প্রায়শই শোনা যায়, যে থানায় মামলা নিতে গড়িমসি করে পুলিশ। অনেকসময় লিখিত অভিযোগ দিলেও দেখা যায় এজাহার রুজু হয় না। আবার অনেকসময় অর্থ বা চেক লেনদেন সংক্রান্ত অভিযোগের ক্ষেত্রেও পুলিশ থানায় মামলা করার থেকে আদালতে মামলা দাখিলের পরামর্শ দেয় ।
আইন অনুসারে যে কোন আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশ মামলা নিতে বাধ্য। তারপরও দেখা যায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকা স্বত্ত্বেও এ বিষয়ে আশানুরূপ সুরাহা হয়নি। এবং সেক্ষেত্রে একজন নাগরিকের মামলা দায়েরের বিকল্প উপায় নিয়েই আজকের আলোচনা ।
থানায় রুজু করতে ব্যর্থ হলে মামলাটি নালিশি অভিযোগ আকারে সরাসরি সংশ্লিষ্ট চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করার সুযোগ রয়েছে। আদালতের অধিক্ষেত্র এলাকা অনুযায়ী ভাগ করে দেওয়া থাকে। সেক্ষেত্রে অধিক্ষেত্র অনুযায়ী এখতিয়ারাধীন আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে। অভিযোগ লিখিত আকারে আইনজীবীর মাধ্যমে দায়ের করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ২০০ ধারায় শপথ নিয়ে অভিযোগকারীর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করতে হয়। জবানবন্দির ভিত্তিতে আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে সমন বা ওয়ারেন্ট ইস্যু করতে পারেন। কখনো মামলাটি তাৎক্ষণিক আমলে না নিয়ে থানা/সিআইডি/পিবিআই-তে প্রাথমিক তদন্তের জন্য পাঠাতে পারেন।
আবার এমনও হতে পারে, মামলার ধরণ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট থানায় আবেদনটি এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য নির্দেশ দিতে পারেন। আদালত আদেশ দিলে থানার এজাহার নিয়ে গড়িমসি করার সুযোগ নেই।
আদালতে সরাসরি অভিযোগ আকারে দায়েরকৃত মামলাকে সি,আর (Complaint Register) মামলা হিসেবে গণ্য করা হয়। এখানে নালিশকারী বাদী হিসেবে থাকেন। ফরিয়াদিকে প্রতি তারিখে হাজিরা দিতে হবে। না হলে ফরিয়াদির অনুপস্থিতিতে মামলাটি খারিজ হয়ে যেতে পারে। অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিন নেওয়ার জন্য আদালতে হাজির হওয়ার পর মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হয়।
নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা
এ ধরণের মামলা থানায় রুজু না করলে সরাসরি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা যায় । তবে সেক্ষেত্রে হলফনামা করে আদালতকে অবহিত করতে হয় যে, থানা এজাহার হিসেবে মামলাটি গ্রহণ করেনি। ট্রাইব্যুনালে ফরিয়াদি শপথ নিয়ে জবানবন্দী দেয়ার পর আদালত সরাসরি মামলাটি আমলে না নিয়ে প্রাথমিক তদন্তের জন্যে অধীনস্থ আদালত বা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে পাঠান। সেখান থেকে তদন্ত প্রতিবেদন আসার পরই আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ওয়ারেন্ট ইস্যু করেন । তারপর বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয় ।