প্রতিনিয়ত খারাপ হচ্ছে করোনা পরিস্থিতি। এর মধ্যে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যাও যেন লাফিয়ে বাড়ছে। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে (১৪ জুলাই) বুধবার সকাল ৮ টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় ৬৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম। এ ছাড়া ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন।
ডেঙ্গু ছড়ায় এডিস মশার কারণে। মশাবাহী এ রোগের বিস্তার রোধে সরকার নানাবিধ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি যেয়ে তল্লাশি, মশা নিধন স্প্রে ছিটানো, যেখানে পানি জমে আছে সে সব জায়গা পরিষ্কারের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। ডেঙ্গুর উৎপত্তি সাধারণত এডিস মশার লার্ভা থেকে হয়। আর এই লার্ভা জন্মে জমে থাকা পানিতে। যেমন-ফ্রিজের ট্রে, রান্নাঘরের র্যাক– যেখানে ধোয়া বাসনপত্র রাখা হয়,পানি জমে থাকা রান্নাঘরের/বাথরুমের ড্রেন কুলার,বাথরুম/সিস্টার্নে থাকা লিকেজ,আঢাকা বালতি/পানির পাত্র, যেগুলি সবসময় ব্যবহার করা হয় না, ঘর সাজানোর ফুলের টব/পানি সহ সাজানোর জিনিষ,বনসাই প্ল্যান্ট/ইনডোর প্ল্যান্ট ইত্যাদি জায়গায়।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যুর ফলে সরকার কঠোর লকডাউনের ঘোষনা দিয়েছিল যা আজ থেকে পবিত্র ঈদ উল আজহা পর্যন্ত শিথিল করা হয়েছে। এডিস মশা সাধারণত সকাল ও সন্ধ্যায় কামড়ায়। তবে অন্য সময়ও কামড়াতে পারে। দিনে ঘুমালে মশারি টানিয়ে অথবা কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাতে হবে।
মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ নিম্নবিত্ত। সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পর মশার কামড় থেকে সুরক্ষা পেতে তাদের ভরসা কয়েল। মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হতে দেশকে রক্ষা করতে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছিল সরকার।
বৈশ্বিক এই মহামারির কারণে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। সাধারণ মানুষ তাদের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করতেই হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় যে জিনিস কয়েল-তা আজ তারা অনেকেই কিনতে পারছেন না। ফলে তাদের ভুগতে হচ্ছে ডেঙ্গুর মতো ভয়াবহ এই কঠিন ব্যধিতে। এ যেন গোদের ওপর বিষ ফোরার মত।
কঠোর লকডাউনের নীতিমালায় সন্ধ্যার পর দোকান বন্ধ রাখার নিদের্শনাও ছিল। নিয়মনীতি মেনে দোকানপাট বন্ধ না করলে ট্রেড লাইসেন্স বাতিলের ঘোষণা দেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। তার এ নির্দেশনার প্রতিফলন পড়ে গ্রামাঞ্চলেও। দোকানপাট বন্ধ থাকায় কয়েল কিনতে না পেরে মশার কামড়ে তারা সারাদিন পরিশ্রমের পর রাতে ঘুমাতে পারেন না। কসমো গ্রুপ -তাদের মানবিকতা ও উদারতার নিদর্শনে একধাপ এগিয়ে।
সাধারণ মানুষকে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতন এবং অবহিত করার জন্য আজ বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় যশোর শংকরপুর ৭ নং ওয়ার্ডের একটি মাদ্রাসায় তারা বিনামূল্যে কয়েল বিতরণ করেন। গরীব, দুস্থ ও অসহায় শিক্ষার্থীদের মাঝে কসমো গ্রুপের কর্মীরা তাদের ব্যান্ডের “ রিকো ” মশার কয়েল বিতরণ করেন। শিক্ষার্থীরা কয়েলগুলো পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে বলে- অনেকদিন পর তারা একটু আরামে ঘুমাতে পারবে। মশার কামড়ে অতিষ্ট হয়ে মাঝ রাতেই তাদের ঘুম থেকে উঠে জেগে থাকতে হয়। সারাদিন লেখাপড়ার কারণে তাদের আর বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ থাকে না। কসমো গ্রুপের কর্মীরা কয়েল বিতরণের পর আরো কিছুটা সময় তাদের সাথে কাটান। তারা বলেন-আমরাও আনন্দিত অসহায় বাচ্চাদের জন্য ভাল কিছু করতে পেরে।
উদারতা ও মানবতার নিদর্শন হিসেবে গতকাল বুধবার (১৪ জুলাই) বিকেল ৪টায় স্থানীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছান। কসমো গ্রুপের কর্মীগণ স্থানীয় প্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে রংপুর সদরের সেন্ট্রাল রোড এলাকায় প্রায় একশ জন দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে তাদের ব্র্যান্ডের “জোনাকি” ও “রিকো” মশার কয়েল বিতরণ করেন। তারা মনে করেন এবং বিশ্বাস করেন, সমাজের প্রতিটা মানুষের সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে অসহায় মানুষদের সাহায্য ও সহযোগিতা করা। ডেঙ্গু যেন করোনার মতো মহামারির আকার ধারণ না করে সেই দিকে সবার দৃষ্টি রাখা জরুরি।