ঢাকায় ৭১ শতাংশ ও চট্টগ্রামে ৫৫ শতাংশ মানুষের শরীরে করোনার অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। ৩ হাজার ২২০ জনের ওপরে পাঁচ মাস গবেষণা করে আজ মঙ্গলবার এমন তথ্য জনালো আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)।
এদিকে গতকাল সোমবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, বিশ্বব্যাপী তাণ্ডব চালানো মহামারি করোনাভাইরাসে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৭৮ জন। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৬২৬ জনে।
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছেন আরও ৪ হাজার ৬৩৬ জন। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮ লাখ ৫৬ হাজার ৩০৪ জন। সেইসঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৮২৭ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হলেন ৭ লাখ ৮৫ হাজার ৪৮২ জন। এদিন মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয় ২৪ হাজার ৫৭ জনের। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ২৭ শতাংশ।
এ ছাড়া বয়স্ক ও তরুণদের মধ্যে অ্যান্টিবডির হার প্রায় সমান। নারীদের মধ্যে অ্যান্টিবডির হার ৭০ দশমিক ছয় শতাংশ, যা পুরুষদের (৬৬ শাতংশ) তুলনায় বেশি। তিন হাজার ২২০ জনের মধ্যে পাঁচ মাস ধরে গবেষণা করে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) এ তথ্য পেয়েছে।
এ গবেষণার প্রধান গবেষক ছিলেন আইসিডিডিআর,বির ডা. রুবহানা রাকিব ও ড. আবদুর রাজ্জাক। এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়েছে ফরেন কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) এবং জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)। বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ এ গবেষণায় অ্যাডভোকেসি পার্টনার হিসেবে কাজ করেছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আইসিডিডিআরবি সম্প্রতি করোনা সংক্রমণের বিস্তার নির্ণয়ের জন্য এক গবেষণা চালায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের বস্তি এবং বস্তিসংলগ্ন এলাকায়। এসব এলাকায় বসবাসকারী করোনার উপসর্গযুক্ত ও উপসর্গহীন ব্যক্তিদের ওপর এ গবেষণা চালানো হয়। ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এ সমীক্ষা চালানো হয়। মোট তিন হাজার ২২০ জনের মধ্যে আন্তবিভাগীয় গবেষণা হিসেবে পরিচালনা করা হয়। গবেষণায় গৃহস্থালি পর্যায়ে সাক্ষাৎকার গ্রহণ, রক্তচাপ ও শরীরের পুষ্টি পরিমাপ এবং রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
এ সমীক্ষার মাধ্যমে সেরোপজিটিভিটি (রক্তে SARS-CoV-2–এর উপস্থিতি) সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল বস্তি এবং বস্তির বাইরে বসবাসকারী মানুষের রক্তে কোভিড-১৯–এর উপস্থিতি এবং তার সম্ভাব্য কারণ নির্ণয় করা। সম্ভাব্য যে কারণগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে, সেগুলো হলো শরীরে অন্য কোনো শ্বাসকষ্টজনিত ভাইরাসের উপস্থিতি, পুষ্টিগত অবস্থা (যেমন : ভিটামিন ডি, জিংক, সেলেনিয়াম) এবং রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা।
গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আরও জানানো হয়-
১. যেসব অংশগ্রহণকারী ব্যক্তির (মোট তিন হাজার ২০৯) মধ্যে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে শুধু ৩৫ দশমিক পাঁচ শতাংশের ক্ষেত্রে মৃদু উপসর্গ দেখা দিয়েছিল। স্বল্পশিক্ষিত, অধিক ওজন, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস যাদের আছে, তাদের মধ্যে অধিকমাত্রায় সেরোপ্রিভ্যালেনস (রক্তে কোভিড উপস্থিতির হার) দেখা গিয়েছে।
২. স্বল্পশিক্ষিত, অধিক ওজন, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রয়েছে যাদের, তাদের মাঝে অধিক মাত্রায় সেরোপ্রিভেলেনস (রক্তে কোভিড উপস্থিতির হার) দেখা গিয়েছে।
৩. বার বার হাত ধোয়ার প্রবণতা, নাক-মুখ কম স্পর্শ করা, বিসিজি টিকা গ্রহণ এবং মাঝারি ধরনের শারীরিক পরিশ্রম করা ব্যক্তিদের মাঝে কম মাত্রার সেরোপ্রিভেলেনস দেখা গেছে।
৪. সেরোনেগেটিভ ব্যক্তিদের তুলনায় সেরোপজিটিভ ব্যক্তিদের মাঝে সেরাম জিংকের মাত্রা বেশি দেখা গেছে। এটাই হয়তো গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মাঝে রোগের মৃদু লক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
৫. গবেষণায় ভিটামিন-ডি এর অপর্যাপ্ততার সঙ্গে সেরোপজিটিভিটির কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। বরং গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মাঝে ভিটামিন-ডি এর উচ্চ মাত্রার ঘাটতি দেখা গেছে।
এ গবেষণার প্রধান গবেষক ছিলেন আইসিডিডিআরবির ডা. রুবহানা রাকিব ও ড. আবদুর রাজ্জাক। এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়েছে ফরেন কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) এবং জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)। বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ এ গবেষণায় অ্যাডভোকেসি পার্টনার হিসেবে কাজ করেছে।