১৪ অক্টোবর, ২০২৪, সোমবার

বাংলাদেশ বৈদেশিক ঋণের দিক থেকে এখনো ঝুঁকিমুক্ত

Advertisement

করোনা ও বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক ঘাটতি বেড়ে যাবে। এই ঘাটতি মেটাতে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে হবে। এতে ঋণও বাড়বে। ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে সরকারের ওপর আর্থিক চাপ বেড়ে যাবে। তবে স্বল্প মেয়াদে সাময়িকভাবে ঋণ থেকে সরকার হয়তো পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে পারবে। বুধবার রাতে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের ‘ফিসক্যাল মনিটর, এপ্রিল ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার সময় বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের সরকার যে আর্থিক ঘাটতিতে পড়েছিল তা থেকে গত বছর কিছুটা উত্তরণ ঘটেছে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উত্তরণের গতি থমকে গেছে। বরং স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে সংকট আরও গভীর হয়েছে। এ সংকটের কারণে বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে বৈদেশিক ঋণের চাপ বেড়ে গেছে। এ ঋণ শোধে দেশগুলো সংকটে পড়েছে। নিম্নআয়ের প্রায় ১৫ শতাংশ দেশ ইতোমধ্যেই ঋণ সংকটে পড়েছে। আরও ৪৫ শতাংশ দেশ এ সংকটের কাছাকাছি রয়েছে। তাদের সমর্থন দেওয়ার জন্য ধনী দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

সংস্থাটি মনে করে, বাংলাদেশ বৈদেশিক ঋণের দিক থেকে এখনো ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে। নিয়মিত ঋণ শোধ করতে পারছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ভালো অবস্থানে। তবে বৈশ্বিকভাবে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। কিন্তু এর বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় কমে গেছে। এতে ডলারের দামও বাড়ছে। গত এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকিং খাতে ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মোট জিডিপির হিসাবে গত অর্থবছর থেকে চলতি অর্থবছরে দেশটির (বাংলাদেশ) আয় বাড়বে দশমিক ১ শতাংশ। কিন্তু ব্যয় বাড়বে প্রায় ১ শতাংশ। ঘাটতি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। ফলে ঋণ বাড়বে ৩ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য হলো, ‘সরকারের আয়ের তুলনায় ব্যয় বাড়ছে বেশি। ফলে ঋণ করে ব্যয় মেটাতে হবে। এতে সাময়িকভাবে সরকারের কিছুটা স্বস্তি এলেও দীর্ঘ মেয়াদে এ ঋণ শোধে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে। একদিকে ঋণের বিপরীতে বাড়তি সুদ পরিশোধ করতে হবে। অন্যদিকে ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে আর্থিক চাপে সার্বিক ভারসাম্যে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে সরকার যদি ঋণের সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে পারে বা উৎপাদন খাতে ব্যবহার করতে পারে তাহলে এ থেকে কিছুটা সুফল পাওয়া যেতে পারে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গত অর্থবছরে মোট জিডিপির আকারের হিসাবে বাংলাদেশ সরকারের ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৩৯ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৪২ দশমকি ১ শতাংশ। আগামী বছর তা আরও বেড়ে ৪২ দশমকি ৪ শতাংশে দাঁড়াবে। আর স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে চলতি বছরে মিয়ানমারের ঋণ বাড়বে জিডিপির ৬১ দশমিক ৩ শতাংশ। নেপালের ৪৭ দশমিক ৮ শতাংশ।’

আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গত অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট জিডিপির মধ্যে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ রাজস্ব আয় হয়েছিল। চলতি অর্থবছরে তা মাত্র দশমিক এক শতাংশ বেড়ে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে। আগামী বছরে তা আরও বেড়ে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তা বেড়ে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে। আর চলতি বছরে জিডিপির আকারের মধ্যে মিয়ানমারের রাজস্ব আয় হতে পারে ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ, নেপালের ২১ দশমিক ৬ শতাংশ। যা বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি। জিডিপির আকার বাংলাদেশে দ্রুত বাড়লেও রাজস্ব আয়ের দিক থেকে অনেক পিছেয়ে রয়েছে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আয় কমলেও ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। বৈশ্বিক মন্দায় বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি দিতে গিয়ে ব্যয় আরও বেড়েছে। গত অর্থবছরে সরকারের ব্যয় হয়েছিল জিডিপির ১২ দশমিক ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে তা বেড়ে হতে পারে জিডিপির সাড়ে ১৪ শতাংশ। আগামী অর্থবছর তা কমে ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে। তবে জিডিপির আকার বাড়ার কারণে ব্যয়ের হার কমলেও পরিমাণে বাড়বে। এর পরের অর্থবছরগুলোতে এ ব্যয়ের হার জিডিপির ১৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। আর চলতি বছরে মিয়ানমারের ব্যয় হবে জিডিপির ১৮ দশমকি ৬ শতাংশ ও নেপালের হবে ২৬ দশমিক ১ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যয়ের খাতেও নেপাল ও মিয়ানমারের তুলনায় বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে রয়েছে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সার্বিক ঘাটতি গত অর্থবছর ছিল জিডিপির ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। চলতি বছরে তা বেড়ে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হবে। আগামী অর্থবছর থেকে তা কমতে থাকবে। তখন ৫ শতাংশের মধ্যে নেমে আসবে। আর চলতি বছরে মিয়ানমারের ঘাটতি হবে তাদের মোট জিডিপির ৪ দশমিক ৮ শতাংশ ও নেপালের সাড়ে ৪ শতাংশ। করোনার আগে ২০১২ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সার্বিক ঘাটতি ছিল সাড়ে ৩ শতাংশ। চলতি ২০২৩ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত ঘাটতি বেড়ে দাঁড়াবে জিডিপির ৫ দশমিক ১ শতাংশ।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘চলতি বছরে বৈশ্বিকভাবে আর্থিক ভারসাম্যে ঘাটতি বাড়বে। গত বছর এ খাতে ঘাটতি ছিল ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। চলতি বছর এ ঘাটতি বেড়ে হবে ৫ শতাংশ। আগামী বছর থেকে ঘাটতি কমতে থাকবে। করোনার কারণে ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৬ শতাংশ।’

সরকারের আর্থিক ভারসাম্য (জিডিপির হারে)

সূচক ২০২২-২৩ ২০২৩-২৪

আয় ৮.৮ ৯.৩

ব্যয় ১৪.৫ ১৪.৪

ঘাটতি ৫.৬ ৫.১

ঋণ ৪২.১ ৪২.৪

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement