প্রায় ৭ বছর ধরে শিকলবন্দি ময়না। বাঁশের খুঁটি আর শিকল যেন ময়নার জীবনসঙ্গী। সেখানেই সময় কাঁটে চল্লিশ বছর বয়সী ময়নার। দুর্বিষহ জীবনে বেদনার ছাপ। বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের রামনগর মধ্যপাড়া গ্রামের আব্দুল হালিমের মেয়ে ময়না।
জানা যায়, বৃদ্ধ ও ভ্যান চালক ময়নার বাবা আব্দুল হালিমের পাঁচ সদস্যের সংসার। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে অতি কষ্টে। অথচ আজ পর্যন্ত সরকারি কোন ভাতা মেলেনি তার ভাগ্যে।
উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের রামেশরপুর এলাকার সামায়ন হোসেনের ছেলে আমিনুল ইসলামের সঙ্গে ১৫ বছর আগে বিয়ে হয় ময়নার। সুখি সংসারে জন্ম নেয় ছেলে মুন্নাফ (৯)। এরপর হঠাৎ ময়নার মাথা ব্যথা শুরু হয়। কিন্তু স্বামী আমিনুল ইসলাম চিকিৎসা না করায় বাবার বাড়িতে এসে চিকিৎসা করে ভালো হয় ময়না। সুখের সংসার করার জন্য আবার স্বামীর বাড়িতে ফিরে যান।
কিছুদিন যেতেই আবার শুরু হয় পাগলামী। এরই মধ্যে তার সংসরে আসে আরেকটি মেয়ে সন্তান। এমতবস্থায় মাথার সমস্যা বেশি হয়, এ কারণে স্বামী আমিনুল ইসলাম তাকে তালাক দেয়। দুই মাসের মেয়েসহ বৃদ্ধ বাবার বাড়িতে আসেন ময়না। বৃদ্ধ বাবা কিছুদিন চিকিৎসা করালেও টাকার অভাবে ময়নার চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়।
চিকিৎসা বন্ধ হওয়ার পর থেকেই ময়না পুরো মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে যান। তখন শরীরে আর কোনো কাপড় না রেখে রাস্তা ও এলাকার মাঝে ঘুরতে থাকে। এমন অবস্থায় বাবা আব্দুল হালিম ও মা ছয়েদা বেগম কোনো উপায় না পেয়ে বাড়িতে এনে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন। আর এই শিকল বাঁধা অবস্থায় পেরিয়ে গেছে ৭টি বছর।
ময়নার মা ছয়েদা বেগম জানান, ময়না এখন সম্পূর্ণ মানসিক প্রতিবন্ধী শরীরে কোনো কাপড় রাখেন না। মেয়ে মানুষ এমন অবস্থায় বাহিরে ঘুরতে দেওয়া যায় না, তাই পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছি; মেয়ে ৭ বছর ধরে শিকলবন্দী রয়েছে।
ময়নার বাবা বলেন, ময়নার মেয়ে সুন্দরীরও এখন একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই বৃদ্ধ বয়সে ভ্যান চালিয়ে ৫ জনের সংসার চালাতে হয়। তাকে চিকিৎসা করাবো ওই টাকা পাবো কোথায়। সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।