বাবার কাঁধটা কি অন্য সবার চেয়ে বেশি চওড়া? তা না হলে কী করে সমাজ সংসারের এত দায়ভার অবলীলায় বয়ে বেড়ান বাবা। বাবার পা কি অন্য সবার চেয়ে অনেক দ্রুত চলে? নইলে এতোটা পথ এত অল্প সময়ে কী করে এত শক্ত করে সব কিছু আগলে রাখেন বাবা। বাবার ছায়া শেষ বিকেলের বট গাছের ছায়ার চাইতেও বড়? সে তার সন্তানকে জীবনের সব উত্তাপ থেকে সামলে রাখেন।
এ রকম হাজারও কথা বলা যাবে বাবাকে নিয়ে, এরপরও শেষ হবে না সন্তানের প্রতি, সংসারের প্রতি বাবার অবদানের কথা। বাবা শাশ্বত, চির আপন, চিরন্তন। আর বাবার তুলনা বাবা নিজেই।
বাবা মানে বটবৃক্ষের ছায়া। বাবা মানে নির্ভরতা। সন্তানের প্রতি বাবার ভালোবাসা চিরকালের। বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রকাশের একটি অন্যতম দিন বাবা দিবস। আজ সেই দিন। প্রতিবছর জুনের তৃতীয় রোববার বিশ্বব্যাপী বাবা দিবস উদ্যাপিত হয়। পশ্চিমা বিশ্বে এ ধারণা প্রচলিত হলেও আমাদের দেশেও দিনটি উদ্যাপন করা হয়।
১৯০৮ সালে প্রথম বাবা দিবসের উদ্যোগ নেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টে প্রথম ৫ জুলাই দিবসটি পালন করা হয়। এরপর ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন জুনের তৃতীয় রোববারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাবা দিবস হিসাবে নির্ধারণ করেন। ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন প্রতিবছর জাতীয়ভাবে বাবা দিবস পালনের রীতি চালু করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে দিনটির উদযাপন আরও আড়ম্বরভাবে হয়ে থাকে। আজ বিশ্বের সব বাবার প্রতি ভালোবাসা জানাবেন সন্তানরা। ভালোবেসে উপহারও দেবেন। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের ওয়ালগুলো ভরে যাবে প্রিয় বাবার ছবিতে। যাদের বাবা বেঁচে আছেন তারা আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ছবি আপলোড করবেন। আর যাদের বাবা নেই, তারা বাবার ছবি পোস্ট করে, বাবাকে নিয়ে লিখে স্মৃতিচারণ করবেন।
সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে বাবা-মা দুজনই সন্তানকে লালনপালন করে বড় করে তোলেন। কারও দায়িত্ব কারও চেয়ে কম নয়। আধুনিককালে একক পরিবারে বাবার গুরুত্ব অপরিসীম। অনেক পরিবারে বাবা-মা দুজনই উপার্জন করেন। কিন্তু এখনো আমাদের দেশের অনেক পরিবারে বাবাই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বাবার উপার্জনেই সংসারের সব ব্যয়নির্বাহ হয়। সন্তানের শারীরিক, মানসিক দুই ধরনের বেড়ে ওঠার জন্য বাবা তার সবকিছু উজাড় করে দেন। অনেক বাবা নিজে আধ পেট খেয়েও সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেন। সন্তানকে সুস্থ মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে বাবা মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। বাবার আদর্শ, মূল্যবোধ, চিন্তাচেতনা সন্তানের ওপর দারুণভাবে প্রভাব বিস্তার করে। এজন্য বলা হয়ে থাকে-বাবার হাত ধরেই সন্তানের চলতে শেখা। এ চলতে শেখার পাঠ সন্তানকে শিশুকাল থেকেই বাবা দিতে শুরু করেন। সন্তানের মঙ্গলার্থেই বাবার সারা জীবন ব্যয় হয়।
কিন্তু কীভাবে বাবা দিবসটির প্রচলন হলো?
মা দিবস কয়েকশো বছর ধরে পালন করা হচ্ছে, কিন্তু সেই তুলনায় বাবা দিবসটি অনেক নতুন। দিবসটি সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম চালু হয় এবং এর শুরু নিয়ে বেশ কয়েকটি গল্প আছে। সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সম্ভবত গ্রহণযোগ্য গল্পটি হলো, ওয়াশিংটনের সোনোরা লুইস স্মার্ট নামের একজন নারী এই দিন উদযাপন শুরু করেন। ষষ্ঠ সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে তার মা মারা গেলে তার বাবা পরিবারটিকে বড় করে তোলেন। ১৯০৯ সালে সোনোরা গির্জার একটি বক্তব্যে মা দিবসের কথা জানতে পারেন। তখন তার মনে হলো, বাবার জন্যও এরকম একটি দিবস থাকা উচিত।
স্থানীয় বেশ কয়েকজন ধর্মযাজক তার এই আইডিয়াটি গ্রহণ করেন। ধারণা করা হয়, ১৯১০ সালের ১৯ জুন প্রথমবারের মতো বাবা দিবসটি পালন করা হয়, যদিও তা আনুষ্ঠানিক ছিল না।
১৯৬৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন সিদ্ধান্ত নেন যে, প্রতি বছর জুনের তৃতীয় রোববার বাবা দিবস হিসাবে পালন করা হবে। ছয় বছর পর প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এটিকে আইনে পরিণত করেন।
বর্তমান করোনাকালে অনেক বাবা ভালো নেই। অনেক বাবা কাজ হারিয়েছেন, অনেকের উপার্জন কমে গেছে। এরপরও সব কষ্ট সহ্য করে সন্তানকে আগলে রাখছেন বাবা। সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে তিনি নিরন্তন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাবার সেই কষ্টের প্রতি সন্তানরা আজ শ্রদ্ধা জানাবে। কোনোদিন হয়তো আলাদা করে ”ভালবাসি” -এই ছোট্ট কথাটাই তোমায় বলা হয়নি, আজ বলছি। বাবা দিবসের ভালবাসা যেন শুধু আজকের এই একটি দিনে সীমাবদ্ধ না থাকে। সব বাবাকে জানাই শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।