ইথিওপিয়ার তাইগ্রে ও আশপাশের অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ চলছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান মার্ক লুকক।
ওই অঞ্চলে জাতিসংঘ সমর্থিত একটি বিশ্লেষণ প্রকাশের পর তার ওপর ভিত্তি করে মার্ক লুকক এ মন্তব্য করেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
তিনি বলেন, এই এলাকায় দুর্ভিক্ষ চলছে। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
ওই জরিপে বলা হয়, যুদ্ধবিধ্বস্ত তাইগ্রের পাশাপাশি আমহারা এবং আফারের প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ ‘গুরুতর সংকটাবস্থা’ পার করছেন।
তাইগ্রেতে সরকারি বাহিনী এবং বিদ্রোহীদের মধ্যে লড়াইয়ে ইতোমধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ১৭ লাখ মানুষ।
জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম, খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং ইউনিসেফ সকলেই এই সংকট নিরসনে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
তাইগ্রের একটি অঞ্চল কাফতা হুমেরা অঞ্চলের মানুষ জানান, তারা এই সপ্তাহে অনাহারে ছিলেন।
ওই অঞ্চলের একজন ফোনে বলেন, আমাদের হাতে কিছু নেই খাওয়ার মতো। না থাকার কারণও তিনি ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, যুদ্ধ চলার সময় তাদের ফসল এবং গৃহপালিত পশু লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করা বিদ্রোহীরা তাদেরকে সহায়তা চাইতেও বাধা দিচ্ছে।
এক কৃষক বলেন, আমরা লুকিয়ে রাখা ফসল খেয়ে কিছু দিন পার করেছি। কিন্তু আমাদের কাছে এখন আর অবশিষ্ট কিছু নেই। কেউ আমাদের কোনো সহায়তা দিচ্ছে না। এখানে প্রায় সবাই মৃত্যুর অপেক্ষা করছে। ক্ষুধার কারণে আমাদের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত। পরিস্থিতি অত্যন্ত বিদপজনক। মৃত্যু আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে। যে কারও চেহারার দিকে তাকালে আপনি ক্ষুধা দেখতে পাবেন।
এর আগে ১৯৮৪ সালে যুদ্ধ এবং খরার কারণে ইথিওপিয়ার তাইগ্রে এবং ওলো প্রদেশে প্রায় ৬ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
কী বলা হয়েছে বিশ্লেষণেঃ
‘দ্য ইনটেগ্রেটেড ফেজ ক্ল্যাসিফিকেশন (আইপিসি)- এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, তাইগ্রে, আমহারা এবং আফারে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে।’
সংঘাত, জনসংখ্যার স্থানচ্যুতি, চলাচলের সীমাবদ্ধতা, সীমিত মানবিক প্রবেশাধিকার, ফসল ও জীবিকার সম্পদের ক্ষতিকে বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এতে।
তবে বিশ্লেষণে দুর্ভিক্ষের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি। যখন মৃত্যুহার, অপুষ্টি এবং ক্ষুধা কিছু নির্দিষ্ট মাপকাঠি পূরণ করে, তখনই দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়।
ইথিওপিয়ার ফেডারেল সেনাবাহিনী এবং তাইগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টের (টিপিএলএফ) মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাতে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ গত বছরের নভেম্বরে সংঘাত শেষ বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এর পরও সংঘাত থামেনি।
জাতিসংঘের বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে সমস্যার সমাধান না করা গেলে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হবে।