২৭ জুলাই, ২০২৪, শনিবার

যেতে হবে না ভূমি অফিসে

Advertisement

হয়রানির আরেক জায়গা হল ভূমি অফিস। যাঁর একখণ্ড ভূমি আছে অথচ তাঁকে কখনো ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি, এমনটা বিরল। দেশে ভূমি সংক্রান্ত মামলা-মোকদ্দমার সংখ্যাও প্রচুর। ভূমিসেবা সহজীকরণসহ একে হয়রানিমুক্ত করতে পুরো ভূমি ব্যবস্থাপনাই ডিজিটাইজ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এতে কোনো ভূমির মালিককে আর ভূমি অফিসেই যেতে হবে না।

তাঁরা বলছেন, ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটাইজড হলে এ সংক্রান্ত বহু জটিলতা দূর হবে। দুর্নীতি-অনিয়মও শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে বলে আশা করছেন তাঁরা। তাঁদের ভাষ্য, জমি বেচাকেনা, রেজিস্ট্রেশন, নামজারি, জমির খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ, খাস বা পরিত্যক্ত জমি, পুকুর বা হাট-বাজারের ইজারা, ওয়ারিশান জমি হস্তান্তর, জমি বন্ধক—কোনো কিছুতেই আর ভোগান্তি পোহাতে হবে না। এককথায় ‘জমি যার রেকর্ড তার’ বিষয়টি নিশ্চিত হবে।

গত ৬ জুন শুরু হয়েছে ”ভূমিসেবা সপ্তাহ”, শেষ হবে ১০ জুন। আগামী জুলাই থেকে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধে ম্যানুয়াল পদ্ধতি বন্ধ হওয়ার কথা। 

ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ডিজিটাইজড পদ্ধতিতে বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে জমির মালিক ভূমির খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) পরিশোধ করতে পারবেন। এ জন্য ১০টি মডিউলসমৃদ্ধ ভূমি তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি (এলআইএমএস) নামের একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে। মডিউলগুলোর মধ্যে রয়েছে ভূমি নামজারি ব্যবস্থাপনা, ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থাপনা, ভূমি নামজারি পর্যালোচনা ব্যবস্থাপনা, ভূমি মিস কেস ব্যবস্থাপনা, বাজেট ব্যবস্থাপনা, খাজনা সনদ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ইত্যাদি। এর সব কটির কাজই শেষ পর্যায়ে।

সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের চ্যালেঞ্জিং দিক হচ্ছে খতিয়ানগুলো ডিজিটাইজ করা। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য টিভি ও দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রচার করা হচ্ছে। নামজারি করে দ্রুত তথ্য না দেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। অন্যথায় মৃত বাপ-দাদার নামে জমির মালিকানা উঠে যাবে।

এ বিষয়ে ঢাকার জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘এই প্রকল্পের প্রথম কাজ হলো সব জমির মিউটেশনের খতিয়ান তথা মিউটেড খতিয়ান, সার্ভের খতিয়ান ডিজিটাইজ করা। এই কাজের জন্য এসি (ল্যান্ড) থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১৭-১৮টি এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সাভার মৌজায় একটা প্রকল্প রয়েছে, যেখানে অনলাইনের মাধ্যমে খাজনা পরিশোধ করা হচ্ছে।’

এখন পর্যন্ত নিজেদের সফল দাবি করে তিনি বলেন, ‘জমি যার রেকর্ড তার—এমন সহজীকরণের জন্য ডিজিটাইজ করা হচ্ছে। অনলাইনে দাগ, খতিয়ান চাপলেই মালিকের তথ্য চলে আসবে।’

সেবার মানে পরিবর্তনের মাধ্যমে স্বচ্ছতা বাড়ানোর চেষ্টার কথা উল্লেখ করে বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হচ্ছে, সব ধরনের সেবা অনলাইনে পাওয়া যাবে। এর মাধ্যমে দুটি বিষয় হবে—ভূমি অফিসের অবৈধ লেনদেনের বদনাম ঘুচবে এবং যেকোনো নাগরিক পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে ভূমিকর দিতে পারবেন। এ ছাড়া জমির ক্রয়-বিক্রয়ের সর্বশেষ অবস্থা জানতে পারবেন। তাঁর জমির নামজারি ঠিক আছে কি না, সেটাও দেখতে পারবেন।’

জানতে চাইলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান গত রোববার বলেন, ‘অনলাইনের তথ্য হালনাগাদে ব্যক্তির ভোটার আইডি অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ভোটার আইডিতেও ভুল থাকলে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশোধনের সুযোগ থাকবে। সব মানুষের তথ্য যদি নিতে যাই, তাহলে অনেক সময়ের ব্যাপার। এ কারণে নাগরিকদের স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজের রেজিস্ট্রেশন করার জন্য কাজ করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন,‘বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং, কিন্তু অসম্ভব নয়। ’

মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এরই মধ্যে নতুন সব নামজারির তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। চার কোটি ৭৬ লাখ পরচার ডাটা সংগ্রহে রয়েছে। যাঁদের তথ্য সংগ্রহে আছে তাঁরা নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে গেলে যেকোনো জায়গা থেকে তা দেখতে ও ডাউনলোড করে নিতে পারবেন বলে জানান তিনি।

সূত্র জানায়, ভূমি মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়ে সব জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছে, অনলাইনে ভূমিকর দিতে মালিককে প্রথমে অ্যাপ্লিকেশনে নিবন্ধন করতে হবে। একবারই নিবন্ধন করতে হবে। এ জন্য www.land.gov.bd ও www.ldtex.gov.bd ঠিকানায় গিয়ে ভোটার আইডি, মোবাইল ফোন নম্বর ও জন্ম তারিখ দিতে হবে। অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্যবহার করে যেকোনো ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে নিবন্ধন করা যাবে। এ ক্ষেত্রে মোবাইল নম্বর, পাসপোর্ট সাইজের ছবি, এনআইডি, পূর্ববর্তী দাখিলার কপি এবং প্রয়োজনে খতিয়ানের কপি ও দলিল নিয়ে গেলে বিনা খরচে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে। এর কোনোটিই না করতে পারলে ৩৩৩ বা ১৬১২২ নম্বরে ফোন করে কল সেন্টারের মাধ্যমে এনআইডি, জন্ম তারিখ ও জমির তথ্য দিলে রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক কয়েক মাসে দ্রুততার সঙ্গে সরকারের এ উদ্যোগ এগিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদ, উপায়, একপে ও বিকাশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। এসব সেবাকেন্দ্রের যেকোনো শাখা থেকে ভূমিসেবার যেকোনো ফি দেওয়া যাবে।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement