২৭ জুলাই, ২০২৪, শনিবার

মিয়ানমারে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে নিহত অন্তত ২৫

Advertisement

মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী এবং মিলিশিয়াদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শী ও মিয়ানমারের গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে শনিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ডেকান হেরাল্ড। অন্যান্য আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাগুলোও অন্তত ২০ জন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে।

চলতি সপ্তাহে মিয়ানমারের জান্তা সরকার ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ‘প্রতিরোধ যুদ্ধ’ শুরুর ঘোষণা দেয় দেশটির ছায়া সরকারের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট দুয়া লাসি লা। গত মঙ্গলবার ফেসবুকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় এই ঘোষণা দেওয়ার পর এটিই সবচেয়ে বড় সহিংসতার ঘটনা বলে সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে।

আলজাজিরা জানিয়েছে, মিয়ানমার ইস্যুতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অভ্যুত্থান-বিরোধী কর্মী এবং সামরিক বাহিনীর বিরোধী গ্রুপগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে শনিবার আহ্বান জানানোর পর সহিংসতার এই খবর সামনে এলো। দেশটিতে জান্তা সরকারের বিরোধীরা বলছেন, ‘দেশের বাইরে থেকে কার্যকর পদক্ষেপ বা হস্তক্ষেপের’ অভাবে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে উঠছে।

স্থানীয় মিডিয়া ও  প্রত্যক্ষদর্শীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে মিয়ানমারের মাইয়িন থর গ্রামে নিহতের এই ঘটনা ঘটেছে। সেখানে সরকারি সেনাদের বিরুদ্ধে লড়ছেন দেশটির ছায়া সরকারের অনুগত স্বেচ্ছাসেবক যোদ্ধারা। সংঘর্ষের সময় বার্মিজ সামরিক বাহিনী ব্যাপকভাবে কামানের গোলাবর্ষণ করলে স্থানীয় মিলিশিয়াসহ গ্রামবাসীরা নিহত হন।

মাইয়িন থর গ্রামের ৪২ বছর বয়সী এক বাসিন্দা জানান, ‘সামরিক বাহিনী কামানের গোলা ছুড়ছে। আমাদের গ্রামের বাড়ি-ঘরও তারা পুড়িয়ে দিচ্ছে।’মিয়ানমার সংঘাত নিহত ২৫

তিনি আরও জানান, নিহত ২০ জনের মধ্যে ৩ জন শিশুও রয়েছে। এছাড়া তার ১৭ বছর বয়সী ছেলেও মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন। তার ছেলে জান্তাবিরোধী মিলিশিয়া বাহিনীর সদস্য ছিলেন।

বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে ফোনে তিনি বলেন, ‘আমি সবকিছু হারিয়েছি… পৃথিবীর শেষ দিন পর্যন্ত আমি তাদেরকে ক্ষমা করবো না।’ সন্তানের মরদেহ চিহ্নিত করতে কার্যত সংগ্রাম করছেন বলেও জানান তিনি।

শনিবার দেওয়া এক বিবৃতিতে মিয়ানমারের গণ-অসহযোগ আন্দোলন জানিয়েছে, হাতের কাছে যা কিছু আছে তাই নিয়ে যুদ্ধে নেমে পড়া ছাড়া মিয়ানমারের যুবকদের আর কোনো উপায় নেই। আর তাই ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি)-র সঙ্গে আরও বেশি করে সম্পৃক্ত হতে জাতিসংঘসহ আসিয়ান দেশগুলোর প্রতি বিবৃতিতে আহ্বান জানানো হয়।

সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের ছায়া সরকার হিসেবে কাজ করছে ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি)। সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের নির্বাচিত আইনপ্রণেতাদের নিয়ে এই সরকার গঠন করা হয়েছে এবং এর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন দুয়া লাসি লা।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত ও ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকে মিয়ানমারে অস্থিতিশীলতা জারি রয়েছে। এই ঘটনার পর দেশটিতে তীব্র গণ-আন্দোলন শুরু হয় এবং সামরিক ক্ষমতার জোরেই বার্মিজ সেনাবাহিনী তা দমনের চেষ্টা করে।

চলতি বছরের ১ ফেব্রয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সন সুচিকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী এবং এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইং। অং সান সুচি ও তার দল এনএলডির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা বর্তমানে গৃহবন্দি বা কারাবন্দি অবস্থায় আছেন।

পর্যবেক্ষক সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স’র তথ্য অনুযায়ী, সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশটিতে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১০৫৮ জন নিহত হয়েছেন এবং ৬৩০০-র বেশি মানুষকে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement