চলচ্চিত্র বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি। আমাদের বর্তমান চলচ্চিত্রে কি বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠছে? এক বাক্যেই হয়তো অনেকেই বলে উঠবেন ফুটে উঠছে না। আদৌ কি উঠবে? আমাদের দেশে অনেক মেধাবী তরুন চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, নির্দেশক আছেন যাদের হাত ধরে এই সমাজের দর্শন ফুটে উঠতে পারে।
এ প্রজন্মের যেসব মেধা সম্পন্ন প্রখর বুদ্ধিদীপ্ত চলচ্চিত্র নির্দেশক, পরিচালক পেয়েছে নূরুল আলম আতিক অন্যতম। মুক্ত চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সংগঠন বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরাম (বিএসএফএফ) গঠিত হয়েছিলে ১৯৮৬ সালের আগষ্টে। এটি প্রতিষ্ঠা করার মূল লক্ষ্যই ছিল বাংলা চলচ্চিত্রাঙ্গনকে সমৃদ্ধ করা।
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র জগতে মসলাদার চলচ্চিত্রের রাজত্ব চলছিল। তখন, আর্ট ফিল্মের অবস্থাও ছিলো করুণ। এই সংগঠনটির সাথে জড়িত থাকা উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা হলেন মোরশেদুল ইসলাম, তানভীর মোকাম্মেল, তারেক মাসুদ, এনায়েত করিম বাবুল, তারেক শাহরিয়ার, মানজারে হাসিন মুরাদ, নূরুল আলম আতিক সহ আরো অনেকে।
আতিকের খুব বেশী ছবি, নাটক কিংবা শর্ট ফিল্ম হয়েছে তা কিন্তু নয়। অল্পের মাঝেই অনেক বিস্তার ঘটতে দেখেছি। জীবন দর্শন ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছে। বাস্তবতাকে পিছনে ফেলে কল্পকাহিনী নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে দেখিনি। অবাস্তবতাকে আকড়ে ধরে সামনে অগ্রসর হতে দেখিনি।
একজন লেখক, অভিনেতা, পরিচালক কিংবা চিত্রনাট্যকারের আজীবনের লালিত স্বপ্ন থাকে জাতীয় পুরস্কার অর্জন। সবাই চায় কাজের স্বীকৃতি। ২০০০ সালে ’কিত্তনখোলা’ ছবির জন্য সেরা চিত্রনাট্যকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। জাতীয় পুরস্কারের পর সাংস্কৃতিক অংগনে মেরিল-প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার-এসসিবি সমালোচক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন বেশ কয়েকবার।
২০০২ সালে তাঁর সৃষ্টি ’চতুর্থ মাত্রা’র জন্য শ্রেষ্ঠ চিত্র পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক হিসেবে মেরিল-প্রথম আলো সমালোচক পুরস্কার পান। শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে ’সাইকেলের ডানা’র জন্য ২০০৩ সালে, শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে ২০০৮ সালে ’একটি ফোন করা যাবে প্লিজ’ এর জন্য মেরিল প্রথম আলো সমালোচক পুরষ্কার অর্জন করেন।
এছাড়া ২০০৯ ও ২০১০ সালে তাঁর একটি অনিন্দ্য সৃষ্টি ’বিকল পাখির গান’ এর জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে যথাক্রমে মেরিল-প্রথম আলো ও ডেইল স্টার-এসসিবি সমালোচক পুরস্কার অর্জন করেন। আতিকের অর্জিত প্রায় প্রত্যেকটি পুরস্কারই ছিলো সমালোচক পুরস্কার। তার কর্ম গুলো বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও নাট্যাঙ্গনকে করেছে প্রস্ফুটিত।
নূরুল আলম আতিকের উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে কিত্তনখোলা, ফুলকুমার, ডুবসাঁতার। বাংলাদেশী টেলিভিশনের জন্য নির্মিত নূরুল আলম আতিকের কতগুলো কীর্তি ইতিমধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে, সাথে বিভিন্ন পুরস্কারও পেয়েছেন স্বীকৃতি হিসেবে। আতিকের টিভি নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে-চতুর্থ মাত্রা, সাইকেলের ডানা, জল, বড় ভুতের কিচ্ছা, সিন্ডেরেলা, এভারেস্ট, মারমেইড, আইসক্রীম, এ জার্নি বাই বোট, বিকল পাখির গান, অবাক সন্দেশ, কুসুমের চারপাশ, হাইওয়ে, ডালিম কুমার, সাইফুল আর্টিশ, একটা ফোন করা যাবে প্লিজ উল্লেখযোগ্য।
নূরুল আলম আতিক টিভি নাটকগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন ধারাবাহিক নিয়েও কাজ করেছেন। কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম- পলায়ন পর্ব, চিঠি, মনে-মনে, লাবন্য প্রভা, একটা কিনলে একটা ফ্রি। টেলিভিশনের দর্শকদের ভিন্নধর্মী “চন্দ্রবিন্দু” নামক এটি নন-ফিকশন উপহার দিয়েছেন। টেলিভিশন জগতের এক অনন্য চরিত্র নূরুল আলম আতিক।
নাটক, সিনেমা, ধারাবাহিকের মতো রয়েছে বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় টেলিফিল্ম -জোড়া ইলিশ, বনফুল, অদৃশ্য মানব ইত্যাদি। মুক্তিযোদ্ধের উপর লাল মোরগের ঝুঁটিসহ পেয়ারার সুবাতাস ও মানুষের বাগান ভিন্ন ধর্মী দু’টি চলচ্চিত্র নির্মান করেছেন। মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ছবি তিনটি সুন্দর সমাজ গঠনে সহায়তা করবে সাথে মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাসের কোনো একটি অধ্যায়কে জানার পরিপূর্ণতা দিতে ভূমিকা রাখবে আশা করছি।
তিনি একজন লেখক হিসেবে পাঠকদের হাতে তুলে দিয়েছেন – নতুন সিনেমা সময়ের প্রয়োজন এবং মগের মুল্লুকে ফিরিঙ্গির বেশাতি বই দু’টি। এছাড়া বিখ্যাত চিত্র শিল্পী এস এম সুলতানের উপর বই ণ্রী এর সম্পাদনা করেছেন নুরুল আলম আতিক। আতিক অনেক গুনে গুনান্বিত। নবীন শিল্পীদের নিজের মেধা, বুদ্ধি আর নির্ভুল পেশাদারিত্ব দিয়ে একজন পরিপূর্ন অভিনেতা বা অভিনেত্রী তৈরীতে অবদান রেখে চলেছেন।
নুরুল আলম আতিক বাংলাদেশে আধুনিক শর্টফিল্মের ধারক, বাহক, প্রচারক হিসেবে অগ্রসরমান। তার অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গন অলংকৃত হবে। মেধা, মননে বিকশিত হবে চলচ্চিত্রাঙ্গন। তাঁর হাত ধরে বিকশিত হোক সুপ্ত প্রতিভা। তাঁর মেধার আলোয় আলোকিত হোক বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন অঙ্গন।
এখানে শুধু নূরুল আলম আতিক নন, আতিকের মতো অনেক প্রতিভা আছে বর্তমান আমাদের চলচ্চিত্র আর নাট্যাঙ্গনে। অপসংস্কৃতির চর্চা না করে বাংলার ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির চর্চা করলেই সঠিক সমাজ দর্শনের উপলব্ধি করতে পারবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।
লেখক-মোঃ কামরুল ইসলাম, সভাপতি, সাস্ট ক্লাব লিমিটেড।