২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনার দিনে চড়া ছিল রাজধানীর অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে চাল,তেল,পেঁয়াজসহ দাম বেড়েছে আদা, রসুন, মশুর ডাল ও আটা-ময়দার। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে মাংস ও সবজির বাজার।
গত দু-সপ্তাহ ধরে হঠাৎ করেই পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বাড়তির দিকে রয়েছে চালের দাম। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে চিকন চালের দাম প্রতি কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি মিনিকেট ৫৮-৬০ টাকায় বিক্রি হলেও এই সপ্তাহে তা বিক্রি হয়েছে ৬২ থেকে ৬৫ টাকা দরে। দাম বেড়েছে মোটা চালেরও। প্রতি কেজিতে ৪-৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা দরে। আর মান ভেদে প্রতি কেজি নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৬৬ থেকে ৭০ টাকায়। এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা ও পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল মালিকরা গত দু-সপ্তাহে বস্তা প্রতি প্রায় ১৭০ টাকা দাম বাড়িয়েছে। ফলে খুচরা পর্যায়ে সব ধরনের চালে কেজিতে প্রায় ৩ থেকে ৪ টাকা দাম বেড়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্যেও চালের দাম বাড়ার তথ্য উঠে এসেছে । এর মধ্যে চিকন চালের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ, মাঝারি চালের দাম বেড়েছে ১০ দশমিক ২০ শতাংশ এবং মোটা চালের দাম বেড়েছে ৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
দাম বেড়েছে আটা ও ময়দার। ৩২ থেকে ৩৪ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া প্যাকেট আটার দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৪-৩৬ টাকা। আর প্যাকেট ময়দার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৪-৪৬ টাকা, যা আগে ছিল ৪২ থেকে ৪৪ টাকার মধ্যে।
এক সপ্তাহর ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়েছে। এদিন বিভিন্ন বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়াও বাজেটের প্রভাবে সরবরাহ কমে যাওয়ায় বেড়েছে মোটা মসুর ডাল, রসুন ও আদার দাম। প্রতি কেজি মোটা মসুর ডালে প্রায় ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। আর রসুনে প্রায় ১৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকা দরে। গত সপ্তাহে আদার দাম ২০ টাকা কমলেও এই সপ্তাহে তা আবার ২০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে না আর দেশি পেঁয়াজের সরবরাহও কমে গেছে। এ কারণেই পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। দ্রুত পেঁয়াজ আমদানির ব্যবস্থা না করলে দাম আরও বেড়ে যেতে পারে। এদিকে আদা-রসুনের খুচরা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ জানিয়ে বলেন, এছাড়াও আসন্ন বাজেটে আমদানি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে বলে রসুন ও আদার কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
রাজধানীর বাজারগুলোতে সরবরাহ কমেছে ভোজ্যতেলের। নতুন দাম নির্ধারণের পর এখনও এই ভোজ্য তেলের সরবরাহ পায়নি অনেক দোকান। ফলে আগের দামেই সরবরাহকৃত বোতলজাত সয়াবিন এখনও বিক্রি হচ্ছে। তবে প্রতি লিটারে প্রায় ৫-৬ টাকা বেশি দামে অর্থাৎ ১৫০ টাকায়। তেল বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজেট ও নতুন দামের কারণে বর্তমানে বাজারের তেলের সরবরাহ নেই বললেই চলে। প্রায় ৪-৫ দিন ধরে বাজারে কোনো তেলের সরবরাহ নেই।
তেলের দামের বিষয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবি জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ২ শতাংশ। বোতলের ৫ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া খোলা পাম অয়েলের দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং সুপার পাম অয়েলের দশমিক ৮৬ শতাংশ দাম বেড়েছে।
এদিকে গত সপ্তাহের দামেই প্রায় অপরিবর্তিত আছে রাজধানীর সবজির বাজার। অন্যদিকে এই সপ্তাহে কিছুটা কমেছে কক মুরগির মাংসের দাম। বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা দরে। আগের দামেই দেশি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২০-৫৩০ টাকা। এছাড়া অপরিবর্তিত রয়েছে গরুর মাংসের দাম। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৭০-৫৮০ দরে।
তবে সপ্তাহের ব্যবধানে অনেকটা আগের দামেই রয়েছে মাছের বাজার।