৩০ এপ্রিল, ২০২৪, মঙ্গলবার

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৬ ভুয়া ডিবি পুলিশ র‌্যাবের হাতে আটক

Advertisement

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ডিবি পুলিশের ৬ ভুয়া সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্যরা।

আটকরা হলেন, সবুজ খাঁন (৪৬), মিন্টু পাটোয়ারী (৪০), রাসেল মোল্লা (৪৫), ইকবাল মিয়া (৩৯), মনিরুল ইসলাম (৪০) ও খোকন মিয়া (৪৫)।

র‌্যাব বলছে, ডিবি পুলিশ পরিচয়ে প্রতারক চক্রের প্রধান সবুজ। ওদের টার্গেট ব্যাংক পাড়া। ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনকারী ও বহনকারী ব্যক্তিদের নজর রাখতো চক্রটি। চক্রের একজন ব্যাংক ও জনবহুল এলাকায় অবস্থান করে টাকা বহনকারী নির্দিষ্ট লোকদের অনুসরণ করতো।

(১১ অক্টোবর) মঙ্গলবার দুপুরর রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক (সিও) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।

তিনি বলেন, গতকাল (১০ অক্টোবর) সোমবার র‌্যাব-১০ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে, ডিবির ভুয়া সদস্য পরিচয় প্রদানকারীর একটি চক্র ডাকাতির উদ্দেশে রাজধানীর ধলপুর এলাকায় অবস্থান করছে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে রাতে র‌্যাব-১০ এর একটি দল ধলপুর কমিউনিটি সেন্টারের এলাকায় অভিযান চালিয়ে সবুজসহ ছয়জনকে আটক করে।

এসময় তাদের কাছ থেকে ডিবি পুলিশের ৩টি নকল জ্যাকেট, ২টি ওয়াকিটকি সেট, ১টি হাতকড়া, ১টি খেলনা পিস্তল, ১টি হ্যান্ড ফ্লাশ লাইট, ১টি পুলিশ মনোগ্রাম সম্বলিত স্টিকার, ৭টি মোবাইল ফোন ও নগদ ১০ হাজার ৯৫০ টাকা জব্দ করা হয়।

আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দেওয়া তথ্যের বরাতে র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক (সিও) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, আটকরা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সদস্য। তারা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, মতিঝিল, বায়তুল মোকাররমসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাংক থেকে মোটা অংকের টাকা উত্তোলনকারী ও বিভিন্ন প্রয়োজনে টাকা নিয়ে চলাচলকারী ব্যক্তিদের টাকা ও অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ ডাকাতি করে আসছিল।

তিনি আরও জানান, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ডিবি পুলিশ সেজে সোমবার যাত্রাবাড়ী এলাকায় ডাকাতি করতে এসে র‌্যাবের হাতে আটক হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আটক সবুজ এ চক্রের প্রধান। তারা মূলত ব্যাংক হতে টাকা উত্তোলনকারী ও টাকা বহনকারী ব্যক্তিদের টার্গেট করতো। এই কাজের জন্য আটক রাসেল ব্যাংক ও জনবহুল এলাকায় অবস্থান করে নির্দিষ্ট করে টাকা বহনকারী ব্যক্তিদের অনুসরণ করতো এবং অবস্থান সম্পর্কে তাদের সমন্বয়ক মিন্টুকে জানাতো।

পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী মিন্টু ও অন্যান্য সহযোগীরা ডিবি পুলিশের জ্যাকেট সদৃশ পোশাক, হাতে ওয়াকিটকি সেট ও হ্যান্ড-কাপ নিয়ে মাইক্রোবাসে করে ভিকটিমের সামনে উপস্থিত হয়ে নিজেদের ডিবি কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতো।

এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভুক্তভোগীকে মাদক কারবারি বা মামলার আসামি সাজানোর ভয় দেখিয়ে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে মারধর ও দ্রুত স্থান ত্যাগ করে অন্য স্থানে চলে যেতো। পরে ভিকটিমের কাছে থাকা টাকা, মোবাইলসহ যাবতীয় মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে ভিকটিমকে সুবিধাজনক স্থানে মাইক্রোবাস থেকে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যেতো।

আটক সবুজ খাঁন ডাকাতি কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি (ডিবি পুলিশের জ্যাকেট, ওয়াকিটকি, হাতকড়া, খেলনা পিস্তল) সরবারহকারী হিসেবে কাজ করতো। ডাকাতরা তার সরবারহ করা সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি করতো। তার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী ও পল্টন থানায় একই অপরাধে ৩টি মামলা রয়েছে।

মিন্টু পাটোয়ারী পেশায় একজন ছদ্মবেশী সিএনজি অটোরিকশা চালক। এ পেশার আড়ালে তিনি বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ডাকাতির জন্য তথ্য সংগ্রহ করতো। পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সুবিধাজনক সময় বাড়ি, দোকান, ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তিদের পথরোধ করে সর্বস্ব লুটে নিতো।

রাসেল মোল্লা (৪৫) পেশায় একজন গাড়ি চালক। তিনি এ পেশার আড়ালে ডাকাতদের গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করতো। ডাকাত সরদার সবুজের আদেশ অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যাংক ও জনবহুল এলাকায় অবস্থান করে ব্যাংক থেকে মোটা অংকের টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তিদের অনুসরণ ও তার অবস্থান সম্পর্কে দলকে জানাতো। রাসেলের বিরুদ্ধে ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

ইকবাল মিয়া (৩৯) ডাকাতির জন্য সবুজের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করতো। প্রায় ৩ বছর ধরে নিজ বাড়ি মাদারীপুর জেলা শিবচর থেকে ঢাকায় এসে দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ডিবি পুলিশ সেজে ডাকাতি করে আবার শিবচর চলে যেতো। তার বিরুদ্ধে বগুড়া শেরপুর থানায় একটি দস্যুতার মামলা রয়েছে।

মনিরুল ইসলাম (৪০) পেশায় দর্জি। গত এ বছর দর্জি পেশা ছেড়ে ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে মিন্টুর অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছিল। তার বিরুদ্ধে বগুড়া শেরপুর থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা রয়েছে। আটকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান এ র‌্যাব কর্মকর্তা।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement