২৫ এপ্রিল, ২০২৪, বৃহস্পতিবার

সার্থক ননসেন্স ছড়া

Advertisement

তাঁর ছড়া পড়া হয়নি, এমন মানুষ বাংলাদেশে নেই।  মজা এবং উপমা হিসাবে তার ছড়াগুলোর দু-চার লাইন অনেকেরই আয়ত্বে।  শিশুতোষ পাঠ্যে তার কোন না কোন ছড়া আছেই।   আর কেউ নয়, তিনি হচ্ছেন সুকুমার রায়। বিশিষ্ট এই ছড়াকারের জন্ম ১৮৮৭ সালের ৩০ অক্টোবর কলকাতায়। ভারতীয় সাহিত্যে “ননসেন্স ছড়া”র প্রবর্তক এই ছন্দের জাদুকর। মূলত তিনি তার কথা-কবিতায় হাস্যরসের মধ্য দিয়ে সমাজচেতনার দিকেই পাঠককে নিয়ে গেছেন। আজ তারই দুইটি কবিতা নিয়ে এসেছে তোমাদের প্রিয় কানামাছি।

বাবুরাম সাপুড়ে

বাবুরাম সাপুড়ে,

কোথা যাস্‌ বাপুরে?

আয় বাবা দেখে যা,

দুটো সাপ রেখে যা !

যে সাপের চোখ নেই,

শিং নেই নোখ্‌ নেই,

ছোটে না কি হাঁটে না,

কাউকে যে কাটে না,

করে নাকো ফোঁস ফাঁস,

মারে নাকো ঢুঁশঢাঁশ,

নেই কোন উৎপাত,

খায় শুধু দুধ ভাত-

সেই সাপ জ্যান্ত

গোটা দুই আনত ?

তেড়ে মেরে ডাণ্ডা

করে দেই ঠাণ্ডা ।

ষোল আনাই মিছে

বিদ্যে বোঝাই বাবুমশাই চড়ি সখের বোটে,

মাঝিরে কন, ”বলতে পারিস সূর্যি কেন ওঠে?

চাঁদটা কেন বাড়ে কমে? জোয়ার কেন আসে?”

বৃদ্ধ মাঝি অবাক হয়ে ফ্যালফ্যালিয়ে হাসে।

বাবু বলেন, ”সারা জীবন মরলিরে তুই খাটি,

জ্ঞান বিনা তোর জীবনটা যে চারি আনাই মাটি।”

খানিক বাদে কহেন বাবু, ”বলতো দেখি ভেবে

নদীর ধারা কেমনে আসে পাহাড় থেকে নেবে?

বলতো কেন লবণ পোরা সাগর ভরা পানি?”

মাঝি সে কয়, ”আরে মশাই অত কি আর জানি?”

বাবু বলেন, ”এই বয়সে জানিসনেও তা কি

জীবনটা তোর নেহাৎ খেলো, অষ্ট আনাই ফাঁকি!”

আবার ভেবে কহেন বাবু, ” বলতো ওরে বুড়ো,

কেন এমন নীল দেখা যায় আকাশের ঐ চুড়ো?

বলতো দেখি সূর্য চাঁদে গ্রহণ লাগে কেন?”

বৃদ্ধ বলে, ”আমায় কেন লজ্জা দেছেন হেন?”

বাবু বলেন, ”বলব কি আর বলব তোরে কি তা,-

দেখছি এখন জীবনটা তোর বারো আনাই বৃথা।”

খানিক বাদে ঝড় উঠেছে, ঢেউ উঠেছে ফুলে,

বাবু দেখেন, নৌকাখানি ডুবলো বুঝি দুলে!

মাঝিরে কন, ” একি আপদ! ওরে ও ভাই মাঝি,

ডুবলো নাকি নৌকা এবার? মরব নাকি আজি?”

মাঝি শুধায়, ”সাঁতার জানো?”- মাথা নাড়েন বাবু,

মূর্খ মাঝি বলে, ”মশাই, এখন কেন কাবু?

বাঁচলে শেষে আমার কথা হিসেব করো পিছে,

তোমার দেখি জীবন খানা ষোল আনাই মিছে!”

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement