৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, মঙ্গলবার

কঠোরতম বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিনে তৎপর পুলিশ

Advertisement

মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমিয়ে আনতে দেশব্যাপী চলা কঠোরতম বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিন আজ। প্রথমদিন গতকাল শুক্রবার সারা দেশে মহাসড়কে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু গণপরিবহন চললেও আজ ভোর থেকেই তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাজধানী ঢাকাতেও আজ সকাল থেকে বিভিন্ন চেকপোস্টে পুলিশ সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। বেসরকারি প্রশাসনকে সহায়তা করতে সেনা ও বিজিবি সদস্যরাও টহল দিচ্ছেন রাজধানীতে।

শুক্রবার (২৩ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে দুই সপ্তাহের এই কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে। ৫ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ বহাল থাকবে। এ সময় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হলে তাকে শাস্তির আওতায় নেওয়া হবে। বিধিনিষেধ চলাকালে জনগণকে সতর্ক থাকা, মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিধিনিষেধের প্রথম দিন শুক্রবার ঢাকার মূল সড়কগুলোতে যানবাহন ও মানুষের তেমন চাপ না থাকলেও পাড়া-মহল্লায় ছিল গিজগিজ ভিড়। কোথাও কোথাও চায়ের দোকানে ঈদ পরবর্তী আড্ডাও জমে ওঠে। পুলিশের গাড়ির সাইরেন বা ভ্রাম্যমান আদালতের গাড়িবহরের শব্দে সেসব আড্ডায় খানিকটা ছেদ পড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চলে গেলেই পুরনো চেহারায় ফিরে আসে বেশিরভাগ এলাকা। আর মোড়ে মোড়ে জমে ওঠা এসব আড্ডায় বেশিরভাগ মানুষই মাস্ক পরেন না বা স্বাস্থ্যবিধি মানতে চান না।

এদিকে, কঠোর বিধিনিষেধের প্রথম দিন শুক্রবারে ঢাকায় অকারনে বাইরে বেরিয়ে গ্রেফতার হয়েছে ৪০৩ জন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, লকডাউন অমান্য করে অহেতুক ঘোরাফেরা করায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ২০৩ জনকে এক লাখ ২৭ হাজার ২৭০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

আরোপিত ‌কঠোরতম বিধিনিষেধের প্রজ্ঞাপনে যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে-

১) সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।

২) সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।

৩) শপিং মল/মার্কেটসহ সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে।

৪) সব পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।

৫) সব ধরনের শিল্প-কলকারখানা বন্ধ থাকবে।

৬) জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক বিবাহত্তোর অনুষ্ঠান (ওয়ালিমা), জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

৭) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।

৮) ব্যাংক-বিমা/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।

৯) সরকারি কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন এবং দাফতরিক কাজগুলো ভার্চুয়ালি (ই-নথি, ই-টেন্ডারিং, ই-মেইল, এসএমএস, হোয়াটঅ্যাপসহ অন্যান্য মাধ্যম) সম্পন্ন করবেন।

১০) আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিসেবা, যেমন: কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন/বিক্রি, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রদান কার্যক্রম, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলী, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ভিসা সংক্রান্ত কার্যক্রম, সিটি করপোরেশন/পৌরসভা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সড়কের বাতি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কার্যক্রম), সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।

১১) বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় খোলা রাখার বিষয়ে অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।

১২) জরুরি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, লরি/কাভার্ডভ্যান/নৌ-যান/পণ্যবাহী রেল/ফেরি এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।

১৩) বন্দরগুলো (বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল) এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।

১৪) কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা করা যাবে। সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন/বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

১৫) অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনা, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৬) টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা নেওয়ার জন্য যাতায়াত করা যাবে।

১৭) খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রি (অনলাইন/টেকওয়ে) করতে পারবে।

১৮) আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারবেন।

১৯) স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেবে।

২০) ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠপর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

২১) জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি/কোস্টগার্ড, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি সময় নির্ধারণ করবেন। সেইসঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিশেষ কোনও কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলো এ বিষয়ে মাঠপর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।

২২) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠপর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

২৩) স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেবেন।

আরআইএম/কেটিভি

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement