২৭ জুলাই, ২০২৪, শনিবার

চিরচেনা শ্রেণিকক্ষ ফিরে পাবে প্রাণের স্পন্দন

Advertisement

ক্যাম্পাস মাতোয়ারা শিক্ষার্থীদের মনে কালো মেঘ বাসা বেঁধেছে। ঘরের বাইরে বের হওয়ার তাড়া তাদের ধাওয়া করে চলেছে প্রতি মুহূর্তে।

ইট-পাথরে গড়া প্রাণের সেই ক্যাম্পাস আছে, অথচ সেখানে নেই কোনো প্রাণের স্পন্দন। শিক্ষার্থীদের খুনসুটিতে মাতোয়ারা ছিল যে শ্রেণিকক্ষগুলো সেখানে জমেছে স্বচ্ছ ধুলো আর একাকিত্বের ভিড়। প্রতিটি শিক্ষার্থীর পদচারণার আশায় অপেক্ষমাণ হয়ে আছে বিভাগগুলো। হাহাকার আর নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে শ্রেণিকক্ষগুলোর প্রতিটি কোণায় কোণায়। যার প্রতিটি বালুকণায় মিশে আছে শিক্ষার্থীদের ভালোবাসার ছোঁয়া। যে বেঞ্চে বসে চলতো কতো ঝগড়া, খুনসুটি।  সেখানে হয়তো ধুলো জমে গেছে। ক্লাসের ওই বোর্ডটাও অপেক্ষায় আছে কবে তার বুকে মার্কারের আঁচড় পড়বে। সুস্থ একপৃথিবীতে প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নেওয়ার অপেক্ষায় আছে সবাই।

অন্ধকার কেটে যেমন একমুঠো মিষ্টি রোদকে সঙ্গী করে  ভোরের সূর্য উঠে। তেমনি  উজ্জ্বল আলোয় আবারও প্রজ্জ্বলিত হবে সবার প্রাণের ক্যাম্পাস।  ক্যাম্পাসের প্রতিটি বালুকণা ফিরে পাবে তার হারানো জৌলুশ। আর শিক্ষার্থীরা ফিরে পাবে চিরচেনা সেই আনন্দ-উল্লাসে মুখরিত  শ্রেণিকক্ষ।

আগামীকাল রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ প্রায় ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর আবারও সচল হতে যাচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। তাই মহামারিতেও উৎসবের আমেজ।

দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে। বছরের শুরুতে এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষা আয়োজন করার কথা থাকলেও এখনও তা সম্ভব হয়নি। এছাড়া অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষা আয়োজন নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে আগামীকাল থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গত ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, দেশে করোনার সংক্রমণ দ্রুত কমে যাচ্ছে। জুলাই মাসের তুলনায় সংক্রমণ ৭০ শতাংশ কমেছে। আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে। প্রথম দিন চার-পাঁচ ঘণ্টা ক্লাস হবে। পর্যায়ক্রমে এই ক্লাসের সংখ্যা বাড়বে। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানকালে শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ সবাইকে মাস্ক পরিধান করতে হবে।

পরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) থেকে আলাদাভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনাসহ বেশ কিছু সতর্কতা ও সচেতনতামূলক নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এদিকে দীর্ঘদিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হওয়ায় নানা ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজধানীর স্কুল-কলেজগুলো। বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের বরণ করতে নানা আয়োজন শুরু করেছেন।

কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে রীতিমতো উৎসবের আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেওয়া হবে। নিজ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের বরণ করে এ দিন পাঠদান শুরু করবেন ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষকরা। প্রতিষ্ঠানটির একাধিক শিক্ষক জানান, ক্লাসের প্রথম দিন আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেবেন তারা। বেইলি রোড, আজিমপুর, ধানমন্ডি ও বসুন্ধরায় ভিকারুননিসার চারটি শাখার প্রবেশপথের সব ফটক বেলুন ও কাগজ দিয়ে সাজানো হবে। তিন ফুট দূরত্ব রেখে শিক্ষকরা গেটের সামনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবেন। ছাত্রীরা যখন প্রবেশ করবে, শিক্ষকরা করতালি ও ড্রাম বাজিয়ে সংবর্ধনা ও শুভেচ্ছা জানিয়ে তাদের ভেতরে প্রবেশ করানো হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার রাজধানীর উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি ক্লাসরুম সাজানো হয়েছে বেলুন ও রঙিন কাগজ দিয়ে। নিজেদের চেনা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অভ্যর্থনা জানানো হবে চকলেট ও ফুল দিয়ে। এর পাশাপাশি রাখা হয়েছে আইসোলেশন রুম সুবিধাসহ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নানান পদক্ষেপ।

এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার খবরে শিক্ষা সরঞ্জাম কেনার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক পোশাক (স্কুল ড্রেস) বানাতে ব্যস্ত সময় যাচ্ছে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের। বিশেষ করে খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানগুলোর ড্রেস বানিয়ে থাকে, এমন দর্জি দোকান। তবে দীর্ঘ সময় পরে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যেতে নির্দিষ্ট পোশাক নিয়ে স্কুলগুলোতে তেমন কড়াকড়ি থাকবে না। রাজধানীর নেভি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, স্যার জন উইলসন স্কুল, সেন্ট যোসেফ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান সাধারণ শোভন পোশাকে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারবে বলে নোটিশ দিয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement