রাজধানী ঢাকায় বৃষ্টি মানেই নগরবাসীর কাছে পানিবদ্ধতার এক তিক্ত অভিজ্ঞতা। প্রতি বছরই পানিবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় রাজধানীবাসীকে। বৃষ্টি হলেই নগরীর অলিগলি ও ছোট পরিসরের রাস্তাগুলোতে পানিবদ্ধতা দেখা দেয়। রাজধানীর পানি নিষ্কাশন পথগুলো আবর্জনায় ভরাট হয়ে থাকায় পানি নামতে পারে না। ফলে প্রতিবারই এমন পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। রাজধানীতে সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও হাঁটু থেকে কোমর পানি জমেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। পানিতে আটকা পড়ে অনেক বাহন বিকল হয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে সরকারের কঠোর লকডাউনের চতুর্থ দিনের সকালে রাস্তাঘাটে মানুষ খুব প্রয়োজন না হলে বের হচ্ছেন না। কিন্তু এই পানিব্ধতা তাদের দুর্ভোগ যেন আরো এককাঠি বাড়িয়ে দিল।
দুই সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের জন্য বিভিন্ন এলাকায় পানি জমেছে। আর ভারী বর্ষণ হলে তিন ঘণ্টার বেশি সময় পানি জমে থাকে। তারা একে সহনীয় মাত্রা এক ঘণ্টায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। এ সমস্যা সমাধানে তিন মেয়াদে তিনটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
শান্তিনগরের বাসিন্দা আদিত্য সাহা বলেন, ‘সকালে ওষুধ কেনার জন্য বের হয়েছি। কিন্তু বৃষ্টিতে রাস্তায় হাঁটু সমান পানি জমেছে। বৃষ্টি চলে যাওয়ার পরও পানি কমছে না।
বৃষ্টিতে যেসব এলাকা তলিয়ে গেছে সেগুলো হলো-মালিবাগ, শান্তিনগর, রাজারবাগ, চাঁনবাড়ি রোড, খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নতুন লুপ, নটরড্যাম কলেজের গেট সংলগ্ন এলাকা, ধানমন্ডি ২৭, গ্রিন রোড, নিউ মার্কেট, পলাশীর এসএম হল, আজিমপুর মোড়, জিগাতলা, মগবাজার ফ্লাইওভারের হলি ফ্যামিলি অংশ, মগবাজার-মৌচাক, কাঠাল বাগান, ফকিরাপুল মোড়, আরামবাগ পাম্প, গুলবাগ, শান্তিবাগ, লালবাগ রোড, কাজী আলাউদ্দিন রোড, আগা সাদেক রোড, আবুল হাসনাত রোড, সিদ্দিক বাজার রোড, আলু বাজার রোড, আগামাছি লেন, নাজিরা বাজার, বঙ্গভবনের দক্ষিণ গেট, বিবির বাগিচা, যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার, জুরাইন কবরস্থান সংলগ্ন এলাকা, নিউ মার্কেট-ঢাকা কলেজের সামনে, গুলিস্তান সিনেমা হলের সামনে, লালবাগের নারকেল বাড়ি এলাকা, সোবহানবাগ কলোনির ভেতর, মুদগা হাসপাতালের সামনে, নটরড্যাম কলেজের ওপর পাশ, গেন্ডারিয়ার ঢালকা নগর, সুতি খালপাড় রোড ও রোজগার্ডেন এলাকা।
এসব এলাকার নগরাসীকে এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে প্রায় ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেনেজ নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ডিএসসিসি। এছাড়া নতুন করে প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে বলে ডিএসসিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বৃষ্টিতে ডিএনসিসির অভিজাত এলাকা বসুন্ধরা, গুলশান, বনানী, বারিধারা, পূর্ব রামপুরা, হাজীপাড়া, মৌচাক, মালিবাগ, মগবাজার, প্রগতি সরণির কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাড্ডা, কাওরান বাজার, বেগুনবাড়ি,মালিবাগের গুলবাগ, মগবাজারের নয়াটোলা সড়ক, পান্থ পথের বিভিন্ন এলাকা, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, মিরপুর, ফার্মগেটের পূর্ব ও পশ্চিম রাজাবাজার, খিলক্ষেত নিকুঞ্জ ও নিকুঞ্জ-২ এর জামতলা এলাকা, উত্তরার বিভিন্ন সেক্টর, মিরপুরের শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, কালশী ও মধুবাগ এলাকার রাস্তা পানি জমতে দেখা গেছে।
জানতে চাইলে ডিএসসিসির পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) মো. খায়রুল বাকের বলেন, ‘আমাদের এলাকায় ৫৩টির মতো স্থান চিহ্নিত করেছি। এর মধ্যে বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা কমানো হয়েছে। বাকিগুলোতে কাজ চলছে। এ জন্য নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা তিন ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। প্রথম স্বল্পমেয়াদি, এই পরিকল্পনার মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণ করে জলাবদ্ধতা নিরসনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে সফলতাও দেখা যাচ্ছে। আর মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে আশা করি জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসী মুক্তি পাবেন।’