সমাজ গড়ে উঠেছে নানান নীতি আর নৈতিকতার প্রত্যক্ষ অনুশাসনে। যা সরাসরি আরোপের পাশাপাশি ছোটদের গল্পেও স্থান পেয়েছে নানা সময়ে। যাতে করে ভবিষ্যত প্রজন্মও দৃঢ় মূল্যবোধ সম্পন্ন হয়ে বেড়ে ওঠে। তাই ঈশপ থেকে শুরু করে উপমহাদেশীয় নানা লোককথায় নৈতিকতা সম্পন্ন গল্প রচিত হয়েছে। আজ এমনই তিনটি গল্প উপস্থাপন করা হলো।
লোভী কুকুর
একদিন একটি লোভী কুকুর একটি কসাই এর দোকান থেকে এক টুকরো মাংস চুরি করল। তা দেখে কসাই তাঁর পিছনে তাড়া করল কিন্তু কিছুদূর পর্যন্ত গিয়ে সে তার নিজের দোকানে ফিরে এল। এদিকে কুকুরটা ভীষণ ভয়ে ছুটতে লাগল প্রাণপণে।
অনেকটা যাওয়ার পর সে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখল যে কসাইটা তার দিকে তাড়া করে আসছে কিনা। কাউকে আসতে না দেখে সে তার গতি কমিয়ে ধীরে সুস্থে হাঁটতে লাগল।কিছুক্ষণ পরে সে এসে পৌঁছল একটা ছোট্ট নদীর কাছে।
সে তখন মুখের মাংসের টুকরোটা নিয়ে সেতুর ওপর দিয়ে নদী পার হতে লাগল। সেসময় নদীর পরিষ্কার জলে তার প্রতিবিম্ব ভেসে উঠতে সে সেদিকে তাকিয়ে দেখল। লোভী আর বোকা কুকুরটা নিজের প্রতিবিম্বকে মাংস মুখে অন্য একটি কুকুর মনে করল। সেই মাংসের টুকরোটাও পাওয়ার জন্য তার খুব লোভ হলো।
সে এবার অন্য কিছু চিন্তা ভাবনা না করে নদীর জলে ঝাঁপিয়ে পড়ল আর সঙ্গে সঙ্গে জলের স্রোত তাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল।লোভী কুকুরটা মাংসের টুকরোটার সাথে সাথে তার মূল্যবান প্রাণ টা ও হারাল।
(নীতিকথা: অতিরিক্ত লোভ সর্বনাশের কারণ)
রাখাল ছেলে আর নেকড়ে
এক গ্রামে একটি রাখাল ছেলে বাস করত। তার বাবা তাকে ভেড়াদের যত্ন নিতে আদেশ দিয়েছিল। প্রতিদিন ছেলেটিকে ঘাসের মাঠে ভেড়া দের ছড়াতে নিয়ে যেতে হতো।রাখাল ছেলেটির এই কাজ একদম পছন্দ ছিল না কারণ সে দৌড়তে আর খেলতে চাইত। তাই একদিন সে গ্রামের লোকের সাথে মজা করার সিদ্ধান্ত নিল।
হঠাৎ সে চিৎকার করে বলল “নেকড়ে ,নেকড়ে!” রাখাল ছেলেটির চিৎকার শুনে পুরো গ্রামের লোক নেকড়েকে তাড়ানোর জন্য পাথর, শাবল, লাঠি যে যা পারল নিয়ে এল। কিন্তু বনে এসে গ্রামবাসীরা যখন দেখল যে কোনও নেকড়ে নেই ,রাখাল বালকটি তাদের সময় নষ্ট করেছে এবং তাদের ভয় দেখাবার জন্যই মিথ্যা কথা বলছে তখন তারা বিরক্ত বোধ করল এবং যে যার বাড়িতে ফিরে গেল।
পরের দিন ছেলেটি আবার চিৎকার করে বলল ,”নেকড়ে নেকড়ে”! আর গ্রামবাসীরা আবারও নেকড়ে তাড়াতে রাখাল ছেলেটির কাছে দৌড়ে এল ।ছেলেটি তাদের ভয় দেখে যখন হেসে উঠল গ্রামবাসীরা চলে গেল এবং কেউ কেউ খুব রাগান্বিত হল রাখাল ছেলেটির কীর্তিকলাপ দেখে।
তৃতীয় দিন ছেলেটি ভেড়া চড়াবার জন্য ছোট্ট একটি পাহাড়ে উঠেছিল আর হঠাৎ সে দেখল সত্যিকারের একটা নেকড়ে বাঘ তার ভেড়াদের ওপর আক্রমণ করেছে। সে প্রাণপণ চিৎকার করে বলল “নেকড়ে ,নেকড়ে!!”
কিন্তু গ্রামবাসীরা ভাবল রাখাল ছেলেটি বুঝি তাদের আবার বোকা বানানোর চেষ্টা করছে তাই এবার কেউ ছেলেটিকে উদ্ধার করতে এল না। মিথ্যে বলার কারণে রাখাল ছেলেটি তার তিনটি ভেড়াকে হারাল।
(নীতিকথা: সব কথায় মিথ্যের আশ্রয় নিলে সত্য উপেক্ষিত হয়)
গর্বিত গোলাপ
একটি গোলাপ নিজের সুন্দর চেহারা নিয়ে গর্বিত ছিল আর তার বিরক্তির কারণ ছিল যে সে কুৎসিত ক্যাকটাসের পাশে বেড়ে উঠেছে। অহংকারী গোলাপটি প্রতিনিয়তই ক্যাকটাসকে তার চেহারা নিয়ে অপমান করত, কিন্তু ক্যাকটাস চুপ করে থাকত।
এক গ্রীষ্মে, বাগানে উপস্থিত কুয়োটি শুকিয়ে গেলে জলের অভাবে গোলাপ গাছটি নিস্তেজ হতে শুরু করল। সে দেখল যে একটি চড়ুই ক্যাকটাসের মধ্যে ঠোঁট ডুবিয়ে জল পান করার চেষ্টা করছে।
লজ্জিত ও অসহায় গোলাপটি ক্যাকটাসকে জিজ্ঞেস করল, যদি সেও কিছু জল পেতে পারে। সহৃদয় ক্যাকটাস এক কথায় সম্মতি প্রদর্শন করল এবং তারা উভয়ই কঠিন গ্রীষ্ম বন্ধু হিসাবে পার করে দিল।