বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জমিজমা নিয়ে বিরোধ ‘বহুল আলোচিত’ বিষয়। বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ মামলার মূল কারণ হল পুর্ববর্তী জমি নিয়ে বিরোধ। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয় হলো জমি দখল করে মালিকানা দাবি, জাল দলিল তৈরির মাধ্যমে মালিকানা দাবি, জমির মালিককে ভোগদখলে বিঘ্ন সৃষ্টি।
মালিকানা দাবির প্রক্রিয়া:
জমির মালিকানা বা স্বত্ব দাবির জন্য দেওয়ানি আদালতের সাহায্য নিতে হবে। অবৈধভাবে জমি দখলচ্যুত হলে তা পুনরুদ্ধারের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ও ৯ ধারা অনুযায়ী আবেদন করতে হবে। এ আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী জমির মালিক নির্ধারিত পদ্ধতিতে জমিটি পুনরুদ্ধার করার জন্য প্রতিকার চাইতে পারেন। তবে ধারাটি অনুযায়ী, দখলচ্যুত ব্যক্তিকে জমিতে তাঁর স্বত্ব বা মালিকানা আছে কিংবা মালিকানার দাবি রয়েছে, তার ঘোষণা চাইতে হবে। তা না হলে এ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার পাওয়া অসম্ভব। ৮ ধারার স্বত্ব প্রমাণসহ মামলা করার ক্ষেত্রে বেদখল হওয়ার পর থেকে ১২ বছরের মধ্যে মামলা করার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এটিকে সাধারণত স্বত্ব সাব্যস্ত খাস দখলের মামলা বলা হয়।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে হলে মালিকানা প্রমাণের দরকার নেই। শুধু জমি থেকে দখলচ্যুত হয়েছেন, এমনটা প্রমাণ করলেই চলবে। ৯ ধারায় উল্লেখ আছে, যদি কোনো ব্যক্তি বেদখল হন, তবে তিনি বা তাঁর মাধ্যমে দাবিদার কোনো ব্যক্তি মোকদ্দমার মাধ্যমে এর পুনরুদ্ধার করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয়-বাদী অর্থাৎ যিনি প্রতিকার দাবি করছেন, তিনি জমিটি দখল করে আসছিলেন কি না; বিবাদী তাঁকে জোরপূর্বক বেদখল করেছেন কি না; বিবাদী বেআইনিভাবে জমিতে প্রবেশ করেছেন কি না।
তবে বাদীকে অবশ্যই বেদখল হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে মামলা করতে হবে। অন্যথায় তিনি এ ধারায় মামলা করার অধিকার হারাবেন। তবে সরকারের বিরুদ্ধে এ ধারায় প্রতিকার চাওয়া যাবে না।
আইনের আশ্রয়
আইনজীবীর সহায়তায় জমিজমার মালিকানা নিয়ে প্রতিকারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট এখতিয়ারাধীন আদালতে মামলা করতে হবে। আদালতের এখতিয়ার নির্ধারিত হয় অঞ্চল ও জমির মূল্যমান ভেদে। মালিকানাসহ দখলের প্রতিকার চাইলে মূল্যানুপাতিক কোর্ট ফি এবং শুধুমাত্র দখলের প্রতিকার চাইলে মূল্যানুপাতিক কোর্ট ফি-এর অর্ধেক আদালতকে প্রদান করতে হয়। বাদী জমির নিরাপত্তা শঙ্কায় ভুগলে তা রক্ষার্থে আদালত বরাবর পৃথক আবেদনের মাধ্যমে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞাও চাইতে পারেন ।