২৭ জুলাই, ২০২৪, শনিবার

আরোপিত লকডাউনেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ফল

Advertisement

দেশের সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি জেলার করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন এরই মধ্যে কঠোর বিধি-নিষেধ বা লকডাউন আরোপ করেছে। এর মধ্যে কোনো কোনোটির লকডাউনের মেয়াদ এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। কোনো কোনোটির লকডাউন বাড়ানো হয়েছে দ্বিতীয় মেয়াদেও। আর গতকাল শুক্রবার থেকে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণসহ জনসমাগম এড়াতে লকডাউনে গেল রাজশাহী মহানগর, কুষ্টিয়া পৌর এলাকা ও শেরপুর পৌর এলাকা।

লকডাউনে থাকা দুটি জেলা নাটোর ও সাতক্ষীরায় সর্বশেষ এক দিনের (বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা) নমুনায় শনাক্তের হার ৫০-এর বেশি ছিল। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৫৩.২৫ শতাংশ নাটোরে। এ জেলায় ১৫৪টি নমুনা পরীক্ষায় ৮২টিতে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। সাতক্ষীরায় ২১১ নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ এসেছে ১১১টিতে, হার ৫২.৬০ শতাংশ। কড়া বিধি-নিষেধ আরোপ করা আরেক জেলা যশোরে গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ছিল ৪৪ শতাংশ। রাজশাহীতে ছিল ৪২.০৩ শতাংশ।

এদিকে করোনা নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে মাঠে কাজ করছেন জনপ্রতিনিধিরা। কোথাও কোথাও ব্যারিকেড বসানো হয়েছে। পরিচালনা করা হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালতও। এ ছাড়া মাইকিং করে অকারণে বাইরে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে মানুষকে। জনসচেতনতা বাড়াতে বিলি করা হচ্ছে লিফলেট। মাস্ক পরায় মানুষের অনীহাও দূর হচ্ছে না। ফলে সংক্রমণও নিয়ন্ত্রণে আসছে না।

চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে নওগাঁয় দুই হাজার ৪৮৫ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৩৪২টি নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৬৪ জন। এ অনুযায়ী আক্রান্তের হার ২১.৮৮ শতাংশ। 

নওগাঁর পরই রয়েছে রাজশাহী। এ জেলায় ১ জুন থেকে ১০ জুন নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই হাজার ৩৫৪ জন। এ অবস্থায় রাজধানীতে এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউন গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টা থেকে শুরু হয়েছে। রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল জানান, কোনো ধরনের যানবাহন ও গণপরিবহন শহরে প্রবেশ করতে পারবে না আবার বেরও হতে পারবে না।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গতকাল ৯ দফা নির্দেশনা দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে শেরপুর জেলা প্রশাসন। পৌর এলাকায় সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, বিয়ে ও পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, গত ১ জুন থেকে ১০ জুন পর্যন্ত জেলায় ৯০ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে চারজন। অথচ গত মে মাসে জেলায় ৬৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৯ জনের করোনা নমুনা পরীক্ষা করে ১৪ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। এরা সবাই শেরপুর পৌর এলাকার বাসিন্দা।

গত ৩ জুন থেকে খুলনা সদর, সোনাডাঙ্গা, খালিশপুর ও জেলার রূপসা থানায় বিধি-নিষেধ ঘোষণা করা হয়। তবে পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি না হওয়ায় গতকাল বিধি-নিষেধ আরো সাত দিনের জন্য বাড়ানো হয়েছে। এখানে সংক্রমণ ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে। যশোরে আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ছে। সেখানেও বিধি-নিষেধ চলছে। বাগেরহাটের মোংলায়ও আরোপ করা হয়েছে বিধি-নিষেধ। 

যশোরে গত ২৪ ঘণ্টায় ১২৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, শনাক্তের হার ৪৪ শতাংশ। 

লকডাউনের মধ্যে সাতক্ষীরায় প্রতিদিনই করোনা শনাক্তের হার বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। লকডাউনের সপ্তম দিনে জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে দুজন ও করোনা উপসর্গ নিয়ে আরো পাঁচজন মারা গেছে। লকডাউন আরো এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে।

খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর ও কুষ্টিয়ায় সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। এ সময়ে শনাক্ত হয়েছে ৫৯৯ জন, যা সংক্রমণের শুরু থেকে এই পর্যন্ত বিভাগে সর্বোচ্চ শনাক্ত।

নাটোরে (শহর ও সিংড়া উপজেলায়) সর্বাত্মক লকডাউনের তৃতীয় দিনে গতকাল একজনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৮২ জন।

ঠাকুরগাঁওয়ে শনাক্ত ও মৃত্যু—দুই-ই বাড়ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৩০টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছে দুজন। জেলায় গত এক সপ্তাহে সংক্রমিত হয়েছে ১৭১ জন এবং এই সময়ে মারা গেছে ১০ জন।

সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে সিলেটেও। চলতি মাসের এ কয়দিনে জেলায় মারা গেছে ২১ জন। আক্রান্ত হয়েছে ৬৭১ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগে রোগীর সংখ্যা ২৩ হাজার ৪৮৯ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৪৭২ জন, সুনামগঞ্জে দুই হাজার ৮৫৪ জন, হবিগঞ্জে দুই হাজার ৫৪১ জন ও মৌলভীবাজারে দুই হাজার ৬২১ জন রয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement