ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে এখনও অবসর নেননি মাশরাফি বিন মর্তুজা কিন্তু তারপরও দেশের ক্রিকেটের জন্য মাঠের বাইরে থেকেও অনেক কিছু করার আছে বলে মনে করেন সাবেক এই অধিনায়ক। সম্প্রতি দেশের একটি অনলাই পোর্টালে দেওয়া সাক্ষাতকারে ম্যাচ বলেন, ক্রিকেটাররা মাঠে খারাপ করলেই সবাই বলতে থাকে অমুককে সরান তমুককে সরা কিন্তু যতদিন পর্যন্ত সিস্টেমে পরিবর্তণ না হবে ততদিন পর্যন্ত যাকেই আনা হোক কোন লাভ হবে না।
ম্যাচ বলেন, সুজন ভাইয়ের কথা আমি কেন বলি? কারণ তিনি ফল দিয়েছেন বলেই বাধ্য করিয়েছেন আমাকে বলতে। গত যুব বিশ্বকাপ জয়, এবার ভারত থেকে একটা টুর্নামেন্ট জিতে এলো ছেলেরা। এটা উনার কৃতিত্ব নয়? গেম ডেভেলপমেন্ট তো উনি সাজাচ্ছেন!
এখন সুজন ভাইয়ের কাজ নিয়ে ক্রিকেট অপারেশন্সে গ্যাঞ্জাম হচ্ছে। এটা তো ঠিক নয়! অপারেশন্সের কাজ তারা করুক, সুজন ভাইয়ের কাজ তিনি করবেন, গ্রাউন্ডসের কাজ তারা করবে… সুনির্দিষ্ট ভূমিকা আছে সবার। একজনের সঙ্গে আরেকজনের কামড়াকামড়ি হওয়ার তো সুযোগ নেই। কিন্তু এসব হচ্ছে, সেটির প্রভাবই পড়ছে।
যার যার কাজ সুনির্দিষ্টভাবে করতে পারাটাই বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সামনে নিয়ে যাবে। এখানে কোনো রকেট সায়েন্স নেই, যার যে ভূমিকা, তা ঠিকঠাক করুন। সবকিছুই একটা প্রক্রিয়া, সেটা মানতে হবে। প্রক্রিয়া ছাড়া ভালো কিছু আশা করা যায় না।
জাতীয় দলের সাবেক ক্যপ্টেন বিসিবির প্রেসিডেন্ট হলে কি করতেন সেটাও বলেছেন। তিনি বলেন, প্রথমেই আমি স্টেটমেন্ট দিতাম, ‘আমার তিন বছর সময় প্রয়োজন।’ এই তিন বছরে বাংলাদেশ দলের ফল কেমন হচ্ছে, তা ভুলে যেতে হবে। এই তিন বছরে কোত্থেকে ফল এনে দেবেন! সেরকম ক্রিকেটারই তো নাই! সিস্টেমই তো নাই। সিস্টেম গড়ে তুলতে হবে। এজন্য বললাম, আমার প্রথম পদক্ষেপ হবে দেশের মানুষকে জানানো যে, তিন বছরের আগে সম্ভব নয়। কারণ রাতারাতি তো কিছু বদলানো যায় না।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তিন বছরে মাশরাফি কী কী কাজ করতেন তাও বলেছেন। মাশরাফি বলেন, অনেক কিছু করার আছে। সব বলাও ঠিক হবে না। যেটি বললাম, সিস্টেম গড়ে তুলতে হবে। সেটি বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকে, ক্লাব পর্যায় থেকে, সব জায়গায় সিস্টেম গড়ে তুলতে হবে। তার আগে ফ্যাসিলিটিজ গড়ে তুলতে হবে। সুযোগ-সুবিধার জন্য বিনিয়োগ করতে হবে।
প্রায়ই ৯০০ কোটি টাকার কথা শুনি। অবকাঠামোর জন্য যদি আমার ৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হয়, সেটাই করতে হবে। কারণ দিনশেষে, টাকাটা এসেছে তো দলের কারণেই। ক্রিকেট দিয়েই। ক্রিকেট না বাঁচলে টাকা দিয়ে করবেন কি? আগে এই সিস্টেম গড়তে হবে। ক্রিকেটারদের শিক্ষা, ক্রিকেটারদের মনস্তাত্ত্বিক জগতের খেলা, এগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের কি নেই, সেটা খুঁজে বের করতে হবে।
জিম্বাবুয়ের সঙ্গে যদি আমরা ৩৫০ করতে পারি (৫০ ওভারে), নিউ জিল্যান্ডের সঙ্গে কেন পারব না? বুঝলাম নিউ জিল্যান্ডের বোলিং ভালো। তাহলে অন্তত ২৮০ কেন পারব না? কারণ বোলারকে আমরা মাথায় নিয়ে নিচ্ছি। সাকিব কেন সফল? কারণ সে শুধু বলটাকে গোনায় ধরে, চেহারাটাকে নয়। সাকিব মানসিকভাবে এত এগিয়ে, এজন্যই সে দলের অন্যদের চেয়ে অনেক ভালো ক্রিকেটার।
আবার তামিমের উদাহরণ দেই। বিশ্বকাপ এলেই সে কেন পারফর্ম করতে পারে না? কারণ, তার মাথায় ঢুকে যায় যে “এই বিশ্বকাপে আমার ভালো করতে হবে, কোনো বিশ্বকাপ ভালো যায় না।” বাড়তি চাপ সে নিয়ে নেয়। এটাই ব্যাপার। মানসিকভাবে যে যত ফ্রি থাকে, যতটা সুস্থ থাকে, সে ততটা ভালো খেলবে। ক্রিকেট খেলাটাই এরকম। আমি দায়িত্বে থাকলে আগে এই জায়গাগুলো নিয়েই কাজ করতাম।
সত্যি বলতে, জাতীয় দল নিয়ে কাজ করতে গেলে মনস্তাত্ত্বিক কাজই করা যায়। অন্য কাজ করার জন্য তো কোচ-ম্যানেজার আছেন, ট্রেনার-ফিজিও আছেন। সিস্টেম নাই নিচের সারিতে। যেখানে সব আছে, সেটা নিয়েই আলোচনা হচ্ছে। যেখানে কিছু নেই, সেখানে কোনো আলোচনাই নেই।