগ শূন্যেই বাদশার প্রাসাদের দিকে চললো।

কিছুদূর যাবার পর দেখা হয়ে গেল বাদশার ছেলে মানে রাজপুত্রের সঙ্গে। রাজপুত্র বা শাহজাদা যাচ্ছিলো শিকার করতে। লোকটাকে দেখে শাহজাদা বললো: কোথায় যাচ্ছো। লোকটা রাজপুত্রের প্রশ্নের জবাবে তার জীবনকাহিনী শুনিয়ে দিয়ে বললো: অনেক কষ্টে ওই সি-মোরগকে রাজি করিয়েছি প্রাসাদে যেতে। কিন্তু সমস্যা হলো সি-মোরগের দুটি বাচ্চা আছে। সে যদি এখন প্রাসাদে যায় বাচ্চা দুটো ক্ষুধায় মারা যাবে। সে জন্য সী-মোরগ ভীষণ উদ্বিগ্ন। বাচ্চাদের জন্য দুশ্চিন্তায় কাঁদছে সে। শাহজাদা সি-মোরগের চোখে অশ্রু দেখে কষ্ট পেলো। লোকটাকে বললো: তুমি সি-মোরগকে ছেড়ে দাও! রাজদরবারে গিয়ে বাদশাকে বলবে যে আমি সি-মোরগকে নিয়ে আসছিলাম কিন্তু শাহজাদার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তার আদেশে আমি পাখিটাকে ছেড়ে দিয়েছি যেন সে বাসায় ফিরে গিয়ে বাচ্চা দুটোকে খাবার দেয়।

সি-মোরগ শাহজাদার নম্রতায় খুশি হয়ে তাকে তার দুটো পালক উপহার দিয়ে বললো: যখনই কোনো সমস্যায় পড়বে এবং সমাধানের কোনো কূলকিনারা পাবে না তখনই এই পালক আগুন দিয়ে পুড়বে আর তখনই আমি এসে হাজির হয়ে যাবো। এই বলে পাখি উড়ে চলে গেল তার বাচ্চাদের কাছে। শাহজাদা তার ঘোড়ায় চড়ে গেল শিকারের সন্ধানে আর লোকটা গেল রাজদরবারের দিকে। রাজদরবারে খালি হাতে যাওয়ায় বাদশাহ ভীষণ ক্ষেপে গেল। লোকটা বাদশাকে পুরো ঘটনা বর্ণনা করার পর বাদশা এবার ক্ষেপলো শাহজাদার ওপর। বললো: এই ছেলে দেখতে পারে না তার বাবার কাছে একটা সি-মোরগ থাকুক। ওর হাতে বাদশাহির ভার ন্যস্ত করলে কী করবে,কে জানে! শিকার থেকে ফিরে আসুক! সোজা জল্লাদের হাতে তুলে দিয়ে বলবো গর্দান কেটে ফেলতে।

দুদিন পর শাহজাদা ঠিকই ফিরলো শিকার থেকে। সোজা বাবার কাছে গিয়ে হাজির হলো। বাদশাহ সরাসরি তাকে প্রশ্ন করলো: সী-মোরগকে ছেড়ে দিলে কেন? ওই পাখির পরিবর্তে এখন তোমাকে হত্যা করা হবে।

ছেলে বললো: তুমি আমার পিতা। তোমার যা খুশি করবার অধিকার আছে। তবে আমাকে একটু সময় দাও, মরবার আগে দুই রাকআত নফল নামাজ পড়ে নিই।

বাদশাহ অনুমতি দিলো এবং শাহজাদা দ্রুত চলে গেল প্রাসাদের ছাদের ওপর। সেখানে সে দু রাকাত নামাজ পড়লো। সালাম ফিরিয়েই সে সী-মোরগের দেওয়া একটি পালকে আগুন ধরাতেই সি-মোরগ উড়ে এসে হাজির হয়ে গেল। শাহজাদা বললো: বাদশাহ মানে আমার বাবা চাচ্ছে আমাকে হত্যা করতে। কারণটা হলো তোমাকে মুক্তি দেওয়া। সি-মোরগ এ কথা শুনেই তার পাখা বিস্তার করে দিলো। শাহজাদা পিঠে সওয়ার হলো এবং পাখি উড়ে গিয়ে সোজা পার্শ্ববর্তী শহরের একটি বাড়ির দরোজার পাশে পৌঁছে তাকে নামিয়ে দিলো।

শাহজাদা এগিয়ে গেল ঘরের দিকে। দেখলো এক বুড়ি বসে আছে ভেতরে। বুড়িকে বললো: আমি এখানে নতুন এসেছি,অপরিচিত মানুষ, কাউকে চিনি না জানি না। কোথায় যাবো বুঝতে পারছি না। আপনার ঘরে কি এই রাতটা কাটানোর সুযোগ হবে? সকালেই চলে যাবো।

বুড়ি বললো: না, জায়গা নেই। আমার ঘরটা পাখির বাসার মতোই ছোট। কটা দুম্বার বাচ্চা গরু আর গাধার বাচ্চাও আছে।

শাহজাদা কটা সোনার কয়েন বুড়ির হাতে দিতেই বুড়ির অবস্থা পাল্টে গেল। বললো: আমার ঘরে বাদশার এক বাহিনীর জায়গা হবে। আমি একা বৈ ত নই। শাহজাদা গেল বুড়ির ঘরের ভেতর। সেখানে কয়েকদিন কাটালো। একদিন গেল শহরের ভেতরের কী খবরাখবর,জানতে। বুড়িকে জিজ্ঞেস করলো: তোমাদের শহরে কি দুজন বাদশাহ?সি-মোরগ: ৩য় পর্ব

বুড়ি বলল: হ্যাঁ! বাদশাহ এবং শাহজাদি দুজনই এই শহরের নিরীহ লোকজনের শাসক। আমরা হলাম বেচারা জনগণ-খাজনা দিতে দিতেই জীবন শেষ। একবার খাজনা দিতে হয় বাদশাহকে আরেকবার দেওয়া লাগে তার কন্যাকে। শাহজাদা একথা শুনে বলল: হে মা! তুমি তো অনেক করেছো,এবার আমাকে নিয়ে চলো ওই শাহজাদির কাছে। বুড়ি বলল: নিয়ে যেতে পারি। তবে বাদবাকি তুমি সামলাবে। শাহজাদি যদি তোমাকে পছন্দ করে তাহলে তো আর কথা নেই। কিন্তু যদি তার পিতা মানে বাদশাহ এসে পড়ে তাহলে কিন্তু তোমার রক্ষা নেই,তোমার গর্দান যাবে। শাহজাদা বলল: সমস্যা নেই। ভাগ্যে যা আছে তাই ঘটবে।

বুড়ি বলল: ঠিক আছে নিয়ে যাবো তোমাকে, একেবারে শাহজাদির পালঙ্কের নীচে। তবে হ্যাঁ! তুমি রুমাল দিয়ে শাহজাদির হাত দুটো বেঁধে ফেলবে। যদি তোমাকে শাহজাদির পছন্দ না হয় রে বাপু! তাহলে কিন্তু খবর আছে! শাহজাদির চল্লিশজন নারী প্রহরী আছে, তারা তোমাকে টুকরো টুকরো করে ফেলবে। ওই চল্লিশ প্রহরী প্রতিদিন সকালে শাহজাদিকে ফুল দিয়ে সাজায়। বুড়ি সব জানতো। কীভাবে এবং কখন শাহজাদির কাছে যাওয়া যাবে সেটা ভালো করেই জানতো বুড়ি। সে অনুযায়ী শাহজাদাকে ঠিকঠাকমতো শাহজাদির পালঙ্কের নীচে পৌঁছিয়ে দিয়ে বুড়ি চলে গেল। শাহজাদা সুযোগ বুঝে শাহজাদির হাত রুমাল দিয়ে বেঁধে ফেলল। শাহজাদি তার কক্ষে যুবকের আগমন দেখে তার রক্ষীদের ডাকলো।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement