সারা বিশ্বের সাথে বাংলাদেশেও আজ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। ১৯৬৮ সালের ২০ মে জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিষদের কাছে একটি চিঠি পাঠায় সুইডেন সরকার। এর বিষয়বস্তু ছিল প্রকৃতি ও পরিবেশ দূষণ। পরের বছর জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং সমাধানের উপায় খুঁজতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সম্মতিতে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ১৯৭২ সালের ৫ থেকে ১৬ জুন জাতিসংঘ মানব পরিবেশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৩ সালে সম্মেলনের প্রথম দিন ৫ জুনকে জাতিসংঘ ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শনিবার ‘জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান-২০২১’-এর উদ্বোধন করবেন।
২০২০ সালে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘প্রকৃতির জন্য সময়’ (Time for Nature)। এর লক্ষ্য কীভাবে পৃথিবীর বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের বিকাশ করা যায়, সেই রূপ কাঠামো গঠন।
বিশ্বজুড়ে এখন পরিবেশ দূষণের মাত্রা ভয়াবহ। পরিবেশ দূষণের উল্লেখযোগ্য কারণের মধ্যে রয়েছে অত্যাধিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, নির্বিচারে বৃক্ষনিধন ও বনভূমি উজাড়, প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার, দ্রুত শিল্পায়ন, সার ও কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, শিল্প-কলকারখানার বর্জ্য, গাড়ির বিষাক্ত ধোঁয়া, ওজোন স্তরের ক্ষয়, অ্যাসিড বৃষ্টি, অপরিকল্পিত গৃহনির্মাণ, দারিদ্র্য, প্রসাধনসামগ্রী, প্লাস্টিক দ্রব্যের ব্যবহার ইত্যাদি।
ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের কবলে পড়ে আজ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। অপেক্ষা করছে এক মহাধ্বংস! গত ৬০ বছরে ৮০টির বেশি প্রজাতির প্রাণী নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কয়েক শ’ প্রজাতির গাছপালা বিলুপ্ত।
সারা বিশ্বে বর্তমান ৮০ শতাংশ হলো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অরণ্য। এর মধ্যে প্রতি মিনিটে ২১ হেক্টর কৃষিযোগ্য জমি বন্ধ্যা হয়ে গেছে। প্রতিবছর ৭৫ লাখ হেক্টর জমি মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবছর বাতাসে বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন কমছে। বিজ্ঞানের অপব্যবহারে ভূপ্রকৃতির ওপর অত্যাচার বাড়ছেই। শস্য রক্ষার জন্য নানা ধরনের কীটনাশক ওষুধ তৈরি ও প্রয়োগ হচ্ছে। এসব বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্যের অনুপ্রবেশ ঘটছে মানুষের শরীরে। ফলে নানা জটিল ও কঠিন রোগের দানা বাঁধছে আমাদের শরীরে।
এদিকে জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির ঘোষণা অনুযায়ী ‘প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার, হোক সবার অঙ্গীকার’ প্রতিপাদ্যে এবং ‘প্রকৃতি সংরক্ষণ করি, প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করি’ স্লোগানে বিশ্বপ্যাপী দিবসটি উৎযাপন হচ্ছে। বিশ্ব পরিবেশ দিবসকে উপলক্ষ করে দেশের বিপুল জনগোষ্ঠী বিশেষ করে বর্তমান প্রজন্ম প্রতিবেশ ব্যবস্থা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অগ্রণীভূমিকা পালন করবে বলে সরকার প্রত্যাশা করে।
মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার দীপংকর বর জানান, জনগণের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন অধিদপ্তরের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টিতে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারের পাশাপাশি মোবাইল ফোনে পরিবেশ বিষয়ক বার্তা পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।